চট্টগ্রামে খাল খননের নামে বিপুল অর্থ লুটপাট হয়েছে
গণপূর্ত উপদেষ্টা
প্রকাশ | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
চট্টগ্রাম বু্যরো
অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চট্টগ্রামে খাল খননের নামে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং বিপুল অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। জনগণের জন্য যেসব কাজ করা দরকার ছিল সেসব করা হয়নি। শহরের ভেতরে যে খাল-নালা, সেগুলোর দিকে নজর দেওয়া হয়নি।
শুক্রবার সকালে নগরের বহদ্দারহাট বারইপাড়া ও ষোলশহর সুন্নিয়া মাদরাসা খাল খনন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে তিনি একথা বলেন।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের গণপূর্ত উপদেষ্টা
আদিলুর রহমান খান বলেন, 'গত অনেক বছর নদী, নালা, খাল ও শহরের ভেতর যে জলাবদ্ধতা এসবের কোনো খোঁজ করা হয়নি। ব্যাপক অভিযোগ ছিল। প্রত্যেক বছর চট্টগ্রাম নগর পানির নিচে চলে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি শহরের ভেতরে যতগুলো নালা ও সমুদ্র, নদীতে পানি যাওয়ার প্রবাহ সেগুলো চালু করার। এ বর্ষায় জলাবদ্ধতা কিছুটা কমবে, তবে পূর্ণ সমাধানে আরও সময় লাগবে। কাজটি রাতারাতি সম্ভব নয়, তবে আমরা এগিয়ে চলেছি।'
আদিলুর রহমান খান বলেন, 'পরের বর্ষায় যাতে পানি চলে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়, সেজন্য আমরা কাজ করছি। এ বর্ষায় যেন আগের অবস্থার মতো না হয় এবং জলাবদ্ধতা কম হয় সে চেষ্টা করা হচ্ছে।'
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, আগের মতো সমন্বয়ের অভাব নেই। এখন আমরা সব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে কাজ করছি। এ মৌসুমে ৪০-৫০ শতাংশ উন্নতি হবে বলে আশা করছি। পুরো ফল পেতে আরও এক বছর সময় লাগবে।
তিনি বলেন, 'এর আগে আরো তিনজন উপদেষ্টা জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে এসেছিলেন। আমরা সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করলে নগরবাসীকে এ জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই দিতে পারব বলে আশা করছি।'
চসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরের বহদ্দারহাটের বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন এই খালটি খনন করছে সিটি করপোরেশন। ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে নগরের নাসিরাবাদ, মুরাদপুর, শুলকবহর, বহদ্দারহাট, বারইপাড়া ও বাকলিয়া এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে নতুন এই খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৪ সালের ২৪ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন হয়।
নগরের বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত ২ দশমিক ৯৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৬৫ ফুট প্রস্থের এ খাল খনন প্রকল্পের ব্যয় প্রথমে ধরা হয় ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অন্তত পাঁচ দফা মেয়াদ বাড়িয়েও এর কাজ শেষ করতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন। বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছর জুনে।
পরিদর্শনে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দিন, সিডিএর চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিমসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অগ্রগতি দেখতে এসে আগামী বর্ষার আগে করণীয় হিসেবে ১১ দফা কর্মপরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত উচ্চপর্যায়ের মনিটরিং টিমের তিন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক। এ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে আগামী মে মাস পর্যন্ত।