দেশের চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা, কর্মসূচির রূপরেখা নির্ধারণ, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সংগঠকদের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে কিছুদিন আগে বঙ্গভবন এলাকায় বিক্ষোভ, অন্তর্র্বর্তী সরকারে নতুন তিন উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে বিতর্কসহ সমকালীন বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা করেন তারা। বুধবার বিকালে রাজধানীর বাংলা মোটরের রূপায়ণ টাওয়ারে চার ঘণ্টাব্যাপী সমন্বয়কদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সমন্বয় বাড়াতে তিন ধরনের কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক শেষে রাতে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের পক্ষে আবদুল হান্নান মাসউদ সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ওই সভায় ১৫৮ জন সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়কের অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও উপস্থিত হয়েছিলেন মাত্র ৮৮ জন। বৈঠকে উপস্থিত ছাত্রনেতাদের অনেকে নানা বিষয়ে সমন্বয়হীনতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ জানান, বৈঠকে মূলত তিনটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রথমত, এ সপ্তাহের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি নির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি ২০ থেকে ২২ সদস্যের হবে। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়করা থাকবেন।
দ্বিতীয়ত, একটি অর্গানাইজিং (সাংগঠনিক) টিম থাকবে। এই টিম একাধিক সেলে বিভক্ত থাকবে এবং সেল অনুযায়ী কাজ করবে। এই অর্গানাইজিং টিম এ মাসের মধ্যে গঠন করার জন্য বলা হয়েছে।
তৃতীয়ত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির যে অর্গানোগ্রাম দেওয়া হয়েছে, সেটি এই সপ্তাহের মধ্যে বর্ধিত করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে।
এ ছাড়া ১৫ নভেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র গণ-অভু্যত্থানের ১০০ দিন উপলক্ষে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে আন্দোলনে আহতদের খোঁজখবর নেবে কেন্দ্রীয় কমিটি। পাশাপাশি ঢাকায় শহীদদের পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে।
বৈঠকে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাসনাত আবদুলস্নাহ, রিফাত রশীদ, আরিফ সোহেল, ওমামা ফাতেমা, আবদুল হান্নান মাসউদ প্রমুখ।
বৈঠক শেষে আবদুল হান্নান বলেন, 'অতিদ্রম্নত একটা নির্বাহী কমিটি করা হবে। কয়েকটি সেল করা হবে, যাতে মানুষের সঙ্গে সংযোগ হয়। একটা সাংগঠনিক কমিটি হবে, যারা সংগঠন ঠিক করবে।'
সমন্বয়কদের মধ্যে যারা রাষ্ট্র চালাচ্ছেন, তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা আছে, এমন অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আবদুল হান্নান বলেন, 'যারা রাষ্ট্র চালাচ্ছেন, তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা থাকলে এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সরকারের বাইরের অংশের সঙ্গে কী হচ্ছে, সেটা আলাপের বিষয় নয়। তাদের মধ্যে যে সমন্বয়হীনতা আছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে একটা রূপরেখা দেওয়া হবে।'
কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল জানান, তাদের সভায় নীতিনির্ধারণী ও সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যে বিষয় নিয়ে তারা মাঠে আছেন, সে বিষয়গুলো নিয়ে কীভাবে এগোবেন, সেটা আলোচনা হয়েছে। কমিটি কীভাবে গুছিয়ে নেওয়া হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সম্প্রতি দু'জন উপদেষ্টার নিয়োগ নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, সে বিষয়ে আরিফ সোহেল বলেন, 'কী প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হচ্ছে, সেটা তারা জানতে চেয়েছেন। বর্তমানে দলীয় সরকার ও সংসদীয় সরকার নেই, তাই সে আলোচনা করে নিয়োগের সুযোগ নেই। তাই কীভাবে নিয়োগ হচ্ছে, তা নিয়ে মানুষের মতামত নিতে হবে।'