গণবিচ্ছিন্নরা বিপস্নবী কাজ করতে পারে না :রিজভী
প্রকাশ | ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিপস্নবী সরকারের উপদেষ্টার বিপস্নবী চেতনা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো উপদেষ্টা যদি গণবিছিন্ন হয়, তা জনগণের উপকারে কাজে লাগবে না। গণবিচ্ছিন্ন মানুষ কখনোই কল্যাণকামী এবং বিপস্নবী কোনো কাজ করতে পারে না।
শুক্রবার বিকালে নয়াপল্টনে গণ-অভু্যত্থানে রিকশাচালকদের হত্যার প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ সমাবেশটির আয়োজন করে সাধারণ রিকশাচালকরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের নির্বাচন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, 'আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের উদ্দেশে বলতে চাই ব্যাংক বীমায় নির্বাচন করে শ্রমিকরা। কিন্তু গণমাধ্যমে একটি সংবাদ দেখলাম অফিসার কল্যাণ সমিতি নির্বাচন করেছে। সেখানে আওয়ামী লীগের সমর্থিত লোকেরা বিজয়ী হয়েছে। এইটা কী করে সম্ভব? বিগত ১৫ বছরে হয়তো ছাত্রলীগ-যুবলীগ দেখে দেখে অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে, সবকিছু নিয়োগ করা হয়েছে। আবার তারা ইউনিভার্সিটি মতো, ইউনিভার্সিটিতে যেমন সাদা দল আছে, নীল দল আছে তেমনি তারা সেখানে বিভিন্ন সংগঠন করছে সেখানকার অফিসাররা। আমিও ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলাম, আমি কখনোই ব্যাংকের অফিসারদের এমন সংগঠন দেখি নাই। কিন্তু সেখানে নীল দল, সাদা দল কোনো রাজনৈতিক দলের সংগঠন থাকে আমরা জানি না। এইটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।'
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মাঝে মাঝে আন্দোলনের যে স্পিড সেই স্পিড অনুযায়ী কথা বলেন। সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ। কিন্তু আপনার ওখানে কী হচ্ছে, কারা এরা? কারা এখানে এই নির্বাচন করছে? আবার তারা ফলাও করে বলছে তারা নাকি আওয়ামী লীগ সমর্থিত নীল দল সেখানে জিতেছে। ঘাপটি মেরে ব্যাংকের টাকাগুলো পাচারের ক্ষেত্রে এই লোকগুলোই জড়িত আছে। এদেরকে এপয়েনমেন্ট দেওয়া হয়েছে। ১৫-১৬ বছর ধরে তারা এখনো ভেতরে ষড়যন্ত্র করছে। আপনি তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন? এর কারণ কি?'
রিজভী বলেন, 'সালমান এফ রহমান, আজিজ খানসহ যারা আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে। শেখ হাসিনা যাদেরকে আনুকুল্য দিয়েছেন। তারাই আজকে লুটেপুটে, চেটে টাকা পাচার করে কেউ কেউ বিদেশে অবস্থান করছেন। এই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তিনি সুযোগ দিয়েছিলেন তোমরা মারো ধরো, লুটপাট করো কিন্তু আমাকে তোমরা ক্ষমতায় রাখো।'
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আলুর কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা এখনো যদি থাকে তাহলে মানুষের যে বিশ্বাস, যে আস্থা, সেই আস্থা-বিশ্বাস তো কমতে থাকবে। আজকে ডিম, তেল এগুলোর দাম এখনো কয়েকটি কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। সে কোম্পানিগুলোকে আপনারা ধরছেন না কেন? এই সিন্ডিকেটবাজদেরকে আপনারা ধরছেন না কেন? কেন ডিমের দাম এখনো আকাশচুম্বী থাকবে? কেন সয়াবিন তেলের দাম এখনো আকাশচুম্বী থাকবে? এই যে নিম্ন আয়ের মানুষ কৃষক, সিএনজিচালক আগে যেমন ছিল এখনো তাই থাকছে, কেন এই পরিস্থিতি হবে? এখন তো মানুষ একটু সুখের মুখ দেখবে সেই সুখের মুখ এরা যদি না দেখে এই যে গণতান্ত্রিক চেতনা, এই যে আত্মত্যাগ, এই যে রক্তপাত, এই যে তাদের অকাতরে জীবন দেওয়া, এটাতো সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হবে। আর কয়েকটা আপনার সুখে থাকা উপদেষ্টারা এসে বড় বড় কথা বলবে আর তারা নিজের মতো করে যা ইচ্ছা তাই করবে এইটা তো চলতে দেওয়া যায় না।'
বিএনপির এই নেতা বলেন, 'অনেকেই দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিলেন শুধু চাচা, মামা, খালু অথবা ছাত্রজীবনে বিরোধী দলের ছাত্র রাজনীতি করেছেন বলে, যারা ক্যাডার সার্ভিসে এএসপি ছিলেন তারা এএসপিই থেকে গেছেন। তারা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অর্থাৎ ড. ইউনূস সাহেবের সময় তারা হয়তো প্রমোশন পেয়ে একটা জায়গায় আছেন কিন্তু দেখা যাচ্ছে যারা বঞ্চিত ছিল যাদের প্রমোশন হয়নি, পদোন্নতি হয়নি, তাদের উপরই বেশি অ্যাটাক করা হচ্ছে। কোনো কোনো উপদেষ্টা এই জিনিসটা করছে। আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি ছাত্রজীবনে হয়তো ছাত্রদল করেছে কিন্তু সে তো মেধার জোরে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এসেছে। গত ১৫-১৬ বছরে তাদের কোনো পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। এখন তো তাদের একটি জায়গায় থাকার কথা। কিন্তু চুপচাপ ঘাপটি মেরে থাকা আন্দোলন সংগ্রামের কোনো স্পিরিটের সঙ্গে যাদের কোনো সম্পর্ক নাই। আমি শুনি তারা সুশীল সমাজের লোক। তারা হচ্ছেন গুণীজন তাই তাদেরকে উপদেষ্টা করা হয়েছে। এই গুণীজন উপদেষ্টারা তারা তো চাকরিজীবীর মতো কাজ করছে।
আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে জানিয়ে রিজভী আরও বলেন, 'আমি এবং বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ গত ৪-৫ দিন আগে পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলাম। দেখলাম এখনো অনেকেই হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। কারও পিঠের চামড়া খুলে গেছে কারও পা নেই, কেউ কেউ অন্ধ হয়ে গেছেন এদের দাযিত্ব কি রাষ্ট্র নিবে না? এদের দায়িত্ব তো রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।'
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের আব্দুস সালাম, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আরিফুর রহমান তুষার প্রমুখ।