রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলনের সাত ঘণ্টার বেশি সময় পর অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন গণ-অভু্যত্থানে শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যরা। জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের মধ্যস্থতায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করেন। পরে শাহবাগ এলাকায় শুরু হয় যান চলাচল। এদিকে অবরোধ করে আন্দোলন করায় শাহবাগ ও আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। যানজট ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে। এতে সপ্তাহের শেষ দিন চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ যাত্রী, অফিস ফেরত কর্মী, রোগীসহ এই পথে চলাচলকারীদের।
জানা যায়, জুলাই অভু্যত্থানের প্রতিটি হত্যাকান্ডের বিচারের লক্ষ্যে আসামিদের দ্রম্নত গ্রেপ্তার, শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবিতে সকাল সাড়ে ১০টায় শাহবাগে অবস্থান নেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। বেলা সোয়া ১১টার সময় তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ছাড়া তারা অবরোধ চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণাও দেন।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি আন্দোলনকারীদের জানান, প্রধান উপদেষ্টা আগামী রোববার শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসবেন। তবে তার কথায় অবরোধ থেকে সরেননি গণ-অভু্যত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা।
এরপর বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ঘটনাস্থলে আসেন এবং ঘণ্টাখানেক শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে শহীদ পরিবারের সদস্যরা অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে শহীদ পরিবারের কেন্দ্রীয় গ্রম্নপের মুখপাত্র শহীদ ইমাম হাসানের (তায়িম) ভাই রবিউল আউয়াল জানান, তারা জনভোগান্তির জন্য দুঃখিত। তিনি বলেন, 'সারজিস আলম ভাই আসছেন (এসেছেন)। উনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন এবং সরকারে আমাদের পক্ষে যে তিনজন ভাই আছেন, ওনারা আজ আমাদের প্রতিনিধি টিমের সঙ্গে বসবেন। ইভেন (এমনকি), আগামীকাল (শুক্রবার) সারজিস ভাই,
হাসনাত ভাই আমাদের শহীদ পরিবারের প্রতিনিধি পক্ষের সঙ্গে বসবেন। দেন (তারপর), রোববার মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের শহীদ পরিবারের প্রতিনিধিদল দেখা করবে। এই শর্তে আমরা আজ বস্নকেড (অবরোধ) কর্মসূচি প্রত্যাহার করলাম।'
এদিকে সাড়ে ৭ ঘণ্টার বেশি রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখার ফলে শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বারডেম জেনারেল হাসপাতাল থাকায় রোগী ও তার স্বজনেরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর থেকে শাহবাগের বারডেম জেনারেল হাসপাতালে পায়ে সমস্যায় ভোগা একজন রোগীকে নিয়ে আসেন মো. সোহেল রানা। কারওয়ান বাজার পার হওয়ার পর তারা তীব্র যানজটে পড়েন। এক ঘণ্টার মতো সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বসে ছিলেন তারা। এরপর রোগীকে কোলে করে নিয়ে শাহবাগের উদ্দেশে রওনা দেন সোহেল। যখন বারডেম হাসপাতালের সামনে আসেন, তখন তিনি ঘেমে একাকার।
ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বুধবার এসেছিলেন নাসিমা বেগম ও তার মেয়ে মোছা. পপি। সঙ্গে পপির ৮ বছর বয়সী ছেলেসন্তান ও ১৪ মাস বয়সী মেয়েসন্তানও ছিল।
বরিশাল থেকে এসে বুধবার তারা চিকিৎসা করিয়েছেন। পরে রাতে একটি হোটেলে ছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশালের গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছিলেন। লঞ্চে করে তারা যাবেন। সে কারণে ধানমন্ডি থেকে সদরঘাট যাওয়ার জন্য একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নেন। কিন্তু শাহবাগে এসে অটোরিকশা আটকা পড়ে।
নাসিমা বেগম বলেন, 'এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বসে আছি, যেতে পারছিন না।' তিনি জানালেন, তারা দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করেননি। ভেবেছিলেন সদরঘাট গিয়ে খাবেন, সেটাও হচ্ছে না। এদিকে ১৪ মাস বয়সী তার নাতনি গরমে ঘামছে, কাঁদছে।
সিএনজিচালক মো. হাসান মিয়া জানান, অটোরিকশা নিয়ে এখন সামনে এগোতেও পারছেন না, আবার পিছিয়েও যেতে পারছেন না।
ভূলতা, গাউছিয়া, কলাবাগান রুটে চলাচলকারী মেঘলা পরিবহনের একটি বাস বেলা ১১টা থেকে আটকা শাহবাগে। সেই বাসের চালক মো. সাইদুল বেলা ৩টা ২০ মিনিটে বলেন, '৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এক জায়গায় বসে আছি। সব যাত্রী নেমে চলে গেছে। হঠাৎ ভাঙচুরের ভয়ে বাস রেখে দুপুরের খাবার খেতেও যেতে পারিনি।'