সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক
এক হাজার ৮৬৩ কোটি টাকার ১২ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
কেনা হবে দুই লাখ ৩০ হাজার টন সার ও ৫০ হাজার টন বাসমতী চাল
প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
কর্মপ্রত্যাশী যুবকদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ ফার্ম হিসেবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর উত্থাপিত ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড নিয়োগের অনুমোদনসহ ১২টি পৃথক প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। অনুমোদিত অন্য প্রস্তাবের মধ্যে আছে- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুটি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের তিনটি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের চারটি ও পূর্ত কাজের পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের একটি। এ ছাড়া দেশের খাদ্য মজুত বৃদ্ধি করে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখতে ৫০ হাজার টন বাসমতি সিদ্ধ চাল কেনারও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রস্তাবে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৬২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষিত বেকার যুবক ও যুব নারীদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে 'দেশের ৪৮ জেলায় শিক্ষিত কর্মপ্রত্যাশী যুবদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি' শীর্ষক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ২৮ হাজার ৮০০ জন যুবক ও যুব নারীকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেডকে প্রশিক্ষণ ফার্ম নিয়োগ দিতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে প্রস্তাব নিয়ে আসা হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯৭ কোটি ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ টাকা। উপদেষ্টা কমিটি প্রস্তাবটি অনুমোদন দিয়েছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রম্নয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে এটি শেষ করতে চায়।
দুই লাখ ৩০ হাজার টন সার কেনার সিদ্ধান্ত
বৈঠকে দেশের কৃষি খাতে ব্যবহারের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৩টি এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৪টি প্রস্তাবের বিপরীতে ২ লাখ ৩০ হাজার মে. টন বিভিন্ন ধরনের সার আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সংক্রান্ত ৭টি প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৯শ' কোটি ৮৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
সভায় জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় রাশিয়া থেকে চতুর্থ লটে ৩০ হাজার মে. টন মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি). কানাডা থেকে সপ্তম লটে ৪০ হাজার মে. টন মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি) ও অষ্টম লটে ৪০ হাজার মে. টন মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি) সার আমদানি করা হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রথম লটে কেনা হবে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া।
এ ছাড়া কাতার এনার্জি মার্কেটিং থেকে পঞ্চম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া, সৌদি আরব থেকে অষ্টম লটে ৩০ হাজার মে. টন (১০%+) বাল্ক প্রিল্ড ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ ছাড়া সৌদি আরব থেকে নবম লটে ৩০ হাজার মে. টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিকের বইয়ের অনুমোদন
আগামী ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিতে ৫ কোটি ৩২ লাখ ৫৪ হাজার ৭৬০টি পাঠ্যপুস্তক সংগ্রহ করবে সরকার। পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ (কাগজসহ), বাঁধাই ও সরবরাহে ব্যয় হবে ২৭৬ কোটি ৬৩ লাখ ২৩ হাজার ৭৯০ টাকা। উপদেষ্টা কমিটি এ সংক্রান্ত দুটি পৃথক প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে।
কেনা হবে ৫০ হাজার টন বাসমতি চাল
দেশে খাদ্য মজুত বৃদ্ধি করে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখতে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এসব চাল কেনা হবে। ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মেসার্স এসএইএল অ্যাগ্রি কমোডিটিজ লিমিটেড এসব চাল সরবরাহ করবে। এতে মোট ব্যয় হবে ২৮২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
সভা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে 'অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি'।
পূর্ত কাজের অনুমোদন
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, 'শরীয়তপুর (মনোহরবাজার)-ইব্রাহিমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন' প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডবিস্নউপি-০১ এর পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাব পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের প্যাকেজটির পূর্ত কাজের জন্য এক ধাপ দুই খাম দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে চারটি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে তিনটি দরপত্রদাতাই জিপি পোর্টালে নন-রেসপনসিভ হয়। একমাত্র ওয়াহিদ কন্সট্রাকশন লিমিটেডের ১০৪ কোটি ৮৪ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকার দরপ্রস্তাব রেসপনসিভ বিবেচিত হয়। এ ক্ষেত্রে দরপত্রে প্রতিযোগিতার অভাব পরিলক্ষিত হওয়ায় অধিক সংখ্যক দরদাতার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য টিইসি ও হোপের সুপারিশ বাতিল করে ক্রয় প্রস্তাবটির পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দেয়।