এবারের অমর একুশে বইমেলার ১৯তম দিনটিও কেটে গেল অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে। মঙ্গলবারের মতো বুধবারও মেলায় খুব একটা ভিড় দেখা যায়নি। তবে সন্ধ্যার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের মেলাপ্রাঙ্গণে কয়েকটি স্টলে মোটামুটি ভিড় দেখা গেলেও সেই তুলনায় বিক্রি হয়নি। বিক্রেতারা বলছেন, দর্শনার্থী বাড়ার পাশাপাশি তৃতীয় সপ্তাহে সার্বিকভাবে বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। তবে শেষের দিকেই বিক্রি হয়। বিশেষ করে একুশে ফেব্রম্নয়ারি থেকে প্রত্যাশিত বিক্রি শুরু হবে বলে তারা আশা করছেন। এদিকে, বাংলা একাডেমির তথ্য কেন্দ্র থেকে জানা গেছে এদিন নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ৭০টি মেলায়। আর ১৯ দিনে মোট বই প্রকাশ পেয়েছে ১৭৯৩টি।
বুধবার মেলায় এসেছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিসা আয়াত। তিনি বলেন, 'বান্ধবীদের নিয়ে এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো এলাম। আজ একটু ভিড় কম মনে হচ্ছে। ঘুরতে বেগ পেতে হচ্ছে না। জনসমাগম বেশি হলে একটু ঝামেলা হয়ে যায়। তবুও, মেলায় বেশি মানুষ না এলে ঠিক মেলা মনে হয় না।'
এদিন বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'শিশুসাহিত্যের মহীরুহ রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জুলফিকার শাহাদাৎ। আলোচনায় অংশ নেন শাহাবুদ্দীন নাগরী। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলা শিশুসাহিত্যে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই এক মহীরুহ। শিশুদের চিত্তবৃত্তির উন্মেষ ও প্রতিভার বিকাশ সাধনে তার ছিল নিরলস প্রয়াস। তিনি নিজে যেমন শিশুদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন, তেমনি শিশুদের মধ্যেও স্বপ্নের বীজ বুনতেন। তার লক্ষ্য ছিল শিশুদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। তিনি 'কচি-কাঁচার মেলা'র মাধ্যমে সারাদেশে শিশুদের মধ্যে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি নিজে শিশুদের জন্য ছড়া লিখতেন এবং বিখ্যাত লেখকদেরও উৎসাহ দিতেন শিশুদের উপযোগী সাহিত্য রচনার জন্য। দাদাভাই তার লেখার মধ্য দিয়ে শিশু-কিশোরদের মধ্যে নীতিজ্ঞান, দেশপ্রেম ও চারিত্রিক গুণাবলি জাগ্রত করার চেষ্টা করতেন।
আলোচক বলেন, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের কাজের ব্যাপকতা ছিল অনেক। লেখক, ছড়াকার ও সংগঠক ছাড়াও তার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় হলো- তিনি বাংলাদেশের একজন কিংবদন্তিতুল্য সম্পাদক। শিশু-কিশোরদের সংগঠনের আওতায় এনে তাদের মানসিক উৎকর্ষ সাধনে দাদাভাই সারাজীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তিনি ছিলেন লেখক তৈরির কারিগর। তার হাত ধরেই বাংলাদেশের অনেক বিখ্যাত লেখক সাহিত্য জগতে আবির্ভূত হয়েছেন।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, শিশু-কিশোরসহ সব বয়সি মানুষের অতি প্রিয় মানুষ ছিলেন রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই। শিশুদের আদর্শবান করে গড়ে তোলার জন্য তিনি যে ভূমিকা রেখেছেন তা অবিস্মরণীয়। তার কথা, কাজ ও আদর্শ আমাদের মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকবে।
বুধবার লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- মাহমুদউলস্নাহ, কাজল রশীদ শাহীন এবং তুহিন খান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি মজিদ মাহমুদ, কবি কামরুজ্জামান এবং কবি শফিকুল ইসলাম।
এদিন সৈয়দা শামছি আরা সায়েকার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন
'নবরস' এবং জহির আলীমের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'আবদুল আলীম ফাউন্ডেশন'-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সিনথিয়া, জেরিন তাবাসসুম হক, কোহিনুর আক্তার গোলাপী, মো. রবিউল হক, অর্পণা মজুমদার, নাদিয়া আরেফিন শাওন, সালাম শামীম, রহিমা খাতুন, পূরবী দেবী এবং রীতা ভাঁদুরী। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন তুলসী সাহা (তবলা), মো. শফিউজ্জামান (কী-বোর্ড), মো. আতিকুল ইসলাম (বাঁশি) এবং দীপঙ্কর রায় (অক্টোপ্যাড)।
আজ বৃহস্পতিবার বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'জন্মশতবর্ষ : রশীদ করীম' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। একে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন হামীম কামরুল হক। আলোচনায় অংশ নেবেন অনিরুদ্ধ কাহালি এবং সাখাওয়াত টিপু। সভাপতিত্ব করবেন সুব্রত বড়ুয়া।