ভারতের আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বিদু্যৎ ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি পুনর্মূল্যায়নে উচ্চ পর্যায়ের অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে এ চুক্তি স্বাক্ষরের আগে যে দর কষাকষি হয়েছিল, তার নথি দাখিলের নির্দেশও দেওয়া হয়। এ ছাড়া এই চুক্তি পুনর্বিবেচনা বা বাতিল করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম।
তিনি বলেন, 'আমাদের বিদু্যৎ বিভাগের সঙ্গে ভারতের আদানি গ্রম্নপের সঙ্গে একটি বিদু্যৎ ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছিল ১৬০০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ ক্রয়ের জন্য। বিশেষজ্ঞ মহল, নাগরিক সমাজ ও দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন সংগঠন থেকে সমালোচনা করে বলা হয়েছে- এটি এক পক্ষীয়, বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী এবং আমাদের জননীতি পরিপন্থি।'
আমরা সরকারকে নোটিস দিয়েছিলাম ওই অসম, অন্যায্য চুক্তিটা যেন পুনর্বিবেচনা বা বাতিল করে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় আমরা রিট করেছি।
আইনজীবী কাইয়ুম বলেন, 'আমরা শুনানি করেছি, রাষ্ট্রপক্ষও শুনানি করেছে। শুনানি শেষে এ চুক্তি পুনর্বিবেচনা বা বাতিল করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছে কোর্ট।'
তিনি বলেন, একইসঙ্গে তিনটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো- চুক্তিটি স্বাক্ষরের আগে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে যে দরকষাকষি হয়েছিল এ সংক্রান্ত সব 'মিনিটস' আগামী এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে হবে।
আরেকটি হলো- চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করতে হবে, যেখানে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইন বিশেষজ্ঞ থাকবেন, যারা এ চুক্তিতে দেশের স্বার্থবিরোধী কী আছে তা বিশ্লেষণ করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন।
'এছাড়া রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একটি কমিটি করার নির্দেশ দেওয়া হয়- যারা এ চুক্তির যে প্রসেসটা আছে তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবেন।'
২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর বিদু্যৎ বিভাগ ও 'আদানি পাওয়ার'র মধ্যে বিদু্যৎ কেনার চুক্তি হয়। আদানি পাওয়ার হলো বিদু্যৎ-জ্বালানি খাতের আদানি গ্রম্নপের একটি প্রতিষ্ঠান।
চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে বিদু্যৎ দিতে ভারতের ঝাড়খন্ডের গড্ডায় বিদু্যৎকেন্দ্র নির্মাণ করে আদানি পাওয়ার।
আদানির বিদু্যৎ দেশে এনে জাতীয় গ্রিডে যোগ করতে বিশেষ সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ অংশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়ায় দুটি সাবস্টেশন ও অন্যান্য সঞ্চালন স্থাপনা নির্মাণ করেছে বিদু্যৎ সঞ্চালন কোম্পানি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ-পিজিসিবি।
গত বছরের ৯ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা ৩৮ মিনিটে ঝাড়খন্ডের গড্ডা থেকে আদানির বিদু্যৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের বিদু্যৎ বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন শুরু হয়।