সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক

টিসিবি পণ্য পাবেন ১০ লাখ পোশাকশ্রমিক

কেনা হবে ৫০ হাজার টন গম ও ৬০ হাজার টন ইউরিয়া, ইংল্যান্ড থেকে আনা হবে ১৫ লাখ পাসপোর্ট বুকলেট ও ১৫ লাখ লেমিনেশন ফয়েল

প্রকাশ | ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ডধারী এক কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য বড় অঙ্কের সয়াবিন তেল, মসুর ডাল ও চিনি কিনছে সরকার। স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে এসব পণ্য কিনতে পাঁচ ক্রয়প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৫১৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। বুধবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এসব ক্রয়প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে গার্মেন্ট শ্রমিক পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রির নীতিগত অনুমোদনের পাশাপাশি সুরক্ষা সেবা বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি করে এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের দুটি ক্রয়প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চারটি ক্রয়প্রস্তাবে ব্যয় হবে ৭৪৮ কোটি ১৯ লাখের বেশি। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই তেল কেনা হবে ৯১ কোটি ৩০ লাখ টাকা দিয়ে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের ক্রয় মূল্য ধরা হয়েছে ১৬৬ টাকা। ২০২৫ সালে পবিত্র রমজান মাসে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী এক কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিনি কেনার দুটি পৃথক প্রস্তাব নিয়ে আসা হয়। দুটি প্রস্তাবেই অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এর মধ্যে একটি প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১১৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। প্রতি কেজি চিনির ক্রয় মূল্য ধরা হয়েছে ১১৬ টাকা ৮৫ পয়সা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিনি কেনার আর এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আরও ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এই চিনি কিনতে ব্যয় হবে ১১৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এই চিনিও ২০২৫ সালে পবিত্র রমজান মাস বিক্রি করা হবে। সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আর এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। ৯৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা দিয়ে এই মসুর ডাল কেনা হবে। প্রতি কেজি মসুর ডালের মূল্য ধরা হয়েছে ৯৭ টাকা ৯৭ পয়সা। সূত্রটি জানিয়েছে, সভায় নির্ধারিত এজেন্ডার বাহিরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি সেই প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে। এই মসুর ডাল কেনা হবে ৯৭ টাকা ২২ পয়সা কেজি দরে। এতে মোট ব্যয় হবে ৯৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। টিসিবি পণ্য পাবেন ১০ লাখ পোশাকশ্রমিক :সূত্র জানায়, টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী যে এক কোটি পরিবার রয়েছে, এর বাইরে আরও ১০ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিক এই সেবায় যুক্ত হচ্ছেন। এসব পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি করবে সরকার। এই কার্যক্রম চালাতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এর ফলে টিসিবির পরবর্তী পণ্য বিক্রির কার্যক্রমে ভোক্তা হিসেবে গার্মেন্ট শ্রমিকরাও যুক্ত হবেন বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের ডিওর ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টঙ্গী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, সাভারসহ ঢাকার কাছাকাছি শিল্পাঞ্চলের গার্মেন্ট শ্রমিকদের মধ্যে টিসিবির নির্ধারিত এই পণ্য ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করা হবে। কর্মকর্তারা বলেছেন, ১০ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিকদের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে চিনি, ভোজ্যতেল ও মসুর ডাল বিক্রি বাবদ মাসিক সম্ভাব্য ব্যয় হবে ৩১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আর প্রতি মাসে খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রায় পাঁচ হাজার মেট্রিক টন চালের প্রয়োজন হবে। সুইজারল্যান্ড থেকে কেনা হচ্ছে ৫০ হাজার টন গম বৈঠক সূত্র জানায়, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরে সুইজারল্যান্ড থেকে আরও ৫০ হাজার টন গম কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১৭১ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বৈঠকের নির্ধারিত প্রস্তাবের বাইরে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ হাজার টন গম আমদানির একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি আলোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে। ইংল্যান্ড থেকে আনা হবে পাসপোর্ট বুকলেট-লেমিনেশন ফয়েল বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত প্রস্তাবের বাইরে সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে পাসপোর্ট বুকলেট ও লেমিনেশন ফয়েল ক্রয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি আলোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) ইংল্যান্ড থেকে ১৫ লাখ পাসপোর্ট বুকলেট এবং ১৫ লাখ লেমিনেশন ফয়েল আনা হবে। এতে ব্যয় হবে ৬১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ ছাড়া সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) অষ্টম শ্রেণি, দাখিল অষ্টম শ্রেণি ও কারিগরি অষ্টম শ্রেণির বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১০২টি লটে ৭৬টি প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ কোটি ২০ লাখ ৫৪ হাজার ২৭৬ কপি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করা হবে। এতে ব্যয় হবে ২৬৯ কোটি ৬৯ লাখ ১৯ হাজার ৫৬৭ টাকা। ৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ৬০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই ইউরিয়া সার কিনতে ব্যয় হবে ২৪৫ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কাফকোর কাছ থেকে অষ্টম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) এই সার কিনবে। এতে ব্যয় হবে ১২০ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের পরিকল্পনা মোতাবেক কাফকো থেকে ৫.৪০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কেনার সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে অষ্টম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের জন্য প্রাইস অফার পাঠানোর অনুরোধ করা হলে কাফকো প্রাইস অফার পাঠায়। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক সারের মূল্য নির্ধারণ করে অষ্টম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মেট্রিক টন ৩৩৫.৬২৫ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট এক কোটি ৬৮ হাজার ৭৫০ মার্কিন ডলারে কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১২০ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠক সাবিক এগ্রো-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন এই সার কিনবে। এতে ব্যয় হবে ১২৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ জুন অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের প্রেক্ষিতে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে সৌদি আরবের সাবিক এগ্রো-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে পাঁচ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সাবিক এগ্রো-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি অনুসারে সারের মূল্য নির্ধারণ করে দশম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতি মেট্রিক টন ৩৪৬.৭৫ মার্কিন ডলার হিসাবে এতে মোট ব্যয় হবে এক কোটি চার লাখ দুই হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১২৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।