বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

এবার প্রবাসীদের জন্য বিদেশে যাবে ইলিশ

রোজায় 'কম দামে' দুধ-ডিম মাংস বিক্রি করবে সরকার
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
এবার প্রবাসীদের জন্য বিদেশে যাবে ইলিশ
এবার প্রবাসীদের জন্য বিদেশে যাবে ইলিশ

প্রাথমিকভাবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য ১১ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এ তথ্য জানান। আসন্ন রমজানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গৃহীত কার্যক্রম এবং বিগত ছয় মাসে মন্ত্রণালয়ের কাজের অগ্রগতি বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।

মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যারা বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন এবং দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, এমনকি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার পাশে সোচ্চার ছিলেন, তাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সারাবছর পাঠানো না গেলেও অধিক ইলিশ প্রাপ্তির সময় আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীদের জন্য ইলিশ পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক অবস্থায় সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১১ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে।

ফরিদা আখতার বলেন, এ বছর আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যা কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর অন্য দেশগুলোতেও ইলিশ পাঠানোর বিষয়ে বিবেচনা করা যেতে পারে। এসময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. তোফাজ্জেল হোসেন, অতিরিক্ত সচিব মো. ইমাম উদ্দীন কবীর, অতিরিক্ত সচিব আমেনা বেগম, অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা নওয়ারা জাহান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. আবু সুফিয়ান, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. আবদুর রউফসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন

কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

রোজায় 'কম দামে' দুধ-ডিম মাংস বিক্রি করবে সরকার

এদিকে, রমজান মাসের প্রথম দিন থেকে রাজধানীর ২৫টি পয়েন্টসহ সারাদেশে 'সুলভ মূল্যে' গরু, খাসি, মুরগির মাংস এবং ডিম ও দুধ বিক্রি করবে সরকার। আগামী ২৮ ফেব্রম্নয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় দক্ষিণ বারিধারা আবাসিক এলাকা (ডিআইটি প্রজেক্ট), মেরুল বাড্ডার সিরাজ মিয়া মেমোরিয়াল মডেল স্কুল প্রাঙ্গণে রোজাকে সামনে রেখে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেছেন, পয়লা রোজা থেকে শুরু হয়ে এই কার্যক্রম চলবে ২৮ রোজা পর্যন্ত। তিনি বলেন রোজায় পণ্য সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রেখে মানুষকে স্বস্তি দিতে সরকার কাজ করছে।

ফরিদা আখতার বলেন, 'রমজান মাসে মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার নিমিত্তে পহেলা রমজান থেকে ২৮শে রমজান পর্যন্ত ঢাকা শহরে ড্রেসড ব্রয়লার, ডিম, পাস্তুরিত দুধ ও গরুর মাংস এবং সারাদেশে ব্রয়লার, ডিম, পাস্তুরিত দুধ, গরুর মাংস ও খাসির মাংস সুলভ মূল্যে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।'

তিনি বলেন, রোজায় ড্রেসড ব্রয়লার মাংস কেজি প্রতি ২৫০ টাকায়, পাস্তুরিত দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা, প্রতি ডজন ডিম ১১৪ টাকা, গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হবে।

প্রতিদিন অন্তত ৬০ হাজার পিস ডিম, ৬ হাজার লিটার পাস্তুরিত দুধ, ২ হাজার কেজি ড্রেসড ব্রয়লার এবং ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার কেজি গরুর মাংস বিক্রি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ফরিদা আখতার।

উপদেষ্টা বলেন, পণ্য বিক্রয়ে ঢাকা শহরের ২৫টি স্থানে সুলভ মূল্যে প্রাণিজাত পণ্য বিক্রয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে জুলাই বিপস্নবের সময় যেসব স্থানে সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ বেশি ছিল, সে সকল স্থানকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে এবং বস্তি এলাকায় বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।

ঢাকার যেসব স্থানে মিলবে: সচিবালয়ের পাশে (আব্দুল গণি রোড), খামারবাড়ি (ফার্মগেট), ষাটফুট রোড (মিরপুর), আজিমপুর মাতৃসদন (আজিমপুর), নয়াবাজার (পুরান ঢাকা), বনশ্রী, হাজারীবাগ (সেকশন), আরামবাগ (মতিঝিল), কড়াইল বস্তি (বনানী), কামরাঙ্গীর চর, খিলগাঁও (রেল ক্রসিংয়ের দক্ষিণে), নাখাল পাড়া (লুকাস মোড়), সেগুন বাগিচা (কাঁচা বাজার), বসিলা (মোহাম্মদপুর), উত্তরা (হাউজ বিল্ডিং), রামপুরা (বাজার), মোহাম্মদপুর (বাবর রোড), কালশী (মিরপুর), যাত্রাবাড়ী (মানিক নগর গলির মুখে), শাহাজাদপুর (বাড্ডা), মিরপুর ১০, কল্যাণপুর (ঝিলপাড়), তেজগাঁও, পুরান ঢাকা (বঙ্গবাজার) এবং কাকরাইল।

কার্যক্রম সারাদেশেও: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আয়োজনে রাজধানী ছাড়াও দেশব্যাপী জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সমন্বয়ে রোজার মাসে বিপণন কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, 'জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে প্রান্তিক খামারিগণকে সম্পৃক্ত করে বিপণন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। বিভাগীয় বা জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে প্রান্তিক খামারিদের সমন্বয়ে ড্রেসড ব্রয়লার, দুধ, ডিম, গরুর মাংস ও খাসির মাংস সুলভ মূল্যে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।'

জেলা প্রশাসনের ঠিক করে দেওয়া নির্ধারিত স্থানে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, প্রতিটি উপজেলাতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ২০২৪ সালের ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত ৮ বিভাগের ৬১টি জেলার ৩৬৪ উপজেলায় মোট ৩৭৭টি পয়েন্টে সুলভ মূল্যে ডিম বিক্রি কার্যক্রম চলমান আছে।

তিনি আরও বলেন, '১৫ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত দেশে প্রায় ২২ লাখ ৩৩ হাজার ৮৭টি ডিম বিক্রি হয়েছে। রমজানেও এসব পয়েন্টে সুলভ মূল্যে ডিম বিক্রয় কার্যক্রম চলমান থাকবে।'

যেহেতু রমজান মাসে বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল থাকে, তাই আলাদাভাবে কোন কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন এই উপদেষ্টা। তিনি বলেন, 'তবে বিএফডিসি'র বিক্রয় কেন্দ্রে সামুদ্রিক মাছ, কাপ্তাই লেক থেকে আহরিত রেডি টু কুক ফিস পাওয়া যাবে। ইলিশের মৌসুম না হওয়ায় এখন ইলিশ মাছ দেওয়া যাচ্ছে না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে