মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এহতেশাম উল হক ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) মহাপরিচালক জুলফিকার হায়দারকে প্রতাহারে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন বিএনপিপন্থি সংগঠন শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের নেতাকর্মীরা।
বুধবার
সকালে রাজধানীর আব্দুল গণি রোডে শিক্ষা ভবন 'ঘেরাও' করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের নেতাকর্মীরা।
ওই সময় মহাপরিচালকদের পদত্যাগ করতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জোটের চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম ভুঁইয়া।
তিনি বলেন, 'এই দুই মহাপরিচালককে প্রত্যাহার করতে হবে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে না হলে আমরা স্কুল বন্ধ করে দেব, কলেজ বন্ধ করে দেব, মাদ্রাসা বন্ধ করে দেব। পরবর্তী পরিণতির জন্য আপনারা দায়ী থাকবেন।'
এর আগে এহতেশাম উল হক এবং জুলফিকার হায়দারকে প্রত্যাহারে সোমবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল সংগঠনটির পক্ষ থেকে। তবে তারা স্বপদে বহাল থাকায় সকালে ফের শিক্ষা ভবন ঘেরাওয়ে আসেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম ভুঁইয়া, মহাসচিব জাকির হোসেনসহ শতাধিক শিক্ষক এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। সকাল থেকে শিক্ষা ভবন প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তারা।
সেলিম ভুঁইয়া বলেন, 'ডিজি পদে পদায়ন পাওয়া অধ্যাপক ড. এহতেশাম উল হক বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুলস্নাহর ঘনিষ্ঠ অনুচর। তার হাত ধরেই বরিশাল বিএম কলেজের রসায়ন বিভাগ থেকে বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ পদে পদায়ন পেয়েছিলেন। আওয়ামী বলয়ের প্রভাবশালী এ শিক্ষককে পাঁচ অগাস্টের পরে অধ্যক্ষ পদ থেকে প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিক আন্দোলন, আল্টিমেটাম এবং শিক্ষা সচিবের লিখিত অভিযোগ দেন। এরপরই তাকে অধ্যক্ষ পদ থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। আওয়ামী ঘনিষ্ঠ অনুচর ও বিতর্কিত শিক্ষা ক্যাডারের এই কর্মকর্তা কীভাবে মাউশির ডিজির পদে আসীন হয় তা শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটসহ শিক্ষার্থী এবং সুশীল সমাজের কারো বোধগম্য নয়।'
শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য জোটের এই নেতা অভিযোগ করে বলেছেন, সরকার পতনের আগের দিন গত ৪ অগাস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল যখন শিক্ষা ভবনের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল তখন সেখানে অধিদপ্তরের পরিচালক এ কিউ এম শফিউল আজমের নেতৃত্বে ও পরিকল্পনায় মিছিলে 'হামলা করা হয়'।
নায়েমের মহাপরিচালক পদ থেকে জুলফিকার হায়দারের পদত্যাগও দাবি করে সেলিম বলেন, 'যে ব্যাক্তি দেব দেবীর মুর্তি দিয়ে বই প্রকাশনা করেছে, মসজিদের জায়গায় মন্দিরের ছবি দিয়ে যে প্রকাশনা করেছে তাকে নায়েমের ডিজি করা হয়েছে। আপনারা কী চান শিক্ষা প্রশাসনে ফ্যাসিস্টরা থাকুক।'
দুই পরিচালককে প্রত্যাহারের দাবি ছাড়াও শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ উৎসবভাতা, তাদের চাকরি জাতীয়করণ করণেরও দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের নেতাকর্মীরা।
নেতাকর্মীরা বিএনপির পরিচয়ে শিক্ষা ভবনে আসেননি মন্তব্য করে সেলিম বলেন, 'আমি এখানে এসেছি শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য জোটের পরিচয়ে। আমরা কোন আওয়ামী লীগের দোসরকে অধিদপ্তরে চাই না।'
অভিযোগ করে সেলিম ভূঁইয়া বলেন, 'শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে আওয়ামীপন্থিদের পদায়নের জন্য দিচ্ছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের কলেজ শাখার যুগ্মসচিব মো. নুরুজ্জামান। তিনি ব্রিফকেস পেয়ে এ পদায়ন দিয়েছেন।'
আন্দোলনরতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনারা এখন নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যান। বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাদের প্রত্যাহার করা না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেব।'
গত ৩০ জানুয়ারি জারি করা প্রজ্ঞাপনে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) পদে পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যাপক এহতেশাম উল হক ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) মহাপরিচালক পদে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ জুলফিকার হায়দারকে পদায়ন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৩০ জানুয়ারি তাদের পদায়ন করে জারি করা প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয় ২ ফেব্রম্নয়ারি।