শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২
বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস আজ

দেশে প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন ৫৯৩ রোগী

পাঠান সোহাগ
  ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দেশে প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন ৫৯৩ রোগী

দেশে চলতি বছরে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ লাখ ১৬ হাজার ৪২৬ জন। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৫৯৩ জন রোগী নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। গত বছর ২০২৩ সালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ লাখ ৪ হাজার ৪২১ জন। অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুর মৃতু্যর অন্যতম কারণ নিউমোনিয়া। প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৭ লাখের বেশি শিশু এ রোগে মারা যায়। এমনকি গত বছর দেশে ২২ হাজার বেশি শিশু নিউমোনিয়ায় মারা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিস্নউএইচও) তথ্যে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে নিউমোনিয়া সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে আজ সারাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস-২০২৪। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে 'আসুন, নিউমোনিয়া বন্ধ করার লড়াইয়ে সক্রিয় সহযোগী হই'। দিবসটি উপলক্ষে সব হাসপাতালের রেসপিরেটরি বিভাগ, জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও লাং ফাউন্ডেশন সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চিকিৎসক, নার্স ও রোগীদের নিয়ের্ যালি, আলোচনা সভা ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হবে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, দেশে নিউমোনিয়ায় মৃতু্যর হার না কমার প্রধান কারণ রোগী বাড়ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে অতি মাত্রায় বায়ুদূষণে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া শীত বাড়ার সঙ্গে নিউমোনিয়ার প্রকোপও বাড়ে। হাসপাতালে প্রতিদিন যত রোগী ভর্তি হচ্ছে তার প্রায় পঞ্চাশ শতাংশই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। তবে ঢাকার বাইরে থেকে রোগী বেশি আসছে।

শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নাবিল আকন্দ বলেন, অল্প বয়সি শিশু, প্রবীণ ও যাদের হৃৎপিন্ড বা ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে তাদের গুরুতর নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ফুসফুসের ছোট ছোট বায়ু থলিতে জীবাণুর সংক্রমণের ফলে এই প্রদাহের সৃষ্টি হয়। আক্রান্তদের মধ্যে মৃতু্যর হার প্রায় ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আরও বলেন, ফুসফুসের জটিল রোগ নিউমোনিয়া। দুই দশক ধরে বাংলাদেশের মতো মধ্যম ও স্বল্প আয়ের দেশে শিশু মৃতু্যর প্রথম কারণ এটি। শিশুদের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। তবে শিশুর জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে নিউমোনিয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়।

নিউমোনিয়া সংক্রমণের পরে শরীরে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায় এ প্রসঙ্গে ডা. নাবিল আকন্দ বলেন, কাশি এবং তার সঙ্গে হলুদ বা সবুজ রঙের কফ। শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট। কাশির সময় বুকে ব্যথার অনুভূতি। বুকের ভেতরে ঘরঘর আওয়াজ। শরীরে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বরের সঙ্গে শরীরে ব্যথা, ক্লান্তি এবং খাবারে অরুচি দেখা দেয়। এসব মধ্যে একাধিক লক্ষণ প্রকাশ পেলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ডা. নাবিল আকন্দ বলেন, নিউমোনিয়া থেকে সাধারণ সর্দি আলাদা। কারণ নিউমোনিয়া ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট রোগ। এর ফলে মানবদেহের ফুসফুসকে সরাসরি সংক্রমিত করে। এটি অধিক জ্বর, কফসহ কাশি এবং শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গের দিকে নিয়ে যায় যেখানে মৃতু্য পর্যন্ত হতে পারে। অন্যদিকে সাধারণ সর্দি জ্বর তিন-চার দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। এতে মৃতু্য ঝুঁকি থাকে না। একই সঙ্গে শিশুর জ্বর সর্দি হলে কিংবা ঠান্ডা লাগলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার না করা পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকাদান কর্মসূচির এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আওতায় নিউমোনিয়া প্রতিরোধের ক্ষেত্রে দুটি টিকা দেওয়া হয়। এর মধ্যে নিউমোকোক্কাল ভ্যাকসিন (পিসিভি ও পিপিএসভি)। এই টিকা দেওয়া থাকলে সাধারণত নিউমোনিয়া শিশুদের কাবু করতে পারে না। এর বাইরে যেসব শিশুর অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের প্রতি বছরই ফ্লু ভ্যাকসিন দিয়ে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করার ভালো উপায়। এতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে