বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

শীতের শুরুতে কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের ঢল

সৈকতের ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসের কোথাও ৯০ শতাংশ আবার কোথাও শতভাগ রুম ইতোমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে চাঙা হয়ে উঠেছে পরিবহণ ব্যবসাও
জাবেদ আবেদীন শাহীন, কক্সবাজার
  ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শীতের শুরুতে কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের ঢল
পর্যটন নগরী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভরে উঠেছে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকের পদচারণায়। ছবিটি শুক্রবার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে তোলা -যাযাদি

দিগন্তজোড়া বিস্তীর্ণ বালুকাবেলা, সারি সারি ঝাউবন, নীল সমুদ্রের বুকে আছড়েপড়া ঢেউ, ভোরে পাহাড় ঘেঁষে উদিত হওয়া সূর্য, সন্ধ্যায় মায়াবি রূপে সাগরে সূর্যাস্ত- এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আয়োজন নিয়েই কক্সবাজার।

হেমন্তের শেষ সময়ে দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। দিনে গরমের তেজ নেই। শেষ বিকেলে বইছে শীতের আমেজ। আর এমনই আবহে পর্যটন নগরী কক্সবাজার ভরে উঠেছে প্রকৃতিপ্রেমীদের পদচারণায়। প্রতিদিনই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে। সৈকতের হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও রিসোর্টগুলো ভরে উঠছে পর্যটকে। ফলে ব্যবসায়ও ফিরছে চাঙ্গাভাব। এদিকে, পর্যটকদের হয়রানি রোধে দায়িত্ব পালন করছে টু্যরিস্ট পুলিশ। হোটেল মালিকদের দেওয়া তথ্য মতে, প্রতিবছর শীতের মৌসুমে ২০-২৫ লাখের বেশি পর্যটক কক্সবাজারে ঘুরতে আসেন।

শীতের আমেজে কক্সবাজার সৈকতের নোনাজলে স্নানের অনুভূতিটা সবার কাছেই ভিন্নতা নিয়ে হাজির হয়। বিশেষ করে বালিয়াড়িতে হালকা গড়াগড়ি করার মুহূর্তগুলো আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে পর্যটকদের কাছে। এছাড়া সানবাথ, ছবি তোলা এবং জেটস্কি চালানো ভ্রমণের আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। সাগরের নরম বালিতে শুয়ে রোদ পোহানো একদিকে যেমন আরামদায়ক, তেমনই স্বাস্থ্যকর।

ছুটির দিন শুক্রবার সকালে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, শীতের আগমনের শুরুতেই ভ্রমণ পিপাসুদের ঢল নেমেছে। সকালের নরম-মিষ্টি রোদে ছুটে গিয়ে সাগরের নীল জলরাশিতে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন অনেকে। কেউ উঠেছেন ঘোড়ার পিঠে, কেউ আবার ঘুরছেন বিচ বাইকে। কেউ কেউ দ্রম্নতগতির জেটস্কি নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন সৈকত থেকে দূরে। প্রিয় মুহূর্ত মুঠোফোনে ফ্রেমবন্দি করছেন কেউ কেউ।

\হসৈকতের বার্মিজ মার্কেটগুলো বর্ণিল আলোয় হাসছে। সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ দোকান, ফুচকা-চটপটির দোকানেও বাড়ছে ভিড়। বিশেষ করে অনেকে সমুদ্রের রাতের নির্জনতায় উত্তাল ঢেউয়ের সৌন্দর্য দেখতে সৈকতের বালিয়াড়িতে পানিতে পা ভিজিয়ে হাটিহাটি করেন মনের আনন্দে।

কক্সবাজারের আবাসন ব্যবসায়ী সূত্র জানায়, সৈকতের ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসের কোথাও ৯০ শতাংশ আবার কোথাও শতভাগ রুম ইতোমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে পরিবহণ ব্যবসাও। কক্সবাজারে পর্যটন স্পটগুলো ইনানী, হিমছড়ি, পাটুয়ারটেক, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক, দরিয়ানগর, রামু বৌদ্ধ মন্দির ও টেকনাফসহ জেলার বিভিন্ন স্পটে পর্যটকদের এখন উপচেপড়া ভিড় যাচ্ছে। অনেকে সৈকতের নির্মল হাওয়ায় পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন।

রাজশাহীর পর্যটক দম্পতি ইফতেখার আলম ও সোনিয়া রহমান বলেন, বিয়ের পর প্রথম কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি থাকবো কিছু দিন। সৈকতে সকালে হালকা শীতে হাঁটাহাঁটি সত্যিই অনন্য এক অভিজ্ঞতা। নরম বালির উপর পা ফেলে সামুদ্রিক ঢেউয়ের সুর শুনতে শুনতে চলার আনন্দের তুলনা নেই। খুব ভালো লাগছে কক্সবাজারে এসে।

ঢাকার পর্যটক আতিক হাসান দম্পতি জানান, অনেক দিন পর ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার আসার অভিজ্ঞতা দারুণ। শীতল হাওয়া, নীল আকাশ, আর সমুদ্রের অনন্ত নোনা জলের টানে ছুটে এসেছি প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। সুযোগ পেলে পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে আসি কক্সবাজারে। জানি না কিসের টানে আসি। তবে যতবার আসি অপরিচিত মনে হয়। বিশেষ করে সামুদ্রিক তাজা মাছের স্বাদ সত্যি অসাধারণ।

\হসৈকতে পর্যটকের উপস্থিতি বাড়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, পর্যটকের উপস্থিতিতে চাঙা হয়ে উঠেছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্য, রেস্তোরাঁ, পরিবহণ খাত, বার্মিজ পণ্যের দোকান, শুঁটকি ব্যবসাসহ সামগ্রিক পর্যটন খাত।

জেডস্কি ব্যবসায়ী সুলতান মোহাম্মদ বলেন, 'পর্যটন মওসুম শুরু হওয়ায় আমাদের ব্যবসা চালু হয়েছে। পর্যটক যত বেশি আসবে তত আমাদের ব্যবসা ভালো হবে।'

\হসৈকতের ফটোগ্রাফার কায়ছার আলম বলেন, 'পর্যটক থাকায় ব্যবসা ভালো চলছে। শুক্রবার সকাল থেকে সৈকতে রয়েছি এখন দুপুর ১২টা। এর মধ্যে বারশ' টাকা আয় করেছি। সব সময় হয় না। কোনোদিন কম, কোনোদিন দুই হাজারের ওপর।'

ঝিনুক ব্যবসায়ী ইউনুস খান বলেন, 'পর্যটক আসায় সবার ব্যবসা এখন চাঙ্গা। আমারও ব্যবসা হচ্ছে। পর্যকরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী ঝিনুক সামগ্রী কিনছেন। সুগন্ধা পয়েন্টে জসীম নামে এক হকার বলেন, স্বল্পপুঁজি নিয়ে ব্যবসা করি। এখন ভালোই ব্যবসা হচ্ছে।'

কক্সবাজার হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, এখন পর্যটন মওসুম শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিনের মন্দাভাব কাটিয়ে হোটেল ব্যবসায়ীরা এখন আবার ভালো অবস্থানে ফিরছেন।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উলস্নাহ জানান, কক্সবাজার শহরে বিশেষ করে পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় জেলা পুলিশ, টু্যরিস্ট পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী কাজ করছেন। যানজট নিরসনে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নতি করা হয়েছে।

এদিকে প্রতিবছরের মতো এবারো আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে টানা সাতদিন কক্সবাজারে লাবণী পয়েন্টে জমকালো আয়োজনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিচ কার্নিভাল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে