শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
নতুন বই এসেছে ১৮৪টি

সিসিমপুরের পরিবেশনা ছাড়াই বইমেলায় কাটল শিশুপ্রহর

বইমেলা ঘুরে দেখা গেছে, ফাঁকা পড়ে আছে সিসিমপুরের স্টেজ বানানো সেই জায়গাটি। মেলায় ঢুকেই শিশুরা সেদিকে গেলেও ফিরে আসে হতাশ হয়ে
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
সিসিমপুরের পরিবেশনা ছাড়াই বইমেলায় কাটল শিশুপ্রহর
শুক্রবার ছুটির দিনে মেলায় ছিল দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। স্টলে বই দেখছেন শিশুরা -ফোকাস বাংলা

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে পর এবার এক ভিন্ন আবহে অনুষ্ঠিত হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। শুক্রবার ছিল মেলার প্রথম শিশুপ্রহর। তবে মেলায় ছিল না শিশু চত্বরের অন্যতম আকর্ষণ ও শিশুদের কাছে জনপ্রিয় সিসিমপুরের পরিবেশনা। ফলে অভিভাবকদের হাত ধরে কিংবা কোলে চড়ে মেলায় আসা শিশুরা অখুশি। সিসিমপুর দেখতে না পেয়ে কেউ কেউ কান্নাও জুড়ে দেয়। মেলায় রমনা মন্দিরের কাছে শিশুদের জন্য রয়েছে 'কিডস জোন', তবে সেখানেও শিশুদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। ছুটির দিনের তুলনায় শিশুদের উপস্থিতিও ছিল হাতে গোনা। বাংলা একাডেমি জানিয়েছে শুক্রবার মেলায় নতুন বই এসেছে ১৮৪টি।

কেরানীগঞ্জ থেকে বাবার সঙ্গে একুশে বইমেলায় এসেছে নার্সারি শ্রেণিতে পড়ুয়া মেহরিন সাবা, শিশুচত্বরে এসেই জানতে পারলো এবার নেই 'সিসিমপুর মঞ্চ'।

বইমেলায় আসবে না শিকু, ইকরি, হালুম, টুকটুকিরা। এজন্য বেশ মন খারাপ তার। মন ভালো করতে মেলায় ঘুরে ঘুরে বই কিনেছে ছোট্ট পাঠক সাবা।

সাবার বাবা নাসিম আলম বলেন, 'গতবারও তো মেয়েকে নিয়ে মেলায় এসেছিলাম। সিসিমপুর মঞ্চের আয়োজনে খুব আনন্দ পেয়েছিল। এবার এখানে এসে জানলাম সিসিমপুর থাকবে না। এজন্য আমার মেয়ের মন খারাপ হয়েছে।'

সিমিমপুর না দেখে বাসায় যাবে না আফরোজা নামের এক শিশু। তার বাবা-মা তাকে কিছুতেই বোঝাতে পারছে না যে এবারের বইমেলায় সিসিমপুরের পরিবেশনা নেই। প্রতি বছর বইমেলায় শিশুপ্রহরে সিসিমপুরকে কেন্দ্র করে থাকে আলাদা উত্তেজনা। শিশুপ্রহরে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিশুরা বাবা-মায়ের সঙ্গে সিসিমপুর দেখতে আসে। বই কেনার পাশাপাশি সিসিমপুরই যেন পুরো শিশুপ্রহর মাতিয়ে রাখে। সামনে জায়গা না পেলে বাবার কাঁধে উঠে, মায়ের কোলে বসে সিসিমপুরের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠে শিশুরা।

বইমেলা ঘুরে দেখা গেছে, ফাঁকা পড়ে আছে সিসিমপুরের স্টেজ বানানো সেই জায়গাটি। সেখানে বসেনি কোনো বইয়ের স্টলও। বইমেলায় ঢুকেই শিশুরা প্রথমে সেদিকে গেলেও ফিরে আসতে হচ্ছে হতাশ হয়ে। শুধু বই কিনেই ফিরে যেতে হচ্ছে শিশুদের। অনেকেই আবার আফরোজার মতো কান্নাও করছে সিসিমপুর দেখতে না পেয়ে।

শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত মেলায় ছিল 'শিশুপ্রহর'। অনেক বাবা-মা তাদের শিশু সন্তানকে নিয়ে মেলায় আসেন শিশুপ্রহরে। সন্তানদের পরিচয় করিয়ে দেন বইয়ের দুনিয়ায়, কিনে দেন পছন্দের বই। এবার মেলার শিশুচত্বরটি আরো রঙিন করে সাজানো হয়েছে। বাংলা একাডেমির উল্টোদিকের গেইট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী

উদ্যানে প্রবেশ করলেই হাতের ডান দিকে চোখে পড়বে শিশুচত্বর লেখা গেইট।

ভেতরে যেতে শিশুদের দেখা যায় ছোটাছুটি করতে, তবে এদিন তুলনামূলক ভিড় কম দেখা গেছে। বেশিরভাগ স্টলেই নেই নতুন বই। প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে মেলা জমবে কী না সেই সংশয়ে তারা নতুন বই কম আনছেন।

জুলাই অভু্যথানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মেলা কেমন হবে, তা নিয়ে সংশয়ে থাকায় কোনো কোনো প্রকাশক বিনিয়োগ করতে শঙ্কায় ছিলেন বলে জানা গেছে।

পঙ্খীরাজের প্রকাশক দেওয়াজ আজিজ বলেন, 'এবার মেলা কেমন হবে, তা নিয়ে তো একটু দ্বিধায় ছিলাম। বই প্রকাশ করতে হলে তো বিনিয়োগ লাগে। তবে শেষ দিকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এজন্য সবগুলো বই এখনো আনতে পারিনি। আমরা ৪টি নতুন বই এনেছি। সব মিলিয়ে ১০/১২টা নতুন বই আনার পরিকল্পনা আছে।'

আয়োজন ব্যবস্থাপনার দিক থেকে অনেক বেশি রঙিন হলেও শিশুচত্বরে উপস্থিতি বিগত বছরের চেয়ে কম বলে জানান বিভিন্ন স্টলের বিক্রয়কর্মীরা। বিক্রিও এখনো জমে ওঠে নি।

এদিকে এ বছর সিসিমপুর না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বইমেলার সদস্য সচিব সরকার আমিন। তিনি বলেন, 'সিসিমপুর এবার আবেদনই করেনি। যে কারণে এ বছর সিসিমপুর থাকছে না। তবে শিশুপ্রহরে শিশুরা মেলায় আসবে ঘুরবে বই কিনবে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা থাকার কারণে শনিবার মেলা শুরু হবে বেলা ২টায়। এদিন থাকবে না শিশুপ্রহর।'

এদিকে, ছুটির দিনেও জমে ওঠেনি লিটলম্যাগ কর্নার। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছে ১৩০ স্টল বসানো হয়েছে লিটলম্যাগ সম্পাদকদের জন্য। শুক্রবার বেলা দুইটার দিকে দেখা গেল ১২টি স্টল ছাড়া সবকটি ফাঁকা।

অন্যদিকে, শুক্রবার বিকাল থেকেই মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এ সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যোন প্রাঙ্গণে মেলার প্রবেশপথে অসংখ্য মানুষের ভিড় লক্ষ করা যায়। বইপ্রেমিরা সারিবদ্ধভাবে মেলায় প্রবেশ করেন। এই প্রথম বইমেলায় জনস্রোতের দেখা মিলল। এদিন বিক্রিও বেশি হয়েছে। এদিকে বিক্রে বেশি হওয়ায় বিক্রেতারাও সন্তোষ প্রকাশ করেন।

একুশে বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এই 'চায়না বুক হাউসে' চীন বিষয়ক বিভিন্ন বইয়ের প্রদর্শনী চলছে। স্টলের সামনে চা শিল্প, সিংহ নাচ, ক্যালিগ্রাফি, অপেরা মাস্ক পেইন্টিং এবং পেপারকাটের মতো ঐতিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতির প্রদর্শনীতে দেখেন দর্শনারীরা। শুক্রবার বিকালে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনও এবং সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আসেন স্টল পরিদর্শনে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে