ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) সড়ক উন্নয়ন ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্কসহ নাগরিক সেবা উন্নতকরণ প্রকল্পের বিভিন্ন সড়ক ও ড্রেনের নির্মাণ কাজের অনিয়মের অভিযোগে সিটি করপোরেশনে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হওয়া অভিযান চলে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। অভিযানের নেতৃত্ব দেন দুদকের সহকারী পরিচালক রাজু মো. সারওয়ার। এসময় তাদের সঙ্গে ছিলেন সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোফাখখারুল ইসলাম। প্রাথমিকভাবে রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণে অনিয়মের প্রমাণ পান দুদক কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, বিষয়টি লিখিত আকারে তারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।
এদিন সকালে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীর রফিকুল ইসলাম মিঞার কাছ থেকে তিনটি প্যাকেজের কাজের বিভিন্ন নথি সংগ্রহ করার পর সেগুলো নিয়ে সরেজমিনে তদন্ত শুরু করেন দুদক কর্মকর্তারা। তারা আমলাপাড়া এলাকায় নির্মিত সড়ক ও ড্রেনের নির্মাণকাজ যাচাই-বাছাই করেন। পরে নগরীর বাঘমারা ও ব্রাহ্মপলস্নী এলাকার আরও দুই প্যাকেজের উন্নয়ন কাজ তদন্ত শেষে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
দুদকের
সহকারী পরিচালক রাজু মো. সারওয়ার হোসেন জানান, ২০২৪ সালের ২১ মার্চ আলী আহাম্মদ নামের একজন বাসিন্দা দুদকের ময়মনসিংহ কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়, উন্নয়নের প্রকল্পের কাজ যতটুকু হয়েছে, তার চেয়ে বেশি দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা হয়েছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের আমলাপাড়া, ব্রাহ্মপলস্নী ও বাঘমারা ড্রেন ও সড়ক নির্মাণ এই তিনটি প্রকল্পের দুই কোটি ৭৮ লক্ষ টাকার কাজের অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রাথমিকভাবে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
দুদকের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ হিসেবে থাকা ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, ফিতা টেনে রাস্তা পরিমাপ করে কমবেশি পাওয়া গেছে। সকলের সম্মিলিত স্বাক্ষরে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। মাপের সময় সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাও ছিলেন।
সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) আজহারুল হক বলেন, যে অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক অভিযান চালিয়ে সেখানে কোন প্রকার দুর্নীতি হয়নি। ক্ষোভের বশত কেউ অভিযোগ দায়েরে করেছে; এতে সিটি করপোরেশনের সম্মানহানি ছাড়া কিছু নয়।
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মিঞা বলেন, 'দুদক অভিযান করবে ভালো কথা; কিন্তু অবগত না করে হুটহাট করে আসা ঠিক হয়নি। আমাদের কোনো কাজে তারা কখনও অনিয়ম খুঁজে পাবে না। স্বচ্ছতার মধ্য থেকে কাজ করার চেষ্টা করি।'
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর উন্নয়ন প্রকল্পে ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। অথচ দীর্ঘদিনেও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি নগরবাসীর। এনিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।