নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে :তারেক রহমান

প্রকাশ | ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে মঙ্গলবার বিএনপি আয়োজিত কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তৃতা করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান -স্টার মেইল
'নির্বাচন নিয়ে কোথাও কিছু একটা ষড়যন্ত্র চলছে' মন্তব্য করে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মঙ্গলবার বিকালে 'রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি' শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালায় দেওয়া বক্তৃতায় তিনি নেতাকর্মীদের সতর্ক করে এ আহ্বান জানান। রাজধানীর কাকরাইলে ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে ওই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। তারেক রহমান বলেন, 'আমরা প্রায়ই বলি, ষড়যন্ত্র থেমে যায়নি। আপনারা নিশ্চয়ই গত কয়েক দিনের পত্র-পত্রিকার খবর থেকে বুঝতে পারছেন। কাজেই জনগণকে সচেতন করতে হবে, জনগণকে পাশে রাখতে হবে, জনগণের পাশে থাকতে হবে।' তিনি বলেন, 'জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি যদি নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে কোনো সংস্কারই কাজে লাগবে না। রাজনৈতিক মুক্তি হচ্ছে জনগণের কাছে জবাবদিহি। যার যা ইচ্ছা করে যাবে, সেটা হবে না। সেটা সরকারি দল হোক, বিরোধী দল, এমপি হোক, মন্ত্রি হোক, জনগণের কাছে এর জবাব দিতে হবে। এটি নিশ্চিত করতে হলে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।' কর্মশালায় নেতাকর্মীদের প্রতি নানা নির্দেশনা দেন তারেক রহমান। ৩১ দফা সম্পর্কে তিনি বলেন, 'ভবিষ্যতে দেশ কীভাবে বিএনপি পরিচালনা করতে চায় এগুলো সেই দফা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গার্মেন্টস ও রেমিটেন্স শিল্পের বাইরে নতুন কর্মমুখর সেক্টর তৈরি করার সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। আউটসোর্সিংয়ে অধিকাংশ মানুষ যেন যুক্ত হতে পারে সরকারিভাবে আমরা তা উৎসাহিত করবো।' সংস্কার প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে দেশ ও জাতি নিয়ে চিন্তা করে ২৭ দফা যখন দেওয়া হয়েছিল, তখন দেশের এই বিষয়গুলো নিয়ে কেউ চিন্তা করেনি।' কর্মসংস্থানের বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, দেশে এক কোটির বেশি বেকার রয়েছেন। আমাদের গার্মেন্টস ও রেমিটেন্সের বাইরে নতুন সেক্টর তৈরির সম্ভাবনা সৃষ্টি করার সুযোগ আছে। আমি চেষ্টা করি, অত দ্রম্নত পারবো না। অনেকাংশে সমস্যা কমিয়ে আনতে সক্ষম হবো। রাতারাতি সব হবে না। দেশ সবার, প্রত্যেকের অবস্থান থেকে একটু একটু এগিয়ে আসি। প্রত্যেকে যদি চেষ্টা করি ইনশালস্নাহ ভালো কিছু করতে সক্ষম হবো।' তারেক রহমান আরও বলেন, 'একজন সহকর্মী হিসেবে ও আপনাদের নেতা হিসেবে আমার অনুরোধ দয়া করে আমার নামের সঙ্গে আজকের পর থেকে দেশনায়ক, রাষ্ট্রনায়ক ব্যবহার করবেন না।' প্রশিক্ষণ সভায় জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বক্তব্য রাখেন। মতামত প্রদান করেন ঢাকা বিভাগের নেতাকর্মীরা। সন্দেহ কিন্তু অন্তর্র্বর্তী সরকারের ওপর আসতে শুরু করেছে :ফখরুল এদিকে, পুলিশ প্রশাসন-নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা সংস্কার করে অন্তর্র্বর্তী সরকারকে দ্রম্নত নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, 'সন্দেহ কিন্তু আপনাদের (অন্তর্র্বর্তী সরকার) ওপর আসতে শুরু করেছে। আমরা চাই, সরকার সাফল্য অর্জন করুক, তাদের সাফল্য মানে আমাদের সাফল্য। তারা ব্যর্থ হলে আমরা ব্যর্থ হব। আমরা চাই না, শেখ হাসিনা আবার ফিরে আসুক। আমরা চাই না, আওয়ামী লীগের দুঃশাসন আবার ফিরে আসুক।' রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে মঙ্গলবার ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপস্নব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমাদের প্রায়োরিটি হচ্ছে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করা, গণতন্ত্রের জন্য স্পেস তৈরি করা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই তো আমরা সংস্কারের ৩১ দফা তুলে ধরেছি। এখন নতুন যারা আসছেন তারা একে একজন এক এক কথা বলে যাচ্ছেন। অন্তর্র্বর্তী সরকারে যারা আছেন তারা তো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও নেই। রাজনীতি একটি সায়েন্স, এজন্যই তো বলা হয় পলিটিকাল সায়েন্স। বিএনপি কি ক্ষমতার জন্য নির্বাচনের কথা বলছে? নো। দ্রম্নত নির্বাচন দিলেই দেশের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।' তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'সরকারের ইন্টেলিজেন্সের ভেতরে তথ্য ছিল না? তারা কি এ ব্যবস্থা আগে নিতে পারত না? আসলে সরকার এখনো স্ট্যাবল হতে পারেনি। তাই বলছি, নির্বাচন কমিশন ঠিক করে নির্বাচন দেন, একটি রোডম্যাপ ঘোষণা দেন, কবে কী করবেন জানান। তাহলে মানুষের মনে আস্থা আসবে।' নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'অনেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন, অনেকে বলাবলি করেন এজন্যই কি সংগ্রাম করেছি? এতে করে আমাদের শত্রম্নরা সুযোগ নেবে। সরকার থেকে বিভিন্ন কথা বলা হচ্ছে। তবে আমি বলতে চাই, যে কোনো একদিকে ফোকাস দিন। পুলিশ প্রশাসন-নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা সংস্কার করে দ্রম্নত নির্বাচন দিন। বাকি সংস্কারগুলো নির্বাচিত হয়ে যারা আসবেন তারা করবে।' মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে গার্মেন্টস শিল্প, রেমিট্যান্স, উচ্চ ফলনশীল ধানের সূচনা হয়েছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে। নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করেছিলেন তিনি। কীভাবে আমরা তার অবদান ভুলি? তিনি বিশ্বাস করতেন গণতন্ত্র একমাত্র রাস্তা। দেশকে ধ্বংসকারীরা তাকে হত্যা করল। ইস্পাত কঠিন সময়ে ঐক্যের জায়গায় এক থাকতে হবে বলেও আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএসপিপির আহ্বায়ক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য-সচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় এতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া, ড্যাবের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক, ড্যাবের সভাপতি হারুন আল রশীদ প্রমুখ।