বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২
সাভার-আশুলিয়ায় বন্ধ ১২ কারখানা

গাজীপুরে সড়ক অবরোধ করে শ্রমিক বিক্ষোভ

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
গাজীপুরে সড়ক অবরোধ করে শ্রমিক বিক্ষোভ

গাজীপুর মহানগরীর জিরানি ও চক্রবর্তী এলাকায় মঙ্গলবার চতুর্থ দিনের মতো শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। বকেয়া বেতনের দাবিতে সকাল ৮টার দিকে ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড ও বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। যান চলাচল বন্ধ হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় সড়ক ব্যবহারকারীদের। এই সড়ক বন্ধ থাকায় অনেকেই বিকল্প সড়ক দিয়ে যাতায়াত করছেন।

এদিকে, সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুরের জিরানি এলাকার ৪০১ কারখানার মধ্যে ১২টি মঙ্গলবার বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন (বিজিএমই)। এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে অর্থাৎ শ্রম আইনের ১৩/১ ধারায় বন্ধ রাখা হয়েছে চারটি কারখানা। এছাড়া গাজীপুরের কাশিমপুর এবং জিরানি এলাকার বেক্সিমকো গ্রম্নপের বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বাধার কারণে ওই এলাকার ১১টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

জানা যায়, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে পোশাক ও সিরামিক কারখানায় ৪১ হাজার কর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে আরএমজি কারখানার শ্রমিকরা সপ্তাহখানেক ধরেই সড়ক অবরোধ করে গত মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানাচ্ছেন।

অন্যদিকে, জিরানি এলাকার ডরিন ফ্যাক্টরির ১৩ জন স্টাফ ছাঁটাই ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে একই মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন ওই কারখানার শ্রমিকরা। বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকদের অসন্তোষের কারণে সারাবো ও জিরানিসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

বিজিএমইএ জানায়, বেক্সিমকো গ্রম্নপের শ্রমিকরা অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিভিন্ন কারখানায় হামলা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে আরও ১০টি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ডরিন গার্মেন্টস, ডরিন অ্যাপারেলস এবং ডরিন ফ্যাশনে শ্রমিক অসন্তোষ চলছে। এছাড়া সারাবো ও জিরানি এলাকায় আইআরআইএস ফ্যাব্রিক্স, কে এ সি কম্পোজিট, এক্সাকো লিমিটেড, ওয়াই পি গাজীপুর লিমিটেড, হা-মীম গ্রম্নপের দ্যাটস ইট নিটওয়্যার, অটো টেক লিমিটেড এবং উত্তরা নিটওয়্যারের কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এছাড়া আশুলিয়া এলাকায় 'সাদাতিয়া সোয়েটার' নামে একটি কারখানা বন্ধ আছে।

বিজিএমই'র তথ্য বলছে, সংগঠনটির আওতায় থাকা ২ হাজার ৯৩টি কারখানার মধ্যে অক্টোবরে বেতন দেয়নি এমন কারখানার সংখ্যা ১০১টি এবং সেপ্টেম্বরের বেতন হয়নি একটি কারখানায়।

বেক্সিমকো কারখানার আন্দোলনরত শ্রমিক আফজাল হোসেন বলেন, 'গত ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা সঠিক সময়ের বেতন পাচ্ছি না। মাস প্রায় শেষ হয়ে গেলেও এখনো অক্টোবর মাসের বেতন পাইনি। বেতন না পেয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।'

শ্রমিক শামীমা আক্তার বলেন, 'বেতন না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে। বেতন পেলেই আমরা কাজে ফিরব।'

ডরিন ফ্যাশনের অপারেটর আমিনুল বলেন, 'গত ১ নভেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ। গত রোববার খুলে দেওয়া হলেও দুপুরের পর আবার ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। গত সোমবার শ্রমিকরা সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে দেখেন কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার নোটিশ টানানো। আমাদের কারখানায় কোনো সমস্যা হয়নি তার পরেও কেন কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। তাই কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে আমরা বিক্ষোভে নেমেছি।'

এর আগে সোমবার দুপুরে বেক্সিমকো ও ডরিন ফ্যাশন কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ না দেওয়া ও স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে অ্যামাজান নীট নামে একটি পোশাক কারখানা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।

শিল্পাঞ্চল পুলিশ জানায়, শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে কাশিমপুর জিরানি এলাকায় অন্তত দশটি পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

কাশিমপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, 'গত কয়েক দিনের মতো আজও শ্রমিকরা সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। আশপাশের এলাকায় থানা পুলিশ ও শিল্প পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে