সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের অবরোধে যানজট আর ভোগান্তি শুরুর পর পিছু হটেছে বিআরটিএ। মিটারের ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় করলে মামলা করার যে নির্দেশনা পুলিশকে দেওয়া হয়েছিল, সেই চিঠি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ট্রাফিক মো. সরওয়ার বলেন, 'রোববার সকাল থেকে অটোরিকশা চালকরা ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ করলে বিষয়টি নিয়ে তারা বিআরটিএ'র সঙ্গে কথা বলেন। বিআরটিএ জেল জরিমানার বিষয়ে যে চিঠিটি দিয়েছিল, সেটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে।'
গত ১০ ফেব্রম্নয়ারি বিআরটিএ পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) শীতাংশু শেখর বিশ্বাসের সই করা একটি চিঠি ঢাকার পুলিশ কমিশনারের দপ্তরে পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, গ্যাস বা পেট্রোলচালিত ফোর স্ট্রোক থ্রি-হুইলার অটোরিকশার জন্য সরকার নির্ধারিত মিটারের ভাড়ার হারের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে মামলা করার 'নির্দেশক্রমে অনুরোধ' করা হলো।
২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ৩৫(৩) ধারা মনে করিয়ে দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, কোনো কন্ট্রাক্ট ক্যারিজের মালিক বা চালক রুট পারমিট এলাকার মধ্যে যে কোনো গন্তব্যে যেতে বাধ্য থাকবেন। মিটারে প্রদর্শিত ভাড়ার অতিরিক্ত অর্থ দাবি বা আদায় করতে পারবেন না। এ নিয়ম ভাঙলে আইনের ৮১ ধারা অনুযায়ী অনধিক ছয় মাসের কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক এক পয়েন্ট কাটার বিধান রয়েছে।
বিআরটিএ পুলিশকে মামলা করার নির্দেশ দেওয়ার পর আন্দোলনে নামেন ক্ষুব্ধ অটোরিকশা চালকরা। রোববার সকাল থেকে শুরু হয় তাদের ধর্মঘট। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ঢাকার শনির আখড়া, ধোলাইপাড়, গোলাপবাগ, ডেমরা, বাসাবো,
রামপুরা, কলেজগেট, আগারগাঁও, মিরপুর, মাজার রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় অটোরিকশা চালকরা সড়ক অবরোধ করেন। তাদের অবরোধের কারণে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ দুই প্রবেশ পথ যাত্রাবাড়ী ও গাবতলী দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে এমন অবরোধের কারণে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় বিভিন্ন সড়কে। তাতে ভোগান্তিতে পড়েন চলতি পথের যাত্রীরা।
বাসাবো এলাকায় রুহুল আমিন নামের একজন চালক বলেন, 'এখন যে অবস্থা, তাতে মিটারে চালাইলে আমাদের পোষায় না। এই কারণে আমরা মিটারে চালাব না। বিআরটিএ'র সিদ্ধান্ত আমরা মানি না।'
বাংলাদেশ অটোরিকশা, হালকা যান পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বলেন, 'চালকরা গাড়ি বন্ধ রেখে বিআরটিএ-তে স্মারকলিপি দিতে আসবে। আসার সময় হয়ত রাস্তায় কোথাও তারা অবস্থান করেছে। আমরা বেলা ১১টায় বিআরটিএ'র সিদ্ধান্ত বাতিল করার জন্য স্মারকলিপি দেব।'
তবে অটোরিকশা চালকরা স্মারকলিপি নিয়ে যাওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত বদলায় বিআরটিএ। শীতাংশু শেখর বিশ্বাসের (বিআরটিএ পরিচালক) সই করা নতুন চিঠিতে পুলিশকে জানানো হয়, মামলা করার নির্দেশনা দিয়ে ১০ ফেব্রম্নয়ারি যে চিঠি দেওয়া হয়েছি, সেটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, 'আইন তো আইনের জায়গায় আছে, সেটা তো আমরা প্রত্যাহার করতে পারি না। আমরা চিঠিটা প্রত্যাহার করে নিয়েছি- যেটায় ওই আইনের বিষয়টা মনে করিয়ে দিয়ে মামলা করার কথা বলা হয়েছিল।'
পরে ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক বার্তায় বলেন, 'ফোর স্ট্রোক থ্রি-হুইলার যান সম্পর্কিত বিআরটিএ'র ইসু্য করা সাম্প্রতিক নির্দেশনাটি আজ বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করা হল এবং অবরোধ প্রত্যাহার করে যান চলাচলে কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হল।'