শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, বন্ধ সমস্ত কলকারখানা চালু করা হবে। সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনে অসংখ্য শহীদ, গুম হয়ে যাওয়া পরিবার আর নির্যাতিত মানুষের রক্তের ওপর আমরা দাঁড়িয়ে আছি। রক্তের ঋণ তো শোধ করতেই এই নির্যাতিত কৃষক শ্রমজীবী মানুষের কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। এ লক্ষ্যেই কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার।
শনিবার বিকালে পঞ্চগড় চিনিকল ও সকালে দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ চিনিকল পরিদর্শনে এসে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
শিল্প উপদেষ্টা পঞ্চগড়ে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, 'আমরা আপনাদের কাছে এই কথা পৌঁছে দিতে এসেছি যে আমরা কলকারখানা চালু করতে চাই। বন্ধ সমস্ত কলকারখানা আমরা চালুর পাশাপাশি নতুন উদ্যোগও নেওয়া হবে। কালকেই চালু হবে
এমন বক্তব্য আমরা দিতে পারি না। তবে যত দ্রম্নত সম্ভব আমরা করার চেষ্টা করছি। আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি।'
তিনি বলেন, 'আমরা এই দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষের আর্থিক উন্নয়নের চেষ্টা করছি। এই কারণেই এখানে আসা। যেন উত্তর বাংলায় আবারও কাজের পরিবেশ তৈরি হয়। মানুষ যেন তার পেশায় ফিরে যেতে পারে। সুগার মিলের যেসব জায়গা দখল হয়েছে সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ একটি কৃষিভিত্তিক দেশ। কৃষকদের সাপোর্ট দেওয়াই একটা জনসমর্থিত সরকারের কাজ। আমরা চেষ্টা করছি একটার পর একটা বন্ধ কারখানা চালু করার। আমরা যতদূর পারি খুলে দিয়ে যাব। পরে যারা আসবেন তারা এটি চালিয়ে নেবেন। গত সরকারের পার্টনারশিপ পরিকল্পনার পরিণতি এই রক্তাক্ত বাংলাদেশ।'
এ সময় অন্যদের মধ্যে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সচিব আনোয়ার কবীর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম, জেলা প্রশাসক সাবেত আলী, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, কেন্দ্রীয় বিএনপির পলস্নী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদসহ চিনিকলের কর্মকর্তা, কর্মচারী, আখচাষিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ চিনিকল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শিল্প উপদেষ্টা বলেন, 'সব তো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, আমরা চেষ্টা করছি বন্ধ চিনিকলগুলো একটার পর একটা চালু করার। চিনিকলগুলো চালুর পর্যায়ে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার বিষয় আছে। আমরা এর আগে ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলাম। এখন আরও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে। আপনারা জানেন টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে আখচাষির প্রতিনিধিরাও আছেন। যারা আখ চাষ নিয়ে কাজ করেন তারাও আছেন। আমরা চেষ্টা করছি কাজগুলো একটার পর একটা করতে।'
শিল্প উপদেষ্টা বলেন, 'সেতাবগঞ্জ একটা সম্ভাবনাময় জায়গা। এখানকার মিলও বন্ধ করা হয়েছে। আমরা আবার এই চিনিকলটি খোলার চিন্তা করছি।'
চিনিকল পরিদর্শনের আগে উপদেষ্টা মিলের অতিথি ভবনের সামনে মিলের কর্মকর্তা, ছাত্রসমাজ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। সভায় বিএনপি নেতা সাদিক রিয়াজ চৌধুরী পিনাক, মো. নওশাদ আলী, ছাত্র প্রতিনিধি ফয়সাল মোস্তাক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান ডা. লিপিকা ভদ্র, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম, সেতাবগঞ্জের ইউএনও মো. মারুফ হাসান, চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাশার, আহ্বায়ক বদরুদ্দোজা বাপন, সদস্যসচিব ইসমাইল হোসেনসহ এলাকার সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।