নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমানকে গডফাদার বলে আখ্যায়িক করে জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের সেই গডফাদার আজকে কোথায়, যিনি আমাদের তৎকালীন আমিরকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বলেছিলেন- নারায়ণগঞ্জে তার প্রবেশ নিষেধ। এমনকি নারায়ণগঞ্জের সড়কে ৭২ ফুট লম্বা ব্যানার টানিয়েছিলেন। এখন কোথায় তার সেই হুঙ্কার?
শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর এলাকার ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, 'ঐ সময়ের ডিসি-এসপিকে তিনি বলেছিলেন আমার নামে অগ্রিম মামলা করে রাখেন। আমি অধ্যাপক গোলাম আযমকে হত্যা করতে চাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের জুলুমের শিকার হয়ে গোলাম আযম সাহেব মারা যান। গডফাদার আজ কোথায়? নারায়ণগঞ্জে নেই। এত অহংকার দাম্ভিকতা ভালো না। সন্ত্রাসকে কখনো প্রশ্রয় দিতে হয় না। তাহলে দুনিয়াতেই তার করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়। আগে মানুষ হও তার মুমিন হও। আজকে সেই গডফাদার (শামীম ওসমান) কোথায়, সে তো নাই। অপকর্ম করার ফলে রাতের আঁধারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে।'
জামায়াত আমির বলেন, 'স্বৈরাচার হাসিনার হুকুমে ছাত্র-জনতাসহ বহু লোককে হত্যা করেছে এবং অনেককে পঙ্গু করে দিয়েছে। এখনো অনেকে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। এখনো রক্তের দাগ শুকায়নি। কিন্তু গত ২ দিন আগে দেশের বাইরে বসে উসকানি দিয়েছে। উসকানি দিয়ে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাইছে। তার পর থেকে দেশের মধ্যে একের পর এক ঘটনা ঘটছে। এখন থেকে দেশে যত অঘটন ঘটবে সব কিছুর জন্য উসকানিদাতারা দায়ী থাকবে।'
তিনি বলেন, 'এই সমাবেশে অনেক কিছু দাবি উঠে এসেছে। আমি বলতে চাই, নারায়ণগঞ্জ হলো একটি পরিপূর্ণ শিল্পনগরী। কিন্তু এখানে ভালো কোনো বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নাই, ভালো হসপিটাল নাই, অথচ তিনটি উপজেলা নিয়ে একটি জেলা সেখানে বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এই শহরে দীর্ঘ বছর ধরে জনগণের দায়িত্ব পালন করেছে তারা কেন তাদের আপার কাছ থেকে কিছু চেয়ে আনতে পারেনি?'
জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে সবার আগে শিক্ষা ব্যবস্থায় হাত দেবে। এদেশের ছাত্র সমাজের জন্য উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে
তুলবে। শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার পর কাউকে আর বেকার থাকতে হবে না। প্রত্যেকের জন্য যথোপযুক্ত কর্মের ব্যবস্থা করা হবে। নারীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। এদেশের কৃষি শিল্প, এগ্রো শিল্পগুলোকে আরও সমৃদ্ধশালী করা হবে।'
আমির বলেন, 'পতিত স্বৈরাচার সরকারের আমলে দেশ থেকে গত সাড়ে ১৫ বছরের ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।'
পাচারের অর্থ ফেরত এনে এদেশের কল্যাণে সুষম ব্যয় করার দাবি জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে তিনি বলেন, 'জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক ধান্দাকে ঘৃণা করে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এমন দেশের স্বপ্ন দেখে যেখানে ঘুষ দুর্নীতি থাকবে না।'
ফ্যাসিস্টরা পালিয়ে যাওয়ার পর এখন তো আর চাঁদাবাজি ও দখলবাজিত্ব হচ্ছে না বলে জনগণের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিলে জনগণ উচ্চস্বরে বলে এখনো সব কিছু হচ্ছে। তখন তিনি বলেন, 'এসব চাঁদাবাজ ও দখলবাজদের কাছ থেকে জনগণকে পরিত্রাণ দিতে হবে। জনগণ চাঁদাবাজ ও দখলবাজদের আর বাংলার মাটিতে দেখতে চায় না।'
তিনি আরো বলেন, 'গত ৫৪ বছর এই জাতিকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছিল। আর সুকৌশলে এই বিভক্তি সৃষ্টি আওয়ামী লীগ করেছিল। তারা বিভক্তির শুরু করেন পাহাড়িদের নিয়ে। তারা ঘোষণা দিয়ে বলেনত্ম আমরা সবাই বাঙ্গালি। কিন্তু এটা নিয়ে পাহাড়িরা প্রতিবাদ করেন। তখন থেকে এই যে বিভক্তি শুরু হয়েছে, তা এখনো চলমান রয়েছে। এখনো সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় নাই। তারা এখন বিভিন্ন গ্রম্নপে বিভক্ত হয়ে নিজেরা সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। এই বিভক্তি যতদিন থাকবে, ততোদিন এই জাতির মধ্যে একতা সৃষ্টি হবে না। যা দেশের মানুষ গত ৫৩ বছর প্রত্যক্ষ করেছেন।'
নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতে ইসলামের আমির ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ আব্দুল জব্বারের সভাপতিত্বে আয়োজিত জনসভায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা দক্ষিণ অঞ্চলের পরিচালক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব সাইফুল আলম খান মিলন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মোঃ সেলিম উদ্দিন,কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় কর্মপরি ষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, নারায়ণগঞ্জ মহানগরী সাবেক আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য মমিনুল হক সরকার।