বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
দ্বিতীয় দিনে এসেছে ১৩টি বই

নতুন বইয়ের সুবাস নিতে বইপ্রেমিরা মেলায়

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
নতুন বইয়ের সুবাস নিতে বইপ্রেমিরা মেলায়
বইমেলার দ্বিতীয় দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি স্টলে নতুন বই দেখছেন ক্রেতারা -ফোকাস বাংলা

'জুলাইয়ের গণঅভু্যত্থান এবং তার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের বিনির্মাণ' প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শনিবার থেকে রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হওয়া বইমেলার রোববার ছিল দ্বিতীয় দিন। মেলার দ্বিতীয় দিন হলেও রোববার সকালে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, এখনো অধিকাংশ স্টল পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত হয়নি। তবে বিকালে বেশকিছু স্টলে স্টলে বই বিক্রি শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় দিনে বইমেলায় মানুষের উপস্থিতি ছিল কম। তবে নতুন বইয়ের সুবাস নিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা প্রাঙ্গণে ছুটে এসেছে বইপ্রেমীরা। এদিকে বাংলা একাডেমি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে মেলার দ্বিতীয় দিনে নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ১৩টি।

দ্বিতীয় দিন যারা এসেছেন, তারা বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে বই দেখছেন। বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণ জুড়ে ছিল জুলাই গণঅভু্যত্থানের বিভিন্ন ব্যানার ও পোস্টার। 'বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর', 'যখন জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়, ইতিহাস নতুন পথ তৈরি করে', 'আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে', 'যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তুমিই বাংলাদেশ', 'হামার বেটাক মারলু ক্যানে?' স্স্নোগান সম্বলিত পোস্টার টানানো হয়েছে।

এদিকে, মেলা উপলক্ষে প্রদর্শিত একটি পোস্টার সমালোচনার মুখে পড়ায় তা সরিয়ে নিয়েছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটি বলেছে, পোস্টারটি বাংলা একাডেমি তৈরি করেনি। অন্য একটি পক্ষের করা এই পোস্টার নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছে তারা।

'৫২-এর চেতনা ২৪-এর প্রেরণা' স্স্নোগান লেখা বইমেলা উপলক্ষে তৈরি করা এই পোস্টার টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত পথে কয়েকটি জায়গায় লাগানো হয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে উপস্থাপন করতে এখানে যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তোলা ছবি। শনিবার বইমেলার উদ্বোধনের পর অনলাইনে এই পোস্টারের ছবির পাশে ১৯৭১ সালে শহীদ মিনারের সমাবেশের ছবি দিয়ে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তোলেন কেউ কেউ।

বইমেলার এই পোস্টার নিয়ে শনিবার রাতেই ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন কাজী ফেরদৌস হক লিনু। তাতে তিনি লেখেন, 'সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এই ছবি ব্যবহারের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ১৯৭১ুএর ছবি ৫২ুএর ছবি বলে উলেস্নখ করছে, ধিক্কার জানাই। ছবিতে লাঠি হাতে আমি। ১৫ মার্চ ১৯৭১ুএর ছবি। তাদের ইতিহাস সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা নেই। ৫২ুতে স্বাধীনতার স্স্নোগান ছিল না। রাষ্ট্রভাষা মাতৃভাষা বাংলার স্স্নোগান ছিল।'

অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে তৈরি করা পোস্টার নিয়ে এমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির পর বাংলা একাডেমির ভূমিকা কী, একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম এ বিষয়ে বলেন, 'প্রথম কথা এটা বাংলা একাডেমির পোস্টার না। তবে বইমেলার পোস্টার। একাডেমির মেলার আয়োজকদের পক্ষ থেকে এটি বানানো হয়নি। অন্য একটি পক্ষ তৈরি করেছে। আমাদের কোনোভাবে দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। তবে আমরা জানার সঙ্গে সঙ্গে পোস্টারটি অপসারণ করা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'পোস্টারটি সম্ভবত মেট্রোরেলের পিলারের সঙ্গে ছিল।'

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা একাডেমির একজন কর্মকর্তা বলেন, 'পোস্টার একটি না। টিএসসির দিক থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত পুরো পথেই পোস্টার লাগানো হয়েছে

