বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

অরাজকতা কঠোর হস্তে মোকাবিলার পক্ষে বিএনপি

প্রকাশ | ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বিভিন্ন দাবি-ধাওয়া নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অরাজক পরিস্থিতির উন্নতি চায় বিএনপি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার যাতে কঠোর হস্তে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে তার পক্ষে দলটি। কারণ বিএনপি মনে করছে, 'পতিত' স্বৈরাচারের পতন হলেও তাদের দোসররা এখনো প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় ঘাপটি মেরে বসে আছে। তারাই এই ধরনের চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত। চক্রান্তের বিরুদ্ধে শিগগিরই কর্মসূচি দেয়ারও পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ইসু্যতে ঢাকায় একটি বিক্ষোভ সমাবেশ দিতে পারে দলটি। বিদ্যমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে তারা যে উদ্বিগ্ন, সেটি অবহিত করতে শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করবে। সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে বিএনপির লিখিত প্রস্তাব চূড়ান্তকরণ নিয়ে স্থায়ী কমিটির তিন নেতা বিতন্ডায় জড়ান। শেষ পর্যন্ত কয়েকটি বিষয় সংশোধনে এনে ওই প্রস্তব পাস করা হয়। মঙ্গলবার সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে লিখিত প্রস্তাব জমা দেয় দলটি। সাম্প্রতিকালের নৈরাজ্যের বিষয়ে বিএনপির বিশ্লেষণ হচ্ছে, সরকার শুরু থেকে নৈরাজ্যের বিষয়ে কঠোর ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে তাদের নমনীয়তা বর্তমান নৈরাজ্যের অন্যতম কারণ। এ ধরনের চক্রান্ত ও সহিংস অবস্থা তৈরি হতে পারে- এমন শঙ্কা থাকার পরও সরকারকে শক্ত হাতে দমন করেনি। ফলে এখন একটি বিপর্যকর অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাদের আরও পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছিল। কিন্তু সরকার তা সেভাবে আমলে নেয়নি। প্রশাসনে এখন আওয়ামী লীগের লোকেরা 'শক্ত' অবস্থানে আছে। নেতাদের মতে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের 'দোসরদের' গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসিয়ে রাখলে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে তা নিয়ে বারবার সতর্ক করা হয়েছিল। স্থায়ী কমিটির বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে কমিটির কোনো নেতা নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নেতা বলেন, সরকার সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে মনোনিবেশ করে নির্বাচনের রোডম্যাপ দিলে পরিস্থিতি এ রকম হতো না। নির্বাচন দিতে যত দেরি হবে এ ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ততই বাড়বে। এমন বাস্তবতায় বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দ্রম্নত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এবং পরিস্থিতি উত্তরণে কী করা উচিত সে বিষয়ে বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের কিছু পরামর্শ তুলে ধরবে। \হবৈঠক সূত্র জানায়, আলোচনার শুরুতে সংবিধান সংস্কার নিয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। তার প্রস্তুত করা প্রস্তাব পাস করতে চাইলে কমিটির দুইজন জ্যৈষ্ঠ সদস্য আপত্তি জানান। তারা প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে তারপর পাস করার পরামর্শ দেন। এ সময় সালাহ উদ্দিন আহমদ কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই তা পাস করার কথা বললে বিতর্কে জড়ান তিন নেতা। দুইজন সদস্য বলেন, আলোচনা ছাড়াই যদি প্রস্তাব পাস করতে হয় তাহলে উত্থাপনের কী দরকার ছিল? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বলেন, সাধারণত কোনো প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে তার ওপর অন্য সদস্যদের মতামতের পর সংযোগ-বিয়োজন করে তা পাস করা হয়। কিন্তু সালাহ উদ্দিন প্রস্তাব তৈরি করে তা পাস করতে চাওয়াতে অন্যরা তাতে অষন্তুষ্ট হন। তর্কের এক পর্যায়ে সালাহ উদ্দিন ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, তাহলে তাকে আর বৈঠকে যেন ডাকা না হয়। তার এই ধরনের মনোভাবে অন্য সদস্যরা বিরক্ত প্রকাশ করেন বলে জানান এক নেতা। তিন নেতার বিতর্কের সময় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিশ্চুপ ছিলেন। পরে অবশ্যই কিছু আলোচনার পর কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনী এনে প্রস্তাব পাস করা হয়।