ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার শেষ দিনে উপচে পড়া ভিড়

'বাণিজ্যমেলাকে আন্তর্জাতিক বলা হলেও বাইরের তেমন কেউ এতে অংশগ্রহণ করে না'

প্রকাশ | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলার শেষ দিন শুক্রবার ছিল ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় -স্টারমেইল
এক মাস ধরে চলা ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ০মেলার শেষ দিনে পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে তিল ধারণেই ঠাঁই ছিল না। সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় এদিন সকাল থেকেই ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়। দুপুরের পর মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের তীব্র ভিড় দেখা যায়। বিশেষ করে গৃহস্থালির নানা পণ্য, খাবার, ইলেকট্রনিকস, ক্রোকারিজসহ সব পণ্যে নানা অফার থাকায় সবাই কিছু না কিছু কিনে বাড়ি ফিরছেন। 'বাই ওয়ান গেট ওয়ান' অফারে ক্রেতাদের আগ্রহ ছিল বেশি। মেলার শেষ দিনে বিভিন্ন পণ্যে ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে কোনো কোনো স্টল। সেসব পণ্যও বিক্রি হয়েছে দেদার। এদিকে, মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ঢাকা বাণিজ্য মেলাকে 'আন্তর্জাতিক' বলা হলেও বাইরের 'তেমন কেউ' এতে অংশগ্রহণ করে না বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, 'বিজিএমইএ (বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি) ও বিকেএমইএকে (বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন) এই মেলায় যুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। আমরা যদিও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা বলি, তবে এখানে আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণকারী তেমন কেউ আসেন না। যারা আসেন তারা মনোহরি পণ্য নিয়ে আসেন।' রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবারের মেলার যৌথ আয়োজক। এবারের মেলার বর্ষপণ্য ফার্নিচার। দেশে পণ্য প্রদর্শনীর সবচেয়ে বড় এ মেলায় এবার ৩৬২টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন ছিল। এর মধ্যে ৩৫১টিই দেশীয় প্রতিষ্ঠানের স্টল-প্যাভিলিয়ন। আর বাকি ১১টি স্টল সাতটি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। মেলায় অংশ নেওয়া সাতটি দেশ হল- ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও মালয়েশিয়া। মেলায় দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিক্স অ্যান্ড বিউটি এইড, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্সস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহ সামগ্রী, চামড়া ও আর্টিফিসিয়াল চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, পস্নাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল, টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর বিক্রি হয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, মেলার শেষের দিকে বেচাকেনা বাড়লেও, খুব একটা লাভের মুখ তারা দেখছেন না। তারা মেলার সময় বাড়ানোর দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ তাতে সায় দেয়নি। মেলার মূল ভবনে ভিশন প্যাভিলিয়নের হেড রাসেল মাহমুদ বলেন, 'আজ শেষ দিন হওয়ায় আমরা ক্রেতা-দর্শনার্থীদের থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমাদের সব পণ্যে ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট চলছে। বেচা-কেনা ভালো, তবে আরও ভালো হতে পারত।' মেলায় টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি ও থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে একটি স্টলে। সেলসম্যান আক্তার হোসেন বলেন, 'আজকে শেষ দিনে বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে। সুলভ মূল্যেই শাড়ি, থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে।' এই দোকানে আসা একজন ক্রেতা বললেন, 'আগারগাঁওয়ে যখন মেলা হত তখন ব্যাপারটাই অন্যরকম ছিল। এখানেও খারাপ না। তবে বিদেশি স্টলের সংখ্যা বাড়ানো গেলে আরো বেশি মানুষ আসবে বলে আমি মনে করি।' শুক্রবার ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দীন বলেন, 'আসলে মাসব্যপী একটি মেলায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আসা খুব একটা সহজ নয়। দেশে যেসব আন্তর্জাতিক মেলা হচ্ছে, সেগুলো তিন অথবা চার দিনের। সেগুলোয় তারা অংশগ্রহণ করেন। ২০২৬ সালের নভেম্বরে এলডিসি গ্র?্যাজুয়েট হতে যাচ্ছি। এই গ্র?্যাজুয়েটের কারণে সামনে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের ওপর নানা নিয়ম আসবে।' উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, 'ব্যবসায়ীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সার্বিকভাবে মনোযোগী হন। প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমলে আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে। তাই সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য শিল্প ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বৈচিত্র্যময় আয়োজন করতে হবে। আর নীতি সহায়তার জন্য সরকার সব সময় কাজ করছে।'