বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

অমর একুশে বইমেলার পর্দা উঠছে কাল

বীরেন মুখার্জী
  ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
অমর একুশে বইমেলার পর্দা উঠছে কাল
আগামীকাল শনিবার শুরু হচ্ছে ২১শে বইমেলা। বৃহস্পতিবার শেষ মুহূর্তে স্টল সাজাতে ব্যস্ত শ্রমিকরা -ফোকাস বাংলা

জুলাই গণ-অভু্যত্থান পরবর্তী দেশের ভিন্ন প্রেক্ষাপটে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা শুরু হচ্ছে আগামীকাল শনিবার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এদিন বিকাল ৩টায় উদ্বোধন করবেন বাঙালির প্রাণের এ মেলার। বইমেলার এবারের প্রতিপাদ্য- 'জুলাই গণ-অভু্যত্থান:নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ'।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করীম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে মেলা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব ড. সরকার আমিন। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম।

ভাষাশহীদ-ভাষা সংগ্রামী, মুক্তিযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং জুলাই গণ-অভু্যত্থান ২০২৪-এর শহীদ, আহত ও অংশগ্রহণকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'আগামী ১ ফেব্রম্নয়ারি বিকাল ৩টায় বইমেলা উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জ্ঞানভিত্তিক, মানবিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে বই এবং বইমেলা সহায়ক। আমরা আশা করি, সব সম্ভাবনায় আলোকিত হবে এবারের মেলা- আমাদের প্রাণের বইমেলা।'

সদস্য-সচিব বলেন, 'বাঙালির প্রাণের এ উৎসবে এবারও বাড়ছে প্রকাশনা সংস্থা। এ বছর ৭০৮টি প্রতিষ্ঠান ১০৮৪টি ইউনিটে তাদের বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসবে। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৬০৯টি প্রতিষ্ঠানকে ইউনিটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ বছর প্যাভেলিয়নের সংখ্যা ৩৭টি। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছে ১৩০টি স্টলে বসবেন লিটলম্যাগ সম্পাদকরা। ২০২৪ সালের বইমেলায় অংশ নিয়েছিল ৬৪২ প্রতিষ্ঠান। সেই হিসাবে এবার প্রকাশনা সংস্থা বেড়েছে ৬৬টি। এছাড়া এ বছর শিশুচত্বরে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বেড়েছে। এবার ৭৪টি প্রতিষ্ঠান এবং ১২০টি ইউনিট রয়েছে এ চত্বরে। ২০২৪ সালে শিশুচত্বরে প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৮টি এবং ইউনিট ছিল ১০৯টি।'

সরকার আমিন বলেন, 'এবারও বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। গতবছরের বইমেলার বিন্যাস অক্ষুণ্ন রেখে আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গত বছরের মেলার বাহিরপথ এবার একটু সরিয়ে মন্দির গেটের কাছাকাছি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া টিএসটি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং পস্নান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে ৪টি প্রবেশ ও বাহির পথ থাকছে।'

তিনি বলেন, 'এবার শিশুচত্বরের পরিসর বড় করা হয়েছে, যাতে শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে। এছাড়া খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সীমানা ঘেঁষে বিন্যস্ত করা হয়েছে। নামাজের স্থান ও শৌচাগারের পরিধি বাড়ানো হয়েছে।'

বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে জানিয়ে সরকার আমিন বলেন, 'প্রতিদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে

সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলা একাডেমির তিনটি প্যাভিলিয়ন এবং শিশু-কিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য একটি স্টল থাকবে। ৮ ফেব্রম্নয়ারি ও ১৫ ফেব্রম্নয়ারি ব্যতীত প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত 'শিশুপ্রহর' থাকবে। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে।'

তিনি জানান, বইমেলার প্রবেশ ও বাহির পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ,র্ যাব, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। মেলাপ্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (সমগ্র মেলাপ্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর থেকে শহীদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চাঁনখারপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত) নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ধুলা নিবারণের জন্য পানি ছেটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে।

বিভিন্ন পুরস্কারের বিষয়ে জানিয়ে মেলার সদস্য সচিব আরো বলেন, 'অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২৪ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে 'চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার' এবং ২০২৪ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে "মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার" দেওয়া হবে।'

এছাড়া ২০২৪ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে 'রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার' এবং এ-বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে 'কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার' দেওয়া হবে। এবারের বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ৪৩টি বই। এছাড়া পুনর্মুদ্রিত ৪১টি বই মেলায় থাকবে বলে উলেস্নখ করেন তিনি।

বইমেলার সময়সূচি নিয়ে সদস্য-সচিব বলেন, '১ ফেব্রম্নয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত (৮ ফেব্রম্নয়ারি ও ১৫ ফেব্রম্নয়ারি ব্যতীত)। ২১ ফেব্রম্নয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টা এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।'

এবারের মেলা পলিথিনমুক্ত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'অমর একুশে বইমেলার আয়োজনকে পরিবেশ সুরক্ষা সচেতন এবং জিরো ওয়েস্ট বইমেলায় পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে আয়োজনস্থল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্থাপিতব্য সব স্টল, দোকান, মঞ্চ, ব্যানার, লিফলেট, প্রচারপত্র, ফাস্ট ফুড, কফি শপ, খাবার দোকান ইত্যাদি প্রস্তুতে সিঙ্গেল ইউজ পস্নাস্টিকের ব্যবহার শতভাগ পরিহার করে পুনঃব্যবহারযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব উপকরণ, যেমন পাট, কাপড়, কাগজ ইত্যাদির ব্যবহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।'

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম। এছাড়া একাডেমির সদস্য সচিব ড. মো. সেলিম রেজা ও বইমেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা 'ডিমার ডংকি'র প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনা করেন জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা পিয়াস মজিদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে