চলতি বছরের নভেম্বর মাসে রপ্তানি আয় ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়ে ৪ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে আয় হয়েছিল ৩ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং ওই সময় আয় হয়েছে ১৯ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার যা আগের বছর ছিল ১৭ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরো বুধবার এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
এর আগে আমদানির সঙ্গে রপ্তানি বাড়ায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর মেয়াদে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ১৩.২৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট (বিওপি) সংক্রান্ত মঙ্গলবারের প্রতিবেদেনে এই তথ্য জানা যায়।
রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরো জানায়, নভেম্বর মাসে পোশাক খাতে আয় বেড়েছে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং আয় হয়েছে ৩ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছর ছিল ২ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে তৈরি পোশাক থেকে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং আয় হয়েছে ১৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৪ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়ে ৪৬৬ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে যা গত বছর ছিল ৪৩৩ মিলিয়ন ডলার। কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৯৫ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি।
জুলাই-অক্টোবর :কমেছে
বাণিজ্য ঘাটতি
এদিকে, আমদানির সঙ্গে রপ্তানি বাড়ায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর মেয়াদে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ১৩ দশমিক ২৭ শতাংশ; অর্থের হিসাবে ৮৮৪ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট (বিওপি) সংক্রান্ত মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে জুলাই-অক্টোবরের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে বাণিজ্য ঘাটতি ৬ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার দেখানো হয়েছে। গত অর্থবছরে যা ছিল ৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৪ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার।
রপ্তানি বেড়েছে
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি বেড়েছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রপ্তানি হয় মোট ১৪ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ১৩ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
চলতি হিসাবে কমেছে ঘাটতি
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্যে, চলতি হিসাবেও ঘাটতি কমেছে। প্রথম চার মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতি ৭৫২ মিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময় ছিল ঘাটতি ৩ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে আর্থিক হিসাব দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৮৭৩ মিলিয়ন ডলার।
বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'গত কয়েক মাস ধরেই ২ বিলিয়ন ডলার আসছে। আবার রপ্তানিও বেড়েছে। তাতে ঘাটতি কমে আসছে। অর্থনীতির জন্য যা স্বস্তির। আমদানির এলসি খুলতেও বাংলাদেশ ব্যাংক কড়াকড়ি কমিয়েছে। কারণ ডলার সংকট আগের চেয়ে অনেক কমেছে।'
২০২২ সালের মাঝামাঝি ব্যাংক খাতে ডলার সংকট শুরু হয়। তাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এলসি খোলার জন্য নানা বিধিনিষেধ দেয়।
তবে চলতি বছর মে মাসে ডলারের বিনিময় হারে 'ক্রলিং পেগ' পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে ডলারের দর এক লাফে ৭ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৭ টাকায়। এরপর ডলার সংকট ও দরে অস্থিরতা কমে আসে। ব্যাংকগুলো বর্তমানে প্রতি ডলারের বিপরীতে ১২০ টাকার বেশি দিচ্ছে।
জাহিদ হোসেন মনে করেন, মূলত ডলারের দর ও দেশের ওপর আস্থা বাড়ার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলার আসছে বেশি। তাতে বিওপিতেও এক ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
তবে চলতি ও আর্থিক হিসাবে সামান্য উন্নতি হলেও বিওপিতে প্রশ্ন ও উদ্বেগ রয়েছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।
সেই বিষয়টি বিওপির 'এরোরস অ্যান্ড অমিশনস' সূচকে উঠে এসেছে বলে মনে করেন তিনি।
জাহিদ হোসেন বলেন, 'ডলার ব্যয় যা হওয়ার হিসাব তার চাইতে বেশি হয়েছে। অর্থাৎ দেশ থেকে হিসাবের চাইতে বেশি ডলার বাইরে চলে গেছে। সেই ডলার কোথায় গেছে তা সুনির্দিষ্ট নয়। দেশ থেকে ডলার বাইরে চলে গেছে যার কোনো হিসাব নাই। এটাতে অর্থ পাচারের গন্ধ পাওয়া যায়। এই সূচকে বড় একটা প্রশ্ন থাকবে। রিজার্ভ যতটা কমেছে ও বহির্বিশ্বের যে লেনদেনে ঘাটতি কমেছে, সে হিসাবে তা এত কমার কথা নয়। এখানে টাকা পাচারের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। দেশ থেকে এত পরিমাণে ডলার কেন বাইরে চলে গেল, তা উদ্বেগ তৈরি করে।'