দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এবার নতুন করে সেজেছে অমর একুশে বইমেলা। এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য 'জুলাইয়ের গণঅভু্যত্থান এবং তার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের বিনির্মাণ'। প্রতিপাদ্যের মতোই বইমেলার এবারের আসরে গুরুত্ব পেয়েছে জুলাই আন্দোলন। আন্দোলনের স্মৃতিকে চির-ম্স্নান ও আন্দোলনের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে রাখা হয়েছে 'জুলাই চত্বর'। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যোন জুড়ে জুলাই গণঅভু্যত্থানের বিভিন্ন ব্যানার ও পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। পিছিয়ে নেই বই প্রকাশেও। জুলাই অভু্যত্থান নিয়ে এবার শতাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে। এসব বইয়ে পাঠকের আগ্রহও দেখা গেছে। মেলার ষষ্ঠ দিনে নতুন বই এসেছে ৮০টি।
বৃহস্পতিবার বইমেলার ষষ্ঠ দিনও মেলার শুরু থেকে ক্রেতা-দর্শনার্থীর সমাগম ঘটতে থাকে বইমেলায়। তবে বিক্রেতারা বলছেন, বইপ্রেমীরা বই নেড়েচেড়ে দেখলেও কিনছেন কম। এখনো সেইভাবে জমে ওঠেনি বইবিক্রি। 'অনুভব' প্রকাশনীর মালিক কবি তুষার প্রসূন জানান, তার প্রতিষ্ঠান এবারও চিরায়ত বইয়ের পাশাপাশি সমসাময়িক লেখকদের বই প্রকাশ করেছে। কিন্তু বেচাবিক্রি সেই অর্থে নেই বললেই চলে। পাঠক আসছেন, বই নেড়েচেড়ে দেখছেন।
তিনি বলেন, 'মেলার শেষভাগে সাধারণত বই বিক্রি বাড়ে। কাল (আজ) শুক্রবার শিশু প্রহর আছে। সকাল নয়টা থেকেই জমজমাট হয়ে উঠবে মেলা। এদিন আগের চেয়ে বই বিক্রি বেশি হতে পারে।'
সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বেশি ক্রেতা সমাগমের আশা করেছিলেন বিভিন্ন স্টলের বিক্রয়কর্মীরা। কিন্তু শাহবাগে আন্দোলনে আহতদের অবরোধ চলায় ব্যাপক যানজটের কারণে ক্রেতারা ঠিকমতো মেলায় আসতে পারেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুলাই অভু্যত্থান নিয়ে সবচেয়ে বেশি বই প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য প্রকাশনী। সর্বোচ্চ ১০টি বই প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তার মধ্যে রয়েছে অনুপম দেবাশীষ রায়ের 'বিদ্রোহ থেকে বিপস্নব', আরমান আহমেদ সিদ্দিকীর '৩৬ জুলাই ২০২৪', দেবাশীষ চক্রবর্তীর 'রক্তাক্ত জুলাই', ফরিদ উদ্দিন রনির 'আত্মনিবেদন', ফারজানা মাহবুবার 'জুলাই বিপস্নব', মুসা আল হাফিজের 'অভু্যত্থানের চিন্তা শিখা', মঈন শেখের 'জুলাইয়ের অশেষ পাখিরা', সাব্বির জাদিদের লেখা একটি গোলাপের জন্য উলেস্নখযোগ্য। প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, ঐতিহ্য প্রকাশনী এবার জুলাই অভু্যত্থানের বইয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। পাঠকের আগ্রহও বেশি এসব বইয়ে।
প্রথমা প্রকাশনী জুলাই গণঅভু্যত্থান নিয়ে চারটি বই প্রকাশ করেছে। বইগুলোর মধ্যে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুলের লেখা 'শেখ হাসিনার পতনকাল'। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজের লেখা 'আমিই রাষ্ট্র : বাংলাদেশে ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র'। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আল মাসুদ হাসানউজ্জামানের 'ছাত্র-জনতার অভু্যত্থান : নতুন পথে বাংলাদেশ'। আর প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক ও কবি সাজ্জাদ শরিফ সম্পাদিত 'গণঅভু্যত্থানের সাক্ষ্য'।
এ ছাড়া শোভা প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে আফরোজা খাতুনের লেখা 'জুলাই গণঅভু্যত্থান, আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে কাসেম খলিলের লেখা কবিতার বই 'বুকের ভেতর অনেক ঝড়', স্টুডেন্ট ওয়েজ থেকে তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলো হলো দ্বিতীয় বিপস্নব, ৩৬ ডেইজ অব জুলাই এবং স্টুডেন্ট প্রটেস্ট অ্যান্ড হাসিনাস ডাউনফল ইন বাংলাদেশ। অ্যাডর্ন পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে ফ্যাসিবাদ অতীত ও বর্তমান। বুক স্ট্রিট থেকে প্রকাশিত হয়েছে 'রক্তে লেখা বিপস্নব'। বইমেলা উদ্বোধনের পরপর বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্টলে গিয়ে বইটি হাতে নিয়ে দেখেছেন।
এ ছাড়া মেসবাহ য়াযাদের চব্বিশের বাংলাদেশ, ড. মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আয়নাঘর, মতিউর রহমানের জুলাই বিপস্নব, মাহবুবুর রহমান শাহীনের নতুন বাংলাদেশের আদ্যোপান্ত, মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিনের জুলাইয়ের গল্প, মহিউদ্দিন বিন জোবায়েদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, বকুল আশরাফের রক্তাক্ত জুলাই, উবায়দুলস্নাহ শাকেরের চব্বিশের স্বাধীনতাসহ জুলাই অভু্যত্থান নিয়ে শতাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'স্মরণ : মাহবুবুল হক' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তারিক মনজুর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মাহবুব বোরহান এবং মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ আজিজুল হক।
\হসভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, 'মাহবুবুল হক বাংলা ভাষার উৎকর্ষ সাধনে আজীবন নিবেদিত ছিলেন। প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণেই তিনি একজন মানবিক, সুশৃঙ্খল এবং সামাজিক দায়বোধসম্পন্ন মানুষ হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। তার আলোকিত জীবন ও সৃজন আমাদের সামনে এগিয়ে যাবার প্রেরণা জোগাবে।'
এদিন লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- টোকন ঠাকুর এবং জাকির আবু জাফর। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন- কবি সাখাওয়াত টিপু এবং কবি জব্বার আল নাঈম।
বাংলা একাডেমি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাজনিত কারণে আগামী ৮ ফেব্রম্নয়ারি ১৫ ফেব্রম্নয়ারি শনিবার বইমেলা বেলা ১১টার পরিবর্তে দুপুর ২টায় শুরু হবে। এ ছাড়া এই দুদিন পূর্বঘোষিত শিশুপ্রহর থাকবে না।
অমর একুশে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে আজ সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। সকাল ১০টায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বইমেলার মূলমঞ্চে বিকালে অনুষ্ঠিত হবে 'স্মরণ : গোলাম মুরশিদ' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সামজীর আহমেদ। আলোচনায় অংশ নেবেন স্বরোচিষ সরকার এবং গাজী মো. মাহবুব মুর্শিদ। সভাপতিত্ব করবেন মোরশেদ শফিউল হাসান।