'তৌহিদি জনতার' হুমকি

নারায়ণগঞ্জের লালন মেলা বন্ধ করলেন আয়োজকরা

প্রকাশ | ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
অবশেষে 'তৌহিদি জনতা'র বাধার মুখে বন্ধ হয়ে গেল নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নরসিংহপুর গ্রামে মরমি সাধক ফকির লালন সাঁই স্মরণে গত ১০ বছর ধরে হয়ে আসা 'সাধুসঙ্গ ও লালন মেলা'। প্রতি বছরের মতো এবারও ২৩ ও ২৪ নভেম্বর দুই দিনব্যাপী মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমি প্রাঙ্গণে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। আয়োজকরা জানিয়েছেন, একটি মহলের অব্যাহত হুমকি ও বাধার মুখে তারা মেলা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। মেলা বন্ধ করেও এখন তারা আতঙ্কে আছেন। মেলার আয়োজক কাশীপুর ইউনিয়নের মধ্য নরসিংহপুর গ্রামে মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ফকির শাহ জালাল বলেন, 'আমার নিজের জমিতে এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে গত ১০ বছর ধরে সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার আয়োজন করছি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লালনভক্তরা এই আয়োজনে আসেন এবং লালনের গান চর্চা করেন। এখানে কোনো ধরনের অসামাজিক কর্মকান্ড হয় না। তবে এবার তৌহিদি জনতার ব্যানারে মেলার কার্যক্রম বন্ধের হুমকি দিয়েছেন ডিআইটি মসজিদের খতিব ও হেফাজত নেতা মাওলানা আব্দুল আউয়াল। এমনকি মেলা বন্ধ না করলে সবকিছু ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। ফোনে ও নানা লোকের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়েছেন। হুমকির মুখে মেলায় আগতরা সবাই চলে গেছেন। এই অবস্থায় বেশ আতঙ্কের মধ্যে আছি।' তিনি বলেন, 'মেলা বন্ধ করে সংক্ষিপ্ত পরিসরের আয়োজনেও জেলা প্রশাসনের অনুমতি মেলেনি।' স্থানীয়রা জানান, অনুষ্ঠানে লালন স্মরণে ভক্তিমূলক গান, লালন সম্পর্কে আলোচনা ও খাবার বিতরণ করা হতো। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লালনভক্তরা যোগ দিতেন। মেলার প্রতিষ্ঠাতা ফকির শাহ জালাল বলেন, 'এই বিষয়টি পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েছি। প্রতি বছর জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে মেলার কার্যক্রম সম্পন্ন করে আসছি। তবে এবার হেফাজত নেতার হুমকির পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লালন মেলার কার্যক্রম পরিচালনা করতে অনুমতি দেওয়া হয়নি।' এর আগে, ১৫ নভেম্বর কাশিপুর ইউনিয়নের মধ্য নরসিংহপুর ঈদগাহ মাঠে 'তৌহিদি জনতা' ব্যানারে এক দল লোক নিয়ে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল লালন মেলা বন্ধের হুমকি দেন। তার সেই হুমকি দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ হুমকির তীব্র নিন্দা জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল বলেন, 'বিভিন্ন সময় ধর্মীয় ইসু্য তুলে তারা বাধা দিয়ে আসছে। এটি অবশ্যই নিন্দনীয় ও অপরাধমূলক কাজ। আর মাওলানা আব্দুল আউয়াল পলাতক গডফাদার শামীম ওসমানের দালাল ছিলেন। তিনি আলোচনায় আসতে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে লালন মেলা বন্ধের হুমকি দিয়েছেন।' নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, 'লালন মেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। আর তৌহিদি জনতার হুমকির বিষয়টি জানা নেই।'