চট্টগ্রামে প্রাথমিকে চাহিদা ৪০ লাখ

বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছানো নিয়ে অনিশ্চয়তা

প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

খোরশেদুল আলম শামীম, চট্টগ্রাম
ডিসেম্বর পেরুলেই নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু। বিগত বছরগুলোতে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে চাহিদার প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বই পৌঁছে যেত শিক্ষা অফিসে। এবার চট্টগ্রামে ৪০ লাখ নতুন বইয়ের চাহিদার বিপরীতে এখনো একটি বইও আসেনি। ফলে নতুন বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীরা নতুন বই হাতে পাবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরুতেই সব বই হাতে পাবে না শিক্ষার্থীরা। দেশের উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পাঠ্যবইয়ে সংযোজন-বিয়োজনসহ মুদ্রণ কার্যাদেশ প্রদানে দেরি হওয়ায় এর মূল কারণ। চট্টগ্রাম জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিগত বছরে সাগরিকা প্রিন্টার্স, অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বইয়ের মুদ্রণ করলেও এবার কোন কোন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তা জানাতে পারেননি কেউ। জানা গেছে, প্রতিবছর সাধারণত জুলাই-আগস্ট থেকে পাঠ্যবই ছাপার কাজ পুরোদমে শুরু হয়। অক্টোবর থেকে শিক্ষা অফিসে চাহিদা অনুসারে বই পৌঁছাতে শুরু করে। এরপরও ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ বই দেওয়া সম্ভব হয় না। এবার নভেম্বরে এসে শুরু হয়েছে বই ছাপার কাজ। যেভাবে কাজ এগোচ্ছে তাতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ছাপার কাজ শেষ করা নিয়ে সংশ্লিষ্টরাও সন্দিহান। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রামের ৪ হাজার ৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮ লাখ ৪৫ হাজার ২৫৮ জন শিক্ষার্থী নতুন বই পাবে। নতুন বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৪০ লাখ ৬৬ হাজার ১৯৪টি। যেখানে গতবার বইয়ের চাহিদা ছিল ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯০টি। তবে গতবারের চেয়ে এবার বইয়ের চাহিদা কমেছে প্রায় ৪ লাখ। যদিও এতো সংখ্যক বইয়ের চাহিদা কমার কারণ নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, চট্টগ্রামের স্কুলগুলোতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় লেখা বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৩০৮টি। যা চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড এবং নগরের পাঁচলাইশ থানা শিক্ষা অফিসের আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা এবং গারো সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মাতৃভাষায় লেখা বই পেয়ে থাকে। কবে নাগাদ চট্টগ্রামে বই আসবে- এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুর রহমান বলেন, 'বই নিয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তেমন কোনো কথা হয়নি। এজন্য সঠিকভাবে বলতেও পারছি না এই মুহূর্তে। অন্যান্য বছর এই সময়ে চাহিদার বেশির ভাগ বই পৌঁছে যেত শিক্ষা অফিসে। যতটুকু জেনেছি এখনো প্রিন্টিংয়ের কাজ চলছে। তবে কবে নাগাদ আসবে তা সঠিক জানা নেই।' এ বিষয়ে ন্যাশনাল কারিকুলাম অ্যান্ড টেক্সটবুক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরী বলেন, 'প্রাথমিকে বই ছাপার কাজ শুরু হয়েছে। আমরা আশাবাদী নতুন বছরের শুরুর দিনে আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছাতে পারবো। কারণ মুদ্রণের সঙ্গে যারা জড়িত তারা দ্রম্নত বই ছাপানোর কাজ শেষ করে দিতে পারবে বলে আমাদের জানিয়েছে। তাদের ক্যাপাসিটি এত হাই। তাই সময়মতো বই বিতরণ নিশ্চিত করতে আমরা আশাবাদী।' এদিকে এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, গত জুন মাসে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বইয়ের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন শিক্ষাক্রম থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। বইতে সামান্য পরিমার্জন শেষে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। আর চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি পুরানো শিক্ষাক্রমে চলছিল। ফলে তাদের বইতে সামান্য পরিমার্জন শেষে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর আগে ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ের চাহিদা চেয়ে জেলা উপজেলা শিক্ষা অফিসে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বইয়ের চাহিদা পাঠানোর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এরপর সেপ্টেম্বরের শেষদিকে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কারিগরি স্তরের পাঠ্যবইয়ের মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। পরবর্তীতে সময়ে অক্টোবরের ৩ তারিখ আবারও দরপত্র আহ্বান করে এনসিটিবি। ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দরপত্রে অংশ নেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর তৃতীয় দফায় গত ১৭ অক্টোবর দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত দরপত্রে অংশ নেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়।