বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

গাজীপুরে ফের শ্রমিক বিক্ষোভ সংঘর্ষ-আগুনে রণক্ষেত্র

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
গাজীপুরে ফের শ্রমিক বিক্ষোভ সংঘর্ষ-আগুনে রণক্ষেত্র
গাজীপুরের পূর্ব কলতাসুতি এলাকার অ্যামাজন নিটওয়্যার নামের কারখানায় সোমবার অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা -সংগৃহীত

গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের একটি কারখানার শ্রমিক বিক্ষোভের মধ্যে অন্য একটি কারখানার শ্রমিকরাও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে অন্য একটি কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেন। সোমবার সকালে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের পানিশাইল-জিরানি বাজার এলাকায় শ্রমিক সংঘর্ষ ও আগুনের ঘটনায় এলাকাটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সকালে বেক্সিমকোর কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভের পাশাপাশি গাজীপুর মহানগরীর পানিশাইল এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা আরেকটি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেছেন। এ সময় শ্রমিক ও এলাকাবাসীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা জিরানি বাজারের পাশে অ্যামাজন নিটওয়্যার নামের একটি কারখানায় অগ্নিসংযোগ করেন।

গাজীপুরের কাশিমপুর ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ আরিফুল ইসলাম বলেন, 'উত্তেজিত শ্রমিকরা সোমবার বেলা পৌনে বারোটার দিকে অ্যামাজন নিটওয়্যার কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেন। তখন ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে বেলা পৌনে ২টার দিকে তা নিয়ন্ত্রণে আনে।'

শ্রমিক, এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত দুই দিনের মতো সোমবারও বেক্সিমকোর শ্রমিকরা সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চক্রবর্তী এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। তখন ওই এলাকার আশপাশের অন্তত ২০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। এর আগে গত ১ নভেম্বর থেকে পানিশাইল এলাকার ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। রোববার কারখানা খুলে দেওয়া হলেও সোমবার দুপুরের পর আবারও ছুটি ঘোষণা করা হয়।

সোমবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় কাজে যোগ দিতে এসে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার নোটিশ দেখতে পান। পরে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে তারা চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কের জিরানি বাজার এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। ওই সময়ে বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরাও বকেয়া বেতনের দাবিতে একই মহাসড়কের কাছাকাছি পৃথক স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে শ্রমিকরা পানিশাইল ও কলতাসুতি এলাকায় ঢুকে এলাকার স্থানীয় লোকজনদের মারধর করেন। এতে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রমিকদের ধাওয়া দেন। বেশ কিছু সময় স্থানীয় ও শ্রমিকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। এ সময় ডরিন ফ্যাশন ও বেক্সিমকোর কিছু শ্রমিক পূর্ব কলতাসুতি এলাকার অ্যামাজন নিটওয়্যার নামের একটি কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেন। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, থানা-পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনেন।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, 'বেক্সিমকো শ্রমিকরা বেতন ছাড়া সড়ক থেকে যেতে চাচ্ছে না। বিষয়টির সমাধান করা উচিত। এখানে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে আশপাশের ২০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।'

গাজীপুর শিল্প পুলিশের এসআই রফিকুল ইসলাম জানান, সোমবার সকাল ৭টা থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চক্রবর্তী মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। শ্রমিকদের অবরোধের কারণে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে উভয় দিকে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। বিকল্প পথে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

এর আগে অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে গত শনিবার সকাল থেকে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করেন বেক্সিমকোর শ্রমিকরা। সারাদিন মহাসড়ক অবরোধ করে রাখার একপর্যায়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা অবরোধ তুলে বাড়ি ফিরে যান। পরে রোববার সকালে তারা জড়ো হয়ে ফের মহাসড়ক অবরোধ করেন।

সোমবার বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঁচ দিন ধরে তাদের বিক্ষোভ চলছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বকেয়া বেতন পাওয়ার কোনো আশ্বাস পাননি। বেতন পরিশোধ না করলে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং বাসায় ফিরবেন না বলেও জানিয়েছেন তারা।

পুলিশের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, 'বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে পোশাক ও সিরামিক কারখানায় ৪১ হাজার কর্মী কাজ করেন। তাদের মধ্যে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে সড়ক অবরোধ করে অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানাচ্ছেন। সোমবারও একই দাবিতে সড়কে নেমেছে তারা। পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সারাবো এলাকার স্থানীয় এক বাসিন্দা বলছিলেন, 'শ্রমিকরা সকাল থেকে 'খুব বেশি' উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। বহিরাগত কাউকে দেখলেই মোবাইল 'ছিনিয়ে' নিয়ে 'ভেঙে' ফেলছে।

শ্রমিক বিক্ষোভের প্রসঙ্গে কথা বলতে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে