বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশবাসী স্থানীয় সরকারের নির্বাচন মেনে নেবে না। বিএনপিও তা কখনো হতে দেবে না। বিএনপি গত ১৬ বছর সকল প্রকার হত্যা, খুন, গুম ও হুমকি ধামকি উপেক্ষা করে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলো; এখনো তেমনিই আছে। যতদিন দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত না হচ্ছে, দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে ততদিন বিএনপি রাজপথেই থাকবে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যশোর টাউন হল ময়দানে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, 'আপনাকে বিএনপি শ্রদ্ধা করে। দেশবাসী আপনাকে ভালোবাসে। আপনি আমাদের গর্ব। কিন্তু সেই সম্মানটুকু রক্ষার দায়িত্ব আপনারই। আপনি যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দিয়ে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তাহলে
দেশবাসী তা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। আপনাদের যদি ক্ষমতার লোভ পেয়ে বসে তাহলে রাজনৈতিক দল গঠন করে জনতার কাতারে নেমে এসে নির্বাচনে অংশ নিন। বিএনপি আপনাদের স্বাগত জানাবে। কারণ বিএনপি বহু দলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে।'
তিনি আরও বলেন, '১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব নিজের দল আওয়ামী লীগসহ দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসন বাকশাল কায়েম করেছিল। '৭৫ পরবর্তী প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন ঘটলে সিপাহী জনতার আন্দোলনে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে দেশে একদলীয় শাসনের অবসান করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আপনারাও ক্ষমতার চেয়ার ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। জনগণের রায় যদি আপনাদের পক্ষে যায় তাহলে আপনারাই দেশ পরিচালনা করবেন। তবুও আমরা বলবো জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করুন। কারণ এই অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে গত ১৬ বছরে বিএনপির ৭ শতাধিক নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। শত শত নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। ৩৬ জুলাই বিপ্লবে শত শত ছাত্র জনতার প্রাণের বিনিময়ে এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই এই সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা অনেক বেশী। আপনাদের ব্যর্থ হলে চলবে না। জনগণের প্রত্যাশা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা আপনাদেরই করতে হবে।'
তিনি উলেস্নখ করেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্র সংস্কারে ভিশন'৩২ ঘোষণা করেছিলেন। আমাদের নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফার রূপরেখা ঘোষণা করেছেন। এসবই চলমান বিষয়। আর এসব সংস্কার তখনই কার্যকর হবে যখন দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই দ্রম্নত নির্বাচন দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, দেশের মানুষ আজ ভালো নেই। পতিত স্বৈরাচার দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল স্তরে এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা জেঁকে বসে আছে। দেশকে দ্রম্নত ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে হলে গণতান্ত্রিক সরকারের কোনো বিকল্প নেই।
যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অমলেন্দু দাস অপু, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, টিএস আইয়ুব, জেলা বিএনপি নেতা অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, দেলোয়ার হোসেন খোকন, যশোর চেম্বারের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলাম মারুফ, বিএনপি নেতা আবুল হোসেন আজাদ, ফিরোজা বুলবুল কলি, সাবিরা নাজমুল মুন্নি, অ্যাড. শহীদ ইকবাল, ফারাজী মতিয়ার রহমান, এম এ সালাম, তানিয়া রহমান, সেলিম রেজা আওলিয়ার, নগর বিএনপির সভাপতি চৌধুরী রফিকুল ইসলাম মুলস্নুক, সদর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জারুল হক খোকন, যুবদলের আহ্বায়ক এম তমাল আহমেদ, সদস্য সচিব আনসারুল হক রানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তফা আমির ফয়সাল প্রমুখ।