গত বছর জুলাই গণ-আন্দোলনের পর এবারই এক ভিন্ন আবহে অনুষ্ঠিত হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। ভাষার মাসের অর্ধেকের বেশি সময় পেরিয়ে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী সমাগমের পাশাপাশি বেড়েছে বিক্রিও। তবে পাঠক-ক্রেতার বেশি ঝোঁক লক্ষ্য করা গেছে জুলাই আন্দোলনের আবহ ফুটিয়ে তোলা স্টলগুলোতে। এবারের বইমেলার প্রবেশমুখ থেকে শুরু করে সর্বত্রই রয়েছে জুলাই আন্দোলনের আবহ। মেলাকে আরও আকর্ষণীয় করতে উদ্যোনের অংশের প্রবেশপথেই স্থাপন করা হয়েছে 'জুলাই চত্বর'।
শুধু সাজসজ্জায় নয়, রঙয়ের মাধ্যমেও জুলাই অভু্যত্থানকে তুলে ধরা হয়েছে। গ্রাফিতি আঁকতে ব্যবহার করা হয়েছে লাল, কালো ও সাদা রঙয়ের ব্যবহার। লাল হচ্ছে বিপস্নবের প্রতীক, কালো শোক এবং সাদা শান্তির প্রতীক। স্টলগুলোতে ঠাঁই পেয়েছে জুলাই অভু্যত্থান সম্পর্কিত বই।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশাপাশি বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আন্দোলনের আবহ। এখানে ঘুরতে আসা পাঠকদের আকৃষ্ট করেছে 'বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলন' নামের স্টলটি। জুলাই গণঅভু্যত্থান নিয়ে লেখা অধিকাংশ বই এই স্টলটিতে পাওয়া যাচ্ছে। এরমধ্যে 'ছাব্বিশের গণঅভু্যত্থান', 'রক্তাক্ত জুলাই', 'জুলাইয়ের গল্প' শিরোনামে বইগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, মেলার ১৮তম দিনে নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ৭৯টি। এদিন বইমেলার মূলমঞ্চে 'বেলাশেষের শহীদ কাদরী' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তারানা নূপুর। আলোচনায় অংশ নেন শামস আল মমীন এবং আহমাদ মাযহার। সভাপতিত্ব করেন হাসান হাফিজ।
প্রাবন্ধিক বলেন, 'বাংলা কবিতায় শহীদ কাদরী সমকালতাড়িত, সংবেদনশাসিত, স্বল্পপ্রজ এবং সত্যসন্ধিৎসু একজন কবি। জীবন ও শিল্পে তিনি অবৈষয়িক, আপাদমস্তক নাগরিক এবং শেষপর্বে বিশ্বনাগরিক। পূর্বাপর সমকাল-সচেতনতা ছিল তার মর্মগত। উন্মেষ-পর্বে কোনো দর্শন, মতবাদ কিংবা নির্দিষ্ট কাব্যাদর্শে তিনি
বিশ্বাসী ছিলেন না, তবে শেষপর্বে তিনি মতাদর্শী না হলেও সাম্যবাদের প্রতি গভীরভাবে আস্থাবান ছিলেন। সমকাল ও চলমান বাস্তবতার মধ্যে নিজের অস্তিত্ব ও কথামালাই তার কবিতার বিষয়। বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিলেও ফেলে আসা সময়ের জন্য দীর্ঘশ্বাসগুলো কবি লুকাতে পারেননি। তিনি স্বেচ্ছায় তার শতকের সীমাকে বরণ করেছেন জীবনাদর্শে ও কবিতায়।'
আলোচকরা বলেন, 'প্রবাসে অবস্থানকালে স্বদেশের চিন্তা কবি শহীদ কাদরীকে তাড়িত করেছে। স্বদেশ তার মানসজগতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে ছিল। তিনি ছিলেন পরিশীলনবাদী এবং ব্যক্তিমানুষ হিসেবে মননশীল। শব্দের ইশারা ও প্রতীকের মধ্য দিয়ে তাঁর কাব্য প্রতিভার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। গদ্যরচনা ও অনুবাদকর্মেও শহীদ কাদরীর অনুপম দক্ষতা ছিল, তথাপি কবি হিসেবেই তিনি নিজেকে পরিচিত করতে চেয়েছেন।'
সভাপতির বক্তব্যে হাসান হাফিজ বলেন, 'বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল ও প্রতিভাবান কবি শহীদ কাদরী স্বতন্ত্র কাব্যভাষা নির্মাণের ক্ষেত্রে একজন পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। তার কবিতার বিষয় ও আঙ্গিক উভয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা কাব্যজগতে তাঁর কবিতা নিঃসন্দেহে চিরস্থায়ী আসনে অধিষ্ঠিত থাকবে।'
মঙ্গলবার লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- কবি হাসান হাফিজ এবং গবেষক খান মাহবুব। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি মো. ফজলুল হক এবং কবি আশিকুল কাদির।
আজ বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'জন্মশতবর্ষ : রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জুলফিকার শাহাদাৎ। আলোচনায় অংশ নেবেন শাহাবুদ্দীন নাগরী। সভাপতিত্ব করবেন সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ।