কাশিয়ানী এলজিইডির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশ | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উচ্চ আদালতের আদেশে কখনো এলজিইডি প্রকল্পের প্রকৌশলীদের রাজস্ব খাতে নিয়মিত করা হয়েছে, কখনো বা নামমাত্র পরীক্ষা আয়োজনের মাধ্যমে রাজস্ব খাতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ আছে, এর নেপথ্যে রয়েছে ২০১৩ সালে নিয়োগ পাওয়া পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের মদতপুষ্ট আবেদ আলী কমিশন নিয়োগকৃত প্রকৌশলীরা। আর তাদের মদত দিচ্ছে এলজিইডিতে কর্মরত আওয়ামীপন্থি এবং স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রীর এক শ্রেণির দালাল প্রকৌশলীরা। তাদের বিরুদ্ধে নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্পের পিডি নিয়োগের ক্ষেত্রে সাবেক মন্ত্রীর সঙ্গে অর্থ লেনদেনে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এলজিইডিতে সহকারী প্রকৌশলী/উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগের জন্য ২০০৬ সালে পিএসসির সার্কুলারের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের ২৩ মার্চ। পিএসসির ২০১৩ সালের ১৪ ফেব্রম্নয়ারির স্মারক নং-৫৫ মোতাবেক নিয়োগের মনোনয়ন পত্রে দেখা যায় ১৫৪ জন প্রকৌশলী নিয়োগের বিপরীতে আবেদনকারী ছিল ৩৫২ জন। ২০১২ সালের ওই পরীক্ষায় সে সময় পাস করা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তার মধ্যে ১৬২ জন পরীক্ষার্থীকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। উপস্থিত ১২৭ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষে ১২৭ জনকেই উত্তীর্ণ দেখানো হয়। কৃতকার্যদের ৭৮ জনের একটি প্যানেল তৈরি করা হয়। প্রাথমিকভাবে ৭৮ জনের প্যানেল থেকে ৫২ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। পিএসসির মনোনয়নপত্রের শর্তে দেখা যায়, মনোনীত কোনো প্রার্থী চাকরিতে যোগ না দিলে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কমিশনকে অবহিত করলে কমিশন ওই প্যানেল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারে। তবে ভবিষ্যতে শূন্য/সৃষ্ট কোনো পদের জন্য প্যানেল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে না এবং প্যানেলের মেয়াদ প্রথমবার প্রার্থী মনোনয়নের তারিখ থেকে এক বছরের বেশি বলবৎ থাকবে না। অথচ প্রায় সাড়ে তিন বছর পর পিএসসির শর্তের তোয়াক্কা না করে সিন্ডিকেটের যোগসাজশে মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে ২০১৬ সালে আরও ৩১ প্রকৌশলীকে সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রাপ্ত ৩১ জন প্রকৌশলীর নিয়োগের ক্ষেত্রে এখনো পিএসসির কোনো সুপারিশ গ্রহণ করা হয়নি। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৬ সালের বিজ্ঞপ্তির আলোকে ২০১৩ ও ২০১৬ সালে নিয়োগ প্রাপ্ত প্রকৌশলীরা সিনিয়রিটি দাবি করে আসছেন। এসব প্রকৌশলী ২০১৫ সালের জ্যেষ্ঠতা তালিকা অবৈধ বলে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করলে সেই মামলা শুনানি শেষে খারিজ হয়ে যায়। মামলায় হেরে যাওয়ার পর ২০০৬ সালের বিজ্ঞপ্তির আলোকে ২০১৩ সালে নিয়োগ প্রাপ্ত প্রকৌশলীরা এলজিইডির জ্যেষ্ঠতা তালিকা ২০১৫ অনুসরণ করে ২০২২ সালে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি গ্রহণ করেছেন। উলেস্নখ্য, এলজিইডির জ্যেষ্ঠতা তালিকা ২০১৫ অনুসরণ করে ইতোপূর্বে প্রধান প্রকৌশলীসহ বহু অফিসারের পদোন্নতি দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে 'এলজিইডি জ্যেষ্ঠতা তালিকা-২০২৪' খসড়া স্থানীয় সরকার বিভাগ ওয়েবসাইটসহ অফিসিয়ালভাবে প্রকাশ করলে বিগত 'ফ্যাসিস্ট' সরকারের আমলে কায়েমকারী স্বার্থবাদী প্রকৌশলীদের প্রত্যক্ষ মদতে ২০১৩ সালের নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা ভিন্ন ভিন্ন গ্রম্নপে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে বিভিন্ন মামলার মাধ্যমে অনিয়মের রাজত্ব কায়েম করেছে। জানা যায়, বর্তমানে প্রায় ১৫০ নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ শূন্য রয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর.) পদে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের চলতি দায়িত্ব দিতে আইনগত বাধা আছে কিনা জানার জন্য প্রধান প্রকৌশলী অত্র দপ্তরের আইনজীবীদের কাছে লিখিত আকারে জানতে চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিন জন আইনজীবী প্রধান প্রকৌশলীকে লিখিত আকারে জানান যে, নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর.) পদে চলতি দায়িত্ব প্রদানে আইনগত কোনো বাধা নেই। পদোন্নতিবঞ্চিত বেশ কয়েকজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন থেকে পদোন্নতিবঞ্চিত হওয়ায় তাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে এবং দ্রম্নত পদোন্নতি না দিলে জটিলতা সৃষ্টিসহ এলজিইডিতে আরও বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা এলজিইডির প্রধান প্রকোশলী এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।