মণিরামপুরে সন্ত্রাসী হামলায় পন্ড বাউল শিল্পীদের অনুষ্ঠান

প্রকাশ | ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
যশোরের মণিরামপুরে সন্ত্রাসী হামলায় পন্ড হয়ে গেছে বাউল শিল্পীদের দুই দিনব্যাপী সাধু সংঘের বাউল গানের আসর। সোমবার দুপুরে মণিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের পাড়দিয়া গ্রামের এই অনুষ্ঠানে হামলা চালায় স্থানীয় যুবদল ও ছাত্রদলের তিনজন নেতাকর্মী। ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী পরিবারসহ সাধু সংঘে আগত বাউল শিল্পীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা জানান, গত এক যুগ ধরে নিজ বাড়িতে এই অঞ্চলের বাউল শিল্পীদের নিয়ে উৎসবের আয়োজন করে আসছেন এসএম ফজলুর রহমান ওরফে মন্টু বাউল। মন্টু ফকিরের অভিযোগ, রোববার স্থানীয় বিএনপি নেতা ফারুক হোসেন তাকে সাধু সংঘ বন্ধ করতে বলেন। তিনি ওই নেতাকে জানিয়েছিলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে বাউলরা আসতে শুরু করেছেন; হঠাৎ করে বন্ধ করা যাচ্ছে না। তখন বলা হয়, যারা আসছে, তাদের খাওয়া-দাওয়া করিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু সোমবার দুপুরে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি শামিম খাঁ, জগন্নাথ ওরফে জগোসহ তিনজন একটি মোটর সাইকেলে তার বাড়িতে চড়াও হয়। একপর্যায়ে মন্টুর বাড়িতে অবস্থিত লালন ফকিরের নামে লালন আশ্রয় ও বাউলদের আখড়ায় হামলা চালায়। তাদের টিনের বাড়িসহ আখড়ায় দা দিয়ে কোপাতে থাকে। ওই সময় তারা প্যান্ডেলের সামিয়ানা, চেয়ার, হাঁড়ি পাতিল ভাঙচুর করে। তারা আখড়া ঘরে থাকা কাঁথা-বালিশ ফেলে দেয় এবং ঘরে থাকা ৭-৮শ' টাকা লুটে নেয়। ওই সময় তাদের ছেলে বৌয়ের দুটি ছাগল নিয়ে টানাটানি করতে থাকে। এ সময় তাদের নিষেধ করলে তারা টাকা দাবি করে। তখন তিনি একজন প্রতিবেশীর কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা ধার করে তাদের দিলে তারা হুমকি দিয়ে চলে যায়। মন্টু ফকিরের স্ত্রী মনোয়ারা ফকির জানান, 'দুপুরে তিনটি মোটর সাইকেলে আসেন তিনজন। কিছু বলার আগেই লালন ফকিরের ঘরের টিন কোপাতে শুরু করে। ভেতরে প্রবেশ করেই ভাঙচুর করে। এরপর খানকা ঘরেই ভাঙচুর করে। ভেতরে আঁখড়াতে থাকা বিভিন্ন বকশিসের টাকাও নিয়ে যায়।' পরে উঠানে এসে বলে, 'মোটর সাইকেলে বড় রামদা আছে, ওটা নিয়ে আয়। আজ সব কুপিয়ে যাবো।' বাড়িঘর জিনিসপত্র কোপাতে শুরু করলে হাতজোড় করে হাউমাউ করলে তারা বলে, 'কোনো কথা বলবি না। বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দিবো। বোমা মারবো। বাঁচতে হলে টাকা দিতে হবে।' উঠানে থাকা একটি ছাগলও তারা নিয়ে যাচ্ছিল। হাউমাউ করে বাধা দিলে ছাগলের পরিবর্তে তারা টাকা দাবি করে। পরে তিন হাজার টাকা ধার করে হামলাকারীদের দিলে টাকা নিয়ে তারা চলে যায়।' স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর থেকে ফকিরপাড়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। দলবেঁধে তারা ফন্টু ফকিরের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে। খুলনার চুকনগর থেকে সাধু সংঘে অংশ নেওয়া রফিক বাউল জানান, 'গত কয়েক বছর ধরে সাধু সংঘে আসি। এবারও এসে দেখি অনেক সাধু এসেছে। তবে মন্টু ফকিরের বাড়িঘর ভাঙচুর, লালনের ঘর, ফকিরের খানকা ঘরও ভাঙচুর, লুটপাট করা হয়েছে। বাড়িতে আতঙ্কের ছাপ। মনটা খারাপ হয়ে গেল।' যশোর বাউলিয়া সংঘের কয়েকজনকেও এই সাধু সংঘে যোগ দিতে দেখা গেছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ বাউল জানান, 'খুব জমজমাট সাধু সংঘ বসে। বছরের পর বছর উৎসবপূর্ণভাবে খুলনা বিভাগের অনেক সাধুরা আসর জমায়। বাউলরা মুক্ত মনের মানুষ। তারা ধর্ম জাত রাজনীতি বোঝে না। অথচ সন্ত্রাসীদের এই হামলায় পন্ড হয়ে গেল সাধু সংঘের বাউল গান। জড়িতদের দ্রম্নত বিচারের দাবি জানিয়েছেন আগত বাউল শিল্পীরা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হামলাকারীরা। ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি শামিম খাঁ জানান, 'মন্টু ফকিররা বাউল সংঘের নামে গাঁজার ব্যবসা করে। স্থানীয়রা চায় না এই অনুষ্ঠান হোক। আমরা তার বাড়িতে গিয়েছিলাম, তবে কোনো ভাঙচুর করা হয়নি।' এদিকে এই হামলার ঘটনার খবর পেয়ে মণিরামপুর থানা পুলিশসহ যৌথবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তবে থানার ওসি (দায়িত্বরত) পলাশ কুমার বিশ্বাস জানান, এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর ই আলম সাংবাদিকদের বলেন, 'এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'