ব্যয় বাড়ছে মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে পানি শোধনাগার স্থাপনে

সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক

প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
চট্টগ্রামের মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে পানি শোধনাগার ও নলকূপ স্থাপনের ব্যয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটির ব্যয় ৭৯ কোটি ৯ লাখ ৮৯ হাজার ১৮ টাকা বাড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১০ হাজার টন মসুর ডাল, ৮৮৮ কোটি টাকায় সার ও ফসফরিক এসিড কেনার অনুমোদনসহ কয়েকটি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এসব ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের 'কন্সট্রাকশন অব নাম্বার ওয়ান ৫০ এমএলডি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট পস্ন্যান্ট ইন ন্যাশনাল স্পেশাল ইকোনমিক জোন অ্যাট মীরসরাই, চট্টগ্রাম'-এর অতিরিক্ত কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। ২০২২ সালের ২৬ মে সিসিজিপি সভার অনুমোদনক্রমে 'জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল-এ পানি শোধনাগার ও নলকূপ স্থাপন' প্রকল্পের আওতায় মীরসরাই, চট্টগ্রামে একটি ৫০ এমএলডি ক্ষমতাসম্পন্ন সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট পস্ন্যান্ট স্থাপন কাজ যৌথভাবে জেডএইচইস, বিওডবিস্নউ এবং এসএমইডিআরআইসি, হংকং-এর সঙ্গে ৪৩৯ কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার টাকায় ক্রয়ের চুক্তি করা হয়। চুক্তিতে ৮০০ মিমি ডায়ার ট্রান্সমিশন পাইপলাইন স্থাপনের বিষয় থাকলেও বাস্তবে ১০০০ মিমি ব্যাসের ট্রান্সমিশন পাইপলাইন স্থাপন কাজ ও মাটি ভরাট কাজ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ভেরিশেন বাবদ চুক্তির অতিরিক্ত ৭৯ কোটি ৯ লাখ ৮৯ হাজার ১৮ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে 'ডিজিটাল সরকার ও অর্থনীতি শক্তিশালীকরণ' প্রকল্পের লট-১: সাপস্নাই, ইন্সস্টলেশন অ্যান্ড কমিশনিং অব ইক্সপানশন অব এক্সিস্টিং নুটানিক্স প্রাইভেট ক্লাইড পস্ন্যাটফরম ইন ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার অ্যাট বিসিসি-এর ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পে ব্যয় হবে ৫১ কোটি ৬৮ লাখ ১১ হাজার ৫৮২ টাকা। ১০ হাজার টন মসুর ডাল কিনবে সরকার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে সাশ্রয়ী দামে বিক্রির জন্য ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৯৭ কেটি ৯২ লাখ টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ধরা হয়েছে ৯৭ টাকা ৯২ পয়সা। এই মসুর ডাল কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রম্নয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভার পাশাপাশি অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় বৈদেশিক উৎস থেকে বেসরকারি খাতে আমদানিকৃত/আমদানিতব্য চাল স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১০ হাজার টন মসুর ডাল (৫০ কেজির বস্তায়) কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মসুর ডাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৮৮ হাজার টন। এ পর্যন্ত ক্রয় চুক্তি হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৯৫০ টন। এখন আরও ১০ হাজার টন কেনার অনুমোদন মিললো। এদিকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে বৈদেশিক উৎস থেকে বেসরকারি খাতে আমদানিকৃত/আমদানিতব্য চাল স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয়ের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখাসহ খাদ্য নিরাপত্তা বলয় সুসংহত রাখার লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উৎস থেকে চাল সংগ্রহ করা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে জি-টু-জি ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চাল আমদানি করা করা হয়। আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের আওতায় বৈদেশিক উৎস থেকে নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল প্রাপ্তি ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমতাবস্থায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের ঘাটতি পূরণ, সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখা ও নিরাপত্তা মজুদ নিশ্চিতকরণের স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে ১ লাখ টন চাল বৈদেশিক উৎস থেকে বেসরকারি খাতে আমদানিকৃত/আমদানিতব্য স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয়ের অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে। এই ক্রয় করা চালের মূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় পরিশোধ করা হবে। সূত্র জানায়, ২০০৭, ২০০৮ ও ২০১৭ সালে বৈদেশিক উৎস থেকে স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে চাল আমদানির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছিল। বর্তমান অর্থবছরে সরকারি পর্যায়ে চালের মোট চাহিদা ধরা হয়েছে ৩৯.৭৮ লাখ টন। সর্বশেষ গত ২ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে খাদ্য মজুদ আছে ৯ লাখ ২৭ হাজার ৯০৩ টন চাল এবং ৩ লাখ ৪৪ হাজার ১৪৯ টন গমসহ মোট ১২ লাখ ৮১ হাজার ২৬৫ টন। ৮৮৮ কোটি টাকায় কেনা হচ্ছে সার-ফসফরিক এসিড দেশের কৃষিখাতে ব্যবহারের জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে পৃথক পাঁচটি চুক্তির আওতায় এক লাখ টন বিভিন্ন ধরনের সার ও আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সার উৎপাদনে ব্যবহারের জন্য ৪০ হাজার টন ফসফিক এসিড আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ৮৮৮ কোটি ১৯ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় সৌদি আরব থেকে দুই লটে ৪০ হাজার টন ডিএপি (ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট) সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বিএডিসি কর্তৃক সৌদি আরব থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে ডিএপি সার আমদানি করা হবে। এর জন্য বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে মোট ব্যয় হবে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ২৯৮ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রতি টন ডিএপি সারের দাম পড়বে ৬১১ ডলার। বৈঠকে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের (কাফকো) এর কাছ থেকে ১২তম লটে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি টন ৩৮৯ দশমিক ৭৫ ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ১৬ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৪২ কোটি ৬৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। বৈঠক সূত্র জানায়, সৌদি আরব থেকে ১৬তম লটে ৩০ হাজার টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানির আর একটি অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। প্রতি টন ৩৯৫ দশমিক ১৬ ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ১৮ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৪৪ কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ৬০০ টাকা। বৈঠকে চট্টগ্রামের ডিএপিএফসিএলের জন্য ২০ হাজার মেট্রিক টন (+১০%) ফসফরিক এসিড আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ডিএপি সার উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল ফসফরিক এসিড বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। মেসার্স সান ইন্টারন্যাশনাল এফজেডই, ইউএই এই ২০ হাজার টন ফসফরিক এসিড সরবরাহ করবে। প্রতি টন ফসফরিক এসিডের দাম ৬৩৩ দশমিক ৪২ ডলার। এ হিসেবে বাংলাদেশি মুদ্রায় মোট ব্যয় হবে ১৫২ কোটি ২ লাখ ৮ হাজার টাকা। সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের ডিএপিএফসিএলের জন্য ২০ হাজার মেট্রিক টন (+১০%) ফসফরিক এসিড আমদানির অপর একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। মেসার্স সান ইন্টারন্যাশনাল এফজেডই, ইউএই এ সার সরবরাহ করবে। প্রতি টন ফসফরিক এসিডের দাম ৬১৭ দশমিক ৭৬ ডলার। এ হিসেবে ২০ হাজার টন ফসফরিক এসিড ক্রয়ে ব্যয় হবে ১৫০ কোটি ৭৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪০০ টাকা।