গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে থামছে না শ্রমিক বিক্ষোভ। বুধবারও নগরের জিরানী ও চক্রবর্তী এলাকায় পঞ্চম দিনের মতো চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন হামিম গ্রম্নপের 'দ্যাটস ইট নিট লিমিটেড' ও বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকেরা। এদিকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় সড়কের উভয় পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকদের।
অন্যদিকে নগরের ইন্টারপ্যাক লিমিটেডের প্যাকেজিং কারখানার ভয়াবহ আগুনে আড়াই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মঙ্গলবার রাতে নগরীর বাসন থানার আধেপাশা এলাকায় ওই প্যাকেজিং কারখানায় আগুন লাগে। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস।
বুধবার কারখানার শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো সকাল ৯টা থেকে গাজীপুর মহানগরীর সারাব এলাকার বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা পাশের চক্রবর্তী এলাকায় চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বেক্সিমকোর এক অপারেটর বিলস্নাল হোসেন জানান, 'মঙ্গলবার তাদের আন্দোলনের সময় সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ আজ (বুধবার) বেতন পরিশোধ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। সেই কথা অনুযায়ী তাদের বেতন পরিশোধ করা হয়নি। এ কারণে শ্রমিকেরা সকাল থেকে বিক্ষোভ করছেন। বেতন-ভাতা না পাওয়া পর্যন্ত তারা সড়ক ছাড়বেন না।'
এদিকে জিরানী এলাকায় হামিম গ্রম্নপের 'দ্যাটস ইট নিট লিমিটেড' কারখানার শ্রমিকেরা সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কাজে যাচ্ছিলেন। চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অতিক্রম করার সময় নবীনগরগামী পলাশ পরিবহণের একটি বাস শ্রমিকদের চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে অন্তত ছয় শ্রমিক আহত হন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। এ সময় দুর্ঘটনায় এক নারী শ্রমিক নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকেরা উত্তেজিত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের জিরানী এলাকায় সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি বাসও ভাঙচুর করেন।
শ্রমিকেরা এ সময় দ্যাটস ইট নিট লিমিটেড কারখানার দুই কর্মকর্তার পদত্যাগ, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, হতাহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করাসহ ১২ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে কথা বলে সমাধান করার আশ্বাস দিলে বেলা ১১টার দিকে তারা সড়ক থেকে সরে যান।
দ্যাটস ইট নিট লিমিটেড কারখানার শ্রমিক আবুল হাসান বলেন, 'পলাশ পরিবহণের বাসের চাপায় আমাদের ছয় শ্রমিক আহত হয়েছেন। এ কারণে আমরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছি।'
ওই কারখানার ব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ) আবু সাঈদ বলেন, 'দুর্ঘটনা হয়েছে কারখানার বাইরে। আমাদের তো কোনো সমস্যা দেখছি না। এছাড়া তাদের ১২ দফা দাবির বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।'
কাশিমপুর থানার উপপরিদর্শক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, সকাল ৯টা থেকে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেছেন। এতে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
কাশিমপুর থানার ওসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, দুপুর পৌনে ২টার দিকে পুলিশ ও সেনা সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।
প্যাকেজিং কারখানায় আগুন : ক্ষতি 'আড়াই কোটি'
এদিকে মঙ্গলবার রাতে গাজীপুরের ভোগড়া এলাকায় ইন্টারপ্যাক লিমিটেডের প্যাকেজিং কারখানার ভয়াবহ আগুন প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিস।
ভোগড়া ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার ইকবাল জানান, এ ঘটনায় কারও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। কারখানায় বিভিন্ন ধরনের ছাপার কাজ ও কার্টন তৈরি করা হতো। কারখানাসংলগ্ন একটি 'ট্রান্সফরমারে স্পার্ক' হয়ে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে তা দ্রম্নত কারখানার ভেতরে কাগজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর কাগজ থেকে আগুন ছড়িয়ে যায় পুরো কারখানায়।
তিনি বলেন, 'স্থানীয়রা প্রথমে নিজেদের চেষ্টায় আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। আগুনে নিয়ন্ত্রণে আনতে আনতে কারখানার তৈরি করা মালামাল, মেশিন, কাগজের বোর্ড, লাইনার ও মিডিয়াম পেপার রোলসহ সব মালামাল সম্পূর্ণভাবে পুড়ে গেছে।'
প্যাকেজিং কারখানার জেনারেল ম্যানেজার কাজী ফিরোজ আহমেদ বলেন, 'কারখানায় বিপুল পরিমাণ তৈরি মালামাল রাখা ছিল। বুধবার সেগুলো ডেলিভারি দেওয়ার কথা ছিল আমাদের। সেগুলোসহ মূল্যবান কাগজের বোর্ড, লাইনার পেপার ও মিডিয়াম পেপারের রোল, ছাপা কাজের জন্য মূল্যবান মেশিনারিজও আগুনে পুড়ে গেছে। প্রায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।'