জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে গণহত্যার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক দুই মন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল। বুধবার সকাল ১০টার দিকে তাদেরকে ট্রাইবু্যনালে হাজির করা হয়।
ট্রাইবু্যনালের প্রসিকিউটর এমএইচ তামিম জানিয়েছেন, এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ১৭ ডিসেম্বর তারিখ ঠিক করেছেন আদালত। ওইদিন দু'জনকে ট্রাইবু্যনালে হাজির করতে হবে।
প্রসিকিউটর আব্দুলস্নাহ আল নোমান আগেই জানিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের ০৩/২০২৪ নম্বর মামলার পরোয়ানায় কামরুল ইসলাম এবং আমির হোসেন আমুকে আগামী ৪ ডিসেম্বর ট্রাইবু্যনালে হাজির করা হবে।
গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনের চেষ্টায় 'গণহত্যার' দুই অভিযোগে গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল।
অন্যদিকে যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হোসেনকেও গণহত্যার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল। আবুল হোসেনের মামলার শুনানির জন্য আগামী ১২ ডিসেম্বর দিন ঠিক করেছে ট্রাইবু্যনাল।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দলটির অন্য নেতাদের মতো ১৪ দলের সমন্বয়ক ও সাবেক মন্ত্রী আমুরও কোনো হদিস ছিল না।
ওইদিন শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দ্বাদশ সংসদের ঝালকাঠিতে আমুর বাসবভনে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।
পরে তার ওই বাসভবন থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকার দেশি-বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর গত ১৪ আগস্ট ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। সরকার পতনের পর তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়েছে।
গত ৬ নভেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে আমির হোসেন আমুকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন তার ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম উত্তরায় গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেপ্তার হন গত ১৮ নভেম্বর।
\হবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় কয়েকটি মামলায় সাবেক ঢাকা ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল ইসলামকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ওয়াদুদ হত্যা মামলায় আদালত তাকে রিমান্ডেও পাঠিয়েছিল। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এক সময়ের প্রভাবশালী এই নেতা ২০০৮ নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়ে সংসদে আসেন। এরপর থেকে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ পর্যন্ত টানা চারবার জয়ী হন।
নবম সংসদে জয়ের পর ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় তিনি আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এই সদস্য সরকারের পরের মেয়াদে ২০১৪ সালে খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তবে পরের দুই মেয়াদের মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি।
ছাত্র জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুলের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। তার বিরুদ্ধে দুদকে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, নিজ নামে ও সন্তানদের নামে দেশে বিদেশে অঢেল সম্পদ গড়েছেন তিনি। আইন প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে নিম্ন আদালতে অধিকাংশ কর্মচারীর নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে ব্রাজিল থেকে নিম্নমানের গম ক্রয় করে সরকারি কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
আরও মামলায় গ্রেপ্তার
আনিসুল, ইনু, মেনন
এদিকে, পৃথক মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত বুধবার সকালে এই আদেশ দেন।
গ্রেপ্তার দেখানো অপর দুজন হলেন সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান।
এদিন সকাল সাড়ে ৭টার পর চারজনকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে হাজির করা হয়। সকাল ৯টার দিকে তাদের আদালতের এজলাসকক্ষে তোলা হয়।
শাহবাগ থানায় দায়ের করা খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা মামলায় আনিসুল হক, হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। আদালত এই আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল রাজধানীর বাংলামোটরে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা হয়। এ ঘটনায় খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা কর্মকর্তা সামিউল হক বাদী হয়ে গত ২৩ নভেম্বর শাহবাগ থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক মুখ্যসচিব নজিবুর রহমানকে বিএনপির কর্মী মকবুল হত্যা মামলায় আজ গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গত ১৩ আগস্ট গ্রেপ্তার হন আনিসুল হক। তাঁর বিরুদ্ধে ৫৫টি মামলা হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় তাঁর মোট ৪৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। ২২ আগস্ট গ্রেপ্তার হন রাশেদ খান মেনন। চার মামলায় তাঁর মোট ২১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। ২৬ আগস্ট গ্রেপ্তার হন হাসানুল হক ইনু। পাঁচ মামলায় তাঁর মোট ২৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।
সাবেক সচিব নজিবুর রহমান ৭ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন। একটি হত্যা মামলায় তাঁর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।