ন্যাপকিনকে 'গোপন পণ্য' আখ্যা দিয়ে বিক্রি বন্ধের দাবি ওঠায় প্রাণ-আরএফএল স্টল থেকে সরিয়ে নিয়েছে পণ্যটি
পাঠক-দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়ে জমে উঠেছে প্রাণের বইমেলা। রোববার অমর একুশে বইমেলার ১৬তম দিনে মেলা শুরু হয় বেলা ৩টায়, চলে রাত ৯ পর্যন্ত। এদিন মেলায় প্রকাশিত হয়ছে টি বই। এদিকে জুলাই আন্দোলন পরবর্তী ভিন্ন প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত এবারের বইমেলা নানা কারণেই আলোচনার শীর্ষে। 'সব্যসাচী' স্টলে তসলিমা নাসরিনের বই রাখা নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কয়েকদিন পর এবার নারীদের প্রয়োজন ও সচেতনতা বৃদ্ধির কথা প্রাণ-আরএফএল গ্রম্নপের স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্য ব্র্যান্ড 'স্টে-সেফ' স্যানিটারি ন্যাপকিন একটি প্রদর্শন করা হলেও প্রতিবাদের মুখে রোববার প্রতিষ্ঠানটি মেলা থেকে তাদের পণ্যটি তুলে নিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১১ ফেব্রম্নয়ারির পর কয়েক দফায় ন্যাপকিনকে 'গোপন পণ্য' বলে আখ্যা দিয়ে এর প্রকাশ্য প্রদর্শনী বা বিক্রি বন্ধের দাবি ওঠে। পরপর কয়েকদিন অনেক মানুষ দলগতভাবে এসে এই দাবি জানিয়ে যায়। বাংলা একাডেমি, পুলিশ, আনসারসহ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ভলান্টিয়ারদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি ঠান্ডা করা হয়। গত ১৩ ফেব্রম্নয়ারি স্টল দুটি খুলে দিলে কিছু গ্রম্নপ সরাসরি বাংলা একাডেমিতে অভিযোগ করে। এসব কারণে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রাণ-আরএফএলকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। প্রাণ-আরএফএল গ্রম্নপের ব্যবসায়িক স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে স্টল থেকে পণ্য সরিয়ে নিয়েছে।
প্রাণ-আরএফএল প্রতিষ্ঠানটির অ্যাসিসট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার তৌহিদুজ্জমান বলেন, 'আমরা চিঠি পেয়েছি। এটাকে কেন্দ্র করে কোনো ইসু্য হোক, তা আমরা চাই না। যেহেতু আপত্তি উঠেছে, সেহেতু আজকের মধ্যে আমরা 'স্টে সেফ' কর্নার সরিয়ে ফেলছি। তবে এই পণ্য আমরা সেখানে বিক্রি করতাম না, ফ্রি স্যাম্পলিং করতাম। অনেক নারী মেলায় আসে, তাদের প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে এটা করা হয়েছিল, এখন আমরা কুইট করছি।'
কিছু মানুষের দাবির ভিত্তিতে ন্যাপকিনের স্টল বন্ধের বিষয়ে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সরকার আমিন বলেন, 'বইমেলায় ডাইপার বা অন্যান্য পণ্য বিক্রি করা যাবে। এটাতো আর বাণিজ্য মেলা না। এটা নিয়ে আমরা স্পন্সরকে বলেছি, আপনারা স্পন্সর করেছেন, ভালো। কিন্তু এসব পণ্য বিক্রি করা যাবে না। বই ছাড়া অন্যান্য পণ্য বিক্রির নীতিমালা নেই। চিঠির ব্যাপারে কিছু জানি না।'
রোববার বইমেলার একাধিক স্টল ঘুরে জানা যায়, বিক্রি বেড়েছে। বিক্রেতাদের মতে, বইমেলায় দিন যত পার হচ্ছে ক্রেতাও বাড়ছে। প্রথম দিকের বইমেলায় ক্রেতার থেকে দর্শনার্থীদের সংখ্যাই বেশি থাকে। যার ফলে ভিড় বেশি হয় কিন্তু বই কম বিক্রি হয়। তবে শেষের দিকে মূল ক্রেতারা আসেন এজন্য শেষ দিকে বিক্রিও ভালো হয়।
অবসর প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী বলেন, 'বই বিক্রি বেড়েছে। কালও আশানুরূপ বিক্রিই হয়েছে।' অনুভব প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী অর্পণ বলেন, 'এখন পাঠক বেশি, বিক্রিও বেশি। আশানুরূপ বিক্রি না হলেও ধীরে ধীরে বিক্রি বাড়ছে।'
এদিকে মেলার ১৬তম দিনে ১০৪টি নতুন বই প্রকাশ হয়েছে জানিয়ে বাংলা একাডেমি বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এদিন বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'জহির রায়হানের সাহিত্যকর্মে ঐতিহাসিক ঘটনার বিচার' শীর্ষক আলোচনা
অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহুল আহমদ। আলোচনায় অংশ নেন মশিউল আলম এবং আহমাদ মোস্তফা কামাল। সভাপতিত্ব করেন মাহবুব হাসান।
প্রাবন্ধিক বলেন, জহির রায়হান একাত্তরের বৈপস্নবিক মুহূর্তে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের পুরো ঘটনাকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। সেই উত্তাল সময়ে তিনি বহুমুখী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। একদিকে তিনি ঘটনার জন্ম দিচ্ছিলেন, অন্যদিকে ঘটনার বিবরণ বা বয়ান তৈরির কাজে লিপ্ত ছিলেন। তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের বাসিন্দাদের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যে জেনোসাইড শুরু করেছিল, তার প্রতিবাদেই তিনি নির্মাণ করেছিলেন 'স্টপ জেনোসাইড' নামে প্রামাণ্যচিত্র। জহির রায়হান একাত্তরের ঘটনাপ্রবাহকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে স্থাপন করেছিলেন। তিনি বিবেচনা করেছিলেন, তামাম দুনিয়াতে যে ধরনের আন্দোলন চলছে একাত্তর তারই অংশ।
আলোচকদ্বয় বলেন, বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্র জগতে তিনি তার অমিত প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তার সৃষ্টিকর্মে রাজনৈতিক আন্দোলন ও শোষণের কথা যেমন এসেছে, তেমনি এসেছে বাংলার মধ্যবিত্ত জীবন ও দৈনন্দিন বাস্তবতার কথা। তিনি শোষণ-বঞ্চনাহীন একটি স্বদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছেন এবং সে লক্ষ্যেই আজীবন কাজ করে গেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে মাহবুব হাসান বলেন, বিপুল সম্ভাবনা ও বিপুল প্রতিভার অধিকারী ছিলেন জহির রায়হান। তাঁর সকল কাজের মধ্য দিয়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষাই প্রতিফলিত হয়েছে। তার সৃজনকর্ম গভীরভাবে বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা নানাভাবে লাভবান হতে পারি।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- কবি ও গবেষক সুমন সাজ্জাদ এবং শিশুসাহিত্যিক শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া।
আজ বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'জীবন ও কর্ম : আল মাহমুদ' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মজিদ মাহমুদ। আলোচনায় অংশ নেবেন মুসা আল হাফিজ এবং কাজী নাসির মামুন। সভাপতিত্ব করবেন মাহবুব সাদিক।