সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক

ভারত ও মিয়ানমার থেকে কেনা হবে ৮৯৮ কোটি টাকার চাল

১৪ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন, ব্যয় হবে ২৭৫২ কোটির বেশি সুনামগঞ্জ ও কুড়িগ্রামে নির্মিত হবে ১১১ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ষ কেনা হবে ডাল-তেল ও সার দুটি মহাসড়কের পূর্ত কাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ করার সিদ্ধান্ত

প্রকাশ | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
আগামী রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে স্বস্তি রাখতে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে চাল-ডাল ও তেল কিনছে সরকার। এ ছাড়া দুই প্যাকেজে সাতক্ষীরার দুটি মহাসড়কের ক্রয়প্রস্তাব পুনঃপ্রক্রিয়াকরণসহ মোট ১৪ প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে ব্যয় হবে দুই হাজার ৭৫২ কোটি টাকার বেশি। অনুমোদিত প্রস্তাবের মধ্যে আছে- স্থানীয় সরকার বিভাগের চারটি, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তিনটি করে ছয়টি, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের দুটি করে চারটি। এর মধ্যে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের পূর্ত কাজের দুই প্যাকেজ প্রকল্প ২০২৩ সালের নভেম্বরে একনেক বৈঠকে অনুমোদিত। বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পৃথক দুটি প্রস্তাবের আওতায় মিয়ানমার থেকে এক লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল এবং ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি চাল আমদানি করবে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৮৯৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। মিয়ানমার থেকে জিটুজি পর্যায়ে এক লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল আনা হবে। মিয়ানমার রাইচ ফেডারেশন এই চাল সরবরাহ করবে। প্রতি মেট্রিক টন চালের দাম ধরা হয়েছে ৫১৫ মার্কিন ডলার। এতে ব্যয় হবে ৬১৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল কেনা হবে, যা ভারতের মেসার্স মন্ডল স্টোন প্রডাক্ট প্রাইভেট লিমিটেড সরবরাহ করবে। প্রতি মেট্রিক টন চালের দাম ধরা হয়েছে ৪৬৭.৭০ মার্কিন ডলার। এতে ব্যয় হবে ২৮০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃথক দুই প্রস্তাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে দেশের দুই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫ হাজার টন চিনি ও মসুর ডাল কিনবে সরকার। এর মধ্যে পাঁচ হাজার টন চিনি ও ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৫৫ কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে চট্টগ্রামের মেসার্স পায়েল ট্রেডার্স থেকে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ- টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে এই চিনি ও মসুর ডাল বিক্রি করা হবে। ৯০ হাজার টন সার কেনা হবে :সূত্র জানায়, বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের তিনটি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রস্তাবের আওতায় দেশের কৃষি খাতে ব্যবহারের জন্য ৬০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া এবং ৩০ হাজার মেট্রিক টন রক ফসফেট আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৩৩৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতার এনার্জি মার্কেটিং থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড প্রিল্ড ইউরিয়া সার কেনা হবে। এতে ব্যয় হবে ১৩৩ কোটি আট লাখ ১২ হাজার টাকা। এ ছাড়া সৌদি আরব থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৩ কোটি ২৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া চট্টগ্রামের টিএসপিসিএল-এর জন্য ৩০ হাজার মেট্রিক টন রক ফসফেট (৭০% বিপিএল মিনিমাম) আমদানি করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৮২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। দুটি মহাসড়কের পূর্ত কাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ সূত্র জানায়, দুটি প্যাকেজে 'সাতক্ষীরা-সখিপুর-কালীগঞ্জ এবং কালীগঞ্জ-শ্যামনগর-ভেটখালী মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ'-এর ক্রয় প্রস্তাব পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের (পুনঃটেন্ডার) উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ। পৃথক দুটি প্যাকেজে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩১ কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৮৬১ টাকা। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এই দুটি প্যাকেজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্যাকেজ দুটি হচ্ছে- 'সাতক্ষীরা-সখিপুর-কালীগঞ্জ এবং কালীগঞ্জ-শ্যামনগর-ভেটখালী মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ'-প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর-ডবিস্নউপি-০৪ এর পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবের পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ' ও 'সাতক্ষীরা-সখিপুর-কালীগঞ্জ এবং কালীগঞ্জ-শ্যামনগর-ভেটখালী মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ'-প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর-ডবিস্নউপি-০৬ এর পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাব পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ। প্রকল্পি দুটি একনেক কর্তৃক ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর তারিখ অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। দুই জেলায় ১১১টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জে ৫৬টি ও কুড়িগ্রামে ৫৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে ঠিকাদার ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের চারটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ৩০ কোটি ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৬৮৯ টাকা। অনুমোদিত প্রস্তাবের মধ্যে 'রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর অ্যাডাপটেশন অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি রিডাকশন' প্রকল্পের আওতায় সুনামগঞ্জ জেলায় ৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হবে ৪২৮ কোটি ১৬ লাখ ১৯ হাজার ১৯৭ টাকা। 'রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর অ্যাডাপটেশন অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি রিডাকশন' প্রকল্পের আওতায় কুড়িগ্রাম জেলায় ৫৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩৮১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৫ হাজার ৬১৬ টাকা। বাকি টাকা অন্য দুটি পৃথক প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে ব্যয় হবে।