দেশের মানুষ স্বৈরাচারকে দেশ থেকে বিদায় করেছে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমরা দেশ স্বৈরাচারমুক্ত করেছি। এখন সামনের দিনে দেশ গড়ার পালা। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার পালা। আমাদের শুধু মেধাবী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার থাকলেই চলবে না, মেধা দিয়ে পেশাদার খেলোয়াড়ও তৈরি করতে হবে। বৃহস্পতিবার বিকালে লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ী শহীদ আবুল কাশেম মহাবিদ্যালয় মাঠে শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত খেলা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। তারেক রহমান বলেন, 'বাংলাদেশে বহু মেধাবী ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার আছেন। আমি এ দেশের সন্তান হিসেবে বলতে পারি শুধু মেধাবী ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার গড়ে তুললেই হবে না, মেধা দিয়ে দক্ষ পেশাদার খেলোয়াড় ও সংস্কৃতিকর্মীও গড়ে তুলতে হবে আমাদের প্রজন্ম থেকে। আমাদের সমাজের গঠনই এমন যে লেখাপড়া করে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। মূলত যার যে বিষয়ে মেধা ভালো তাকে সে বিষয়ে দক্ষ করে জাতীয় তথা আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে হবে।' বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, 'শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালে নতুন কুড়ি নামে একটি অনুষ্ঠান চালু ছিল। যার লক্ষ্য ছিল, বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিভাবানদের খুঁজে বের করা। আগামীতে বিএনপি সরকার গঠনে সক্ষম হলে এমন প্রতিভাবানদের খুঁজে বের করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তোলা হবে। খেলার ক্ষেত্রে দেশের ভালো মানের ১০টি খেলা বাছাই করে সেসব খেলার জন্য দক্ষ খেলোয়াড় গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।' তারেক রহমান বলেন, 'দেশের জনশক্তি ও প্রতিভাবান প্রজন্মকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। যাতে করে আমাদের আগামী প্রজন্ম জাতীয় পর্যায়ে শুধু নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবদান রাখতে পারে। শিশুদের ভবিষ্যৎ গড়তে শিশু একাডেমি গড়ে তুলেছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তারই অবদান আজকের শিশু একাডেমি। আগামী প্রজন্মকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানাই।' এ সময় তিনি তার দলীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, 'এখানে আপনারা আজ যা দেখে গেলেন সেই অনুযায়ী সারাদেশে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।' বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবীব দুলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের লালমনিরহাট অংশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ। ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে : ফখরুল এদিকে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'দেশে পরিকল্পিতভাবে ভয়াবহ অবস্থা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থানকে ভিন্ন দিকে নেওয়া হচ্ছে। ফ্যাসিবাদ পরাজিত হয়েছে। তবে ফ্যাসিবাদ যেকোনো সময় আবার ফিরে আসতে পারে। সেই রাস্তা যেন তৈরি করে না দেই। আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন কতগুলো কাজ করছি, এর মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে।' বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত 'রাষ্ট্র পুনর্গঠনে লেখক-শিল্পীদের ভূমিকা' শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সংকট-সমস্যার উত্তরণে অনৈক্য সৃষ্টি না করে ঐক্যের মাধ্যমে সামনে এগোতে হবে উলেস্নখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এখন লক্ষ্য একটাই হওয়া উচিত, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য যে সংস্কার প্রয়োজন, তা নূ্যনতম করে সে ধরনের একটা রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য নির্বাচনে যাওয়া।' ইসকন প্রসঙ্গে ভারতের গণমাধ্যম থেকে তাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'তাদের একটাই প্রশ্ন, ইসকনের ব্যাপারে কী করছেন। প্রশ্নটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একটা অবস্থা তারা তৈরি করতে চায়। প্রথমবার ব্যর্থ হয়েছে। আবার তারা তৈরি করতে চায়। আমরা যেন সেখানে বিভাজন তৈরি না করি।' তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনারা দায়িত্বে এসেছেন। এ দায়িত্বকে দায়িত্বশীলভাবে পালন করতে হবে। জাতিকে সামনে রেখে পালন করতে হবে। এমন কোনো হঠকারী করব না যেন আবার অন্ধকারে চলে যাই। অনেকে বলছেন নির্বাচনই তো গণতন্ত্র নয়। অবশ্যই তা নয়। কিন্তু তার জন্য তো একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।' বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, 'ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, এই নির্বাচনে বিজয় হতে হবে। তা না হলে গাট্টি বুস্কা নিয়ে বিদেশে যেতে হবে কিংবা জেলের ভাত খেতে হবে। সুতরাং তারা বুঝেছে যে, বাঘের পিঠে চড়ছি- নামা ওত সহজ না, ওর জন্য কোনো উপায় নেই, তাদের জীবন-মরণ সমস্যা হয়ে গেছে এবং তার জন্য দেশ ধ্বংস হোক সেটাতে তাদের আপত্তি ছিল না।' নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, 'রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে যদি পরিবর্তন না হয় তাহলে কোনো সংস্কার টিকবে না।' বাংলাদেশের বিপস্নবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, 'চট্টগ্রামের ঘটনা একটা উসকানি ছিল। একটা ধর্মের নামে, সম্প্রদায়ের নামে ধর্মীয় দাঙ্গা বাধানোর জন্য, একটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর জন্য অনেকে অপেক্ষা করছিল।' গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, 'পরিষ্কারভাবে এ দেশে একটি এমন এক ধরনের সংঘাতের উসকানি তৈরি করা হচ্ছে, যাতে করে বাংলাদেশ তথা দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ে।' লেখক ও অধ্যাপক সলিমুলস্নাহ খান বলেন, 'চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গার কর্মকান্ডে দেশে একটা অশনিসংকেত দেখা যাচ্ছে।' জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক মোহন রায়হানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান প্রমুখ। চিন্ময়ের গ্রেপ্তারে কাঁদছেন হাসিনা :রিজভী এদিকে, রাবি প্রতিনিধি জানান, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, 'চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেপ্তারের ঘটনায় শেখ হাসিনা কুমিরের কান্না কাঁদছেন। এই কান্না ভারতের কাছ থেকে পুরস্কার লাভের আশায়। দেশের প্রচলিত আইনেই চিন্ময় গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ঘটনায় ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর বিবৃতি দিলেও যুবলীগ, ছাত্রলীগের হামলায় বিশ্বজিৎ হত্যার সময় ভারতের কোনো মায়া-দয়া দেখলাম না।' বৃহস্পতিবার বিকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে ঐতিহাসিক ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপস্নব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় 'ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর ১৯৭৫ জাতীয় বিপস্নব ও সংহতি দিবসের মহানায়ক জিয়াউর রহমান' গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রফিকুল ইসলাম। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, 'আমাদের সংগঠনের ৩৮টি টিম ২১ শতকের সময় উপযোগী ছাত্ররাজনীতি হিসাবে কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকটসহ কীভাবে শিক্ষার্থীরা আগামীতে ভালো করতে পারে, এ জন্য কাজ করছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।' অনুষ্ঠানে নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহা. হাছানাত আলী, বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের শিক্ষকরাসহ শাখা ছাত্রদল এবং রাজশাহী মহানগরীরের বিএনপির ৫ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।