শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২
মোলস্না কলেজে হামলা লুটপাটে ক্ষতি ৭০ কোটি, দাবি অধ্যক্ষের

মৃতু্যর দায় হাসপাতালের ওপর চাপানো ভিত্তিহীন :কর্তৃপক্ষ

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
মৃতু্যর দায় হাসপাতালের ওপর চাপানো ভিত্তিহীন :কর্তৃপক্ষ

ঢাকার মাতুয়াইলের ড. মাহবুবুর রহমান মোলস্না কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিক্ষার্থী অভিজিৎ হালদারের মৃতু্যর দায় ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের ওপর চাপানো ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। এদিকে, মোলস্না কলেজে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় ৭০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ।

মঙ্গলবার অভিজিত নামে এক শিক্ষার্থীর মৃতু্যকে কেন্দ্র করে মোলস্না কলেজ ও পরে কয়েকটি হাসপাতালে হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত পৃথক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ইফফাত আরা ও ড. মাহবুবুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ ওবায়দুলস্নাহ নয়ন এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের পরিচালক বলেন, 'অভিজিতের মৃতু্যর রাতে মোলস্না কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বিষয়টি ৯০ ভাগ সমাধান হয়। তারপরও বিষয়টি তার পরিবার এবং শিক্ষার্থীরা অন্যদের জানানোয় এমন ঘটনা ঘটেছে।'

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, 'সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের খবর থেকে প্রতীয়মান হয়, কোনো কোনো কুচক্রী মহল হাসপাতালের ওপর মিথ্যা দায়ভার দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। রোগীর মৃতু্য হলেই ভুল চিকিৎসা, দায়িত্বে অবহেলা বলে চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতদের লাঞ্ছিত করা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।'

ইফফাত আরা বলেন, 'হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা সেবার সুস্থ পরিবেশ বিনষ্ট করা, হাসপাতালের সব স্তরের চিকিৎসক নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জিম্মি করে হাসপাতাল ও কলেজ ভবনের ব্যাপক ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করা, অসুস্থ রোগীদের মাঝে ভীতি সঞ্চার করার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।'

ন্যাশনাল কলেজে হামলায় দশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে ইফফাত আরা বলেন, 'ডা. মাহবুবুর রহমান মোলস্না কলেজের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বিভিন্ন কলেজের প্রায় ১০০০ থেকে ১৫০০ শিক্ষার্থী হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয়, বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ, দন্ত বিভাগ ও প্যাথলজি বিভাগে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এছাড়া ক্যাশ কাউন্টারে ভাঙচুর করে নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। হাসপাতালের অভ্যন্তরে দেশি-বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী, সাধারণ রোগী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আর্থিক সেবায় নিয়োজিত পূবালী ব্যাংকের শাখায় ব্যাপক ভাঙচুর করে।'

সংবাদ সম্মেলনে দশ হাজার টাকার বিনিময়ে মৃতু্যর বিষয়টি ধামাচাপার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কলেজের উপ-পরিচালক ডা. মো. রেজাউল হক বলেন, 'আমরা নিহতের পরিবারের অনুরোধে তাদের আইসিইউ বিল ৩৬ হাজার টাকা স্থগিত রাখি। তার পরিবারের কাছে অ্যাম্বুলেন্স বিল ছিল না। সেটার জন্য আমরা ১০ হাজার টাকা দিতে যাই। পরে তারা আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম কর্তৃপক্ষের থেকে অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করতে সক্ষম হয়। আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন, দশ হাজার টাকা দিয়ে কি মৃতু্যর ঘটনা চাপা দেওয়া সম্ভব?'

রোগীর মেডিকেল টেস্টের রিপোর্ট না দেখানো, আইসিইউতে ভর্তি ও ডেথ সার্টিফিকেটে জোর করে পরিবারের কাছ থেকে সই নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, 'রাতে আমাদের হাসপাতালে সিনিয়র কেউ থাকে না। সিকিউরিটি ইনচার্জ ও ইমার্জেন্সি ডাক্তার থাকে। তাদের (মোলস্না কলেজ) স্টুডেন্টরা যখন আসে তখন আমরা হাসপাতালে ছিলাম না। পরে আমরা আসি। আমরাই জিম্মি ছিলাম। পরে পুলিশ, আর্মির সাহায্যে রক্ষা পাই।'

ন্যাশনাল মেডিকেল ও ডা. মোলস্না কলেজের শিক্ষার্থীদের বচসায় সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের জড়িতের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, 'অভিজিতের মারা যাওয়ার ঘটনায় তার কলেজের ৩০/৪০ জন হাসপাতালে আসে। তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনাও হয়। সোহরাওয়ার্দী ও নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এসেছিল তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করতে। তখন তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এটা আমাদের ক্যাম্পাসের বাইরের ঘটনা। আমরা তাদের ডাকিনি।'

এদিকে অভিজিতের মৃতু্যর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও ডাক্তারের অব্যাহতির বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেন, 'আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করি। সেখানে ডা. মোলস্না কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি রাখার জন্য বলা হয়। তাদের বলা হয় দেশের যেকোনো জায়গায় একজন রেজিস্টার্ড ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞ রাখার জন্য। তারা দুদিন পার হলেও তাদের প্রতিনিধি দেওয়ার বিষয়ে কিছু জানায়নি। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কর্তব্যরত ডাক্তার শেফাকে কর্ম থেকে বিরত থাকতে বলেছি।'

একজন চিকিৎসক গণমাধ্যমকর্মীকে হুমকি দিতে পারেন কি না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিক ইমরান। ন্যাশনাল হাসপাতালের সঙ্গে মাহাবুবুর রহমান কলেজের সংঘর্ষে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ কীভাবে জড়িত হলো প্রশ্ন করেন যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক রাব্বি সিদ্দিকী। কিন্তু প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে সব সাংবাদিক সংবাদ সম্মেলন ত্যাগ করেন।

এ ঘটনার পরপরই ঢাকা ন্যাশনাল হাসপাতালের শিক্ষার্থী ও ডাক্তাররা সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপালসহ শিক্ষক, ডাক্তার ও শিক্ষার্থীরা এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, মঙ্গলবার বেলা ১২টায় কলেজের সামনে ড. মাহবুবুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ ওবায়দুলস্নাহ নয়ন দাবি করেন, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তাদের আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

তিনি বলেন, 'এ ধরনের হামলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীরই নিজের প্রতিষ্ঠান মনে করতে হবে। কিন্তু দেশে যে ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি হচ্ছে- এটা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানাই, দেশকে বাঁচিয়ে রাখি। আজকে যে অপূরণীয় ক্ষতি হলো তা বলার মতো নয়।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে