নির্বাচনের গাইডলাইন ঘোষণার আহ্বান চরমোনাই পীরের
প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
নির্বাচনের সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরিতে করার জন্য সময়সীমা ঠিক করে একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন ঘোষণা করতে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
শনিবার রাজধানীর পুরানো পল্টন ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অন্তর্র্বর্তী সরকারের ১০০ দিনের কার্যক্রম ও দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আহ্বান জানান।
রেজাউল করিম বলেন, অন্তর্র্বর্তী সরকারের কাছে একটি নির্বাচনী পরিকল্পনা ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। কারণ অনিশ্চয়তা ও শূন্যতা নানা ধরনের জটিলতার জন্ম দেয়। তা রোধ করার জন্য নির্বাচনের সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরিতে করণীয় নির্ধারণ, তার জন্য সময়সীমা ঠিক করে একটি
সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন ঘোষণা করা হলে সকলের জন্য কাজ করা সহজ হবে।
তিনি বলেন, বিপস্নবে অংশ নেয়া সকল রাজনৈতিক দল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সমন্বয়ে 'জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ' গঠন করা প্রয়োজন। কারণ সংবিধানসহ রাষ্ট্রীয় নানা ক্ষেত্রে সংস্কার, বৈদেশিক সম্পর্ক নির্মাণ, স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের বিচারসহ জাতির সামনে করণীয় কাজের গুরুত্ব বিবেচনায় একটি সাধারণ রাজনৈতিক ঐকমত্য জরুরি। আর সেজন্য বিদ্যমান আইনের আওতায় বিপস্নবের অংশীদারদের সমন্বয়ে 'জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ' গঠন করা যেতে পারে, যা বহু জটিলতা থেকে উদ্ধার করবে এবং জরুরি বিষয়গুলোতে সাধারণ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা সহজ হবে।
রাষ্ট্রের ওপরে নিয়ন্ত্রণ স্পষ্ট করুন মন্তব্য করে ইসলামী আন্দোলনের আমীর বলেন, গত ১৫ বছরে বিগত পতিত সরকার জনপ্রশাসনের সবস্তরে যেভাবে দলীয়করণ করেছে, তাতে জনপ্রশাসনের পুরোটাই আওয়ামী দলীয় ক্যাডারে পরিণত হয়েছে। সেই বাস্তবতায় সরকারের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনা করা কঠিন তা আমরা বুঝতে পারি। তারপরেও বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, একশ' দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও রাষ্ট্রের ওপরে অন্তর্র্বর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণ স্পষ্ট না। বরং দুর্বলতা স্পষ্ট। দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণহীনতা, পোশাক খাতে অরাজকতা, ঢাকায় সেনাবাহিনীর যানবাহনে হামলা, পুলিশ বাহিনী সক্রিয় না হওয়া, ট্রাফিক ব্যবস্থা কার্যকর না হওয়াসহ অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে স্থবিরতা জাতির আশাকে ম্স্নান করে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, জনপ্রশাসন দীর্ঘদিনের চর্চা ও অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে গড়ে ওঠা রীতি ও জ্ঞানে পরিচালিত হয়। কিন্তু এটা এমন কোনো জটিল টেকনোলজি নয় যে, নির্দিষ্ট কিছু প্রশিক্ষিত লোক ছাড়া আর কেউ বুঝবে না বা চালাতে পারবে না। তাই আমরা সরকারকে পরামর্শ দেবো যে, এখনো যারা আপনাদের নেতৃত্ব মেনে নিতে দ্বিধা করছে বা স্বৈরাচারের পদলেহন করছে তাদের ব্যাপারে শক্ত হোন। তাদেরকে ছুড়ে ফেলুন। ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে প্রশাসন পরিচালনায় দক্ষ হাজারো দেশপ্রেমিক মানুষ দেশে ও বিদেশে আছেন। তাদেরকে দায়িত্ব দিন। জনপ্রশাসনকে সক্রিয় করে রাষ্ট্রের সর্বত্র নিয়ন্ত্রণ স্পষ্ট করুন।
রেজাউল করিম বলেন, নতুন নিয়োগ পাওয়া চরম বিতর্কিত উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে জনগণ মেনে নেয়নি। অতএব পতিত স্বৈরাচারের বেনিফিশিয়ারি বিকৃত মানসিকতার সমাজ বিধ্বংসী নাটক-সিনেমা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে দ্রম্নত উপদেষ্টা পরিষদ থেকে প্রত্যাহার করা হোক, তা দেশবাসী প্রত্যাশা করে।
তিনি বলেন, এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো রাষ্ট্র সংস্কার করা, যাতে করে আর কখনোই কোনো স্বৈরাচার জন্ম নিতে না পারে। সেজন্য সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে, এজন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এখন এই কমিশনগুলোকে গতিশীল ও জনসম্পৃক্ত করুন। রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করুন। কারণ তারাই দীর্ঘমেয়াদে জনমত ধারণ করেছে এবং আগামীতেও করবে। তাই সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক দল, উলামা শ্রেণি এবং বিভিন্ন পেশা ও স্তরের জনমানুষকে সম্পৃক্ত করুন। সংস্কার নিয়ে ইতোমধ্যেই মানুষের মধ্যে কানাঘুষা তৈরি হয়েছে। এই কানাঘুষা সংস্কারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই এখনই পদক্ষেপ নিন।