একটু পরপর। পোস্টারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নাম আছে। তবে যতটা জানি, এটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের ভুল।'

এদিকে বিজ্ঞপ্তিতে বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, মেলার দ্বিতীয় দিন বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'হেলাল হাফিজের রাজনৈতিক পাঠ' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. কুদরত-ই-হুদা। আলোচনায় অংশ নেন মৃদুল মাহবুব। সভাপতিত্ব করেন সুমন রহমান।

প্রাবন্ধিক বলেন, উনসত্তরের গর্ভ থেকে যেসব কবির জন্ম হয়েছিল, কবি হেলাল হাফিজ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর কবিতার উচ্চারণ ছিল রাখঢাকহীন, স্পষ্ট, অনাবিল ও অভাবিত। কবিতা তাঁর কাছে কেবল ব্যক্তিগত দীর্ঘশ্বাসের বিষয় ছিল না। তিনি মনে করতেন, সমষ্টির জন্যও কবিতার একটা দায় আছে। সত্তর থেকে চুয়াত্তরের মধ্যে যে রাজনৈতিক কবিতাগুলো তিনি লিখেছেন, সেগুলোর মূল সুর কখনো মুক্তিযুদ্ধ, কখনো স্বাধীনতাত্তোর রাজনৈতিক পরিস্থিতিজাত হতাশা, আশাবাদ, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের অবস্থা ও অবস্থান, রাষ্ট্রের কাছে কবির প্রত্যাশা, দ্রোহ-এসবই তার কবিতায় কখনো প্রত্যক্ষভাবে কখনো পরোক্ষভাবে উঠে এসেছে।

আলোচক বলেন, কবি হেলাল হাফিজের কবিতার কথা বললেই পাঠকের মানসপটে ভেসে ওঠে-'এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়' পঙ্‌ ক্তিটি। বাংলা ভাষার যেসব কবি কবিতা, নিজস্ব জীবনদর্শন ও জীবনযাপন দিয়ে মিথ হয়ে উঠতে পেরেছেন, কবি হেলাল হাফিজ তাঁদের একজন। কবিতার ভেতর প্রেম, বিদ্রোহ ও রাজনৈতিক চেতনা কবিকে মানুষের অনুভূতির কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে। হেলাল হাফিজ তাঁর কবিতার মাধ্যমে মানুষের অনুভূতির সেই সুরটি স্পর্শ করতে পেরেছিলেন।

সভাপতির বক্তব্যে সুমন রহমান বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ঊনসত্তর ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি সময়। কবি হেলাল হাফিজ তার কবিতায় সেই সময়টিকে ধারণ করেছেন। পাশাপাশি, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় উদ্ভূত দ্রোহ, সংগ্রাম, আশাবাদ, বিষাদ সব কিছুই তিনি কবিতায় তুলে এনেছেন।

লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- কবি রাসেল রায়হান, কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন শফিক এবং শিশুসাহিত্যিক আশিক মুস্তাফা।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন- কবি হাসান হাফিজ এবং জাকির আবু জাফর। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী অনন্যা লাবণী এবং শিপন হোসেন মানব। সুমন মজুমদারের পরিচালনায় ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন 'সঙ্গীতমঞ্জুরী শিল্পীগোষ্ঠী'-র পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রিজিয়া পারভীন, প্রিয়াংকা গোপ, ইসরাত জাহান, মিজান মাহমুদ রাজীব, মো. মাইদুল হক এবং নাফিজা ইবনাত কবির। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন শিমুল বড়ুয়া (তবলা), রাজিব আহমেদ (কী-বোর্ড), মো. মেজবাহ উদ্দিন (অক্টোপ্যাড), সাইদ হাসান ফারুকী (লীড গীটার), পলস্নব দাস (বেইজ-গীটার)।

আগামীকালের আলোচনা অনুষ্ঠান

আজ বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'হায়দার আকবর খান রনো' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সোহরাব হাসান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন আবদুলস্নাহ আল ক্বাফী রতন এবং জলি তালুকদার। সভাপতিত্ব করবেন দীপা দত্ত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে