ভোগান্তির নাম বাবুবাজার ব্রিজ

প্রকাশ | ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

মাসুম পারভেজ, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)
রাজধানীর দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু বাবুবাজার ব্রিজ। ব্রিজের ওপরে অবৈধভাবে স্থাপিত বাস ও অটোভ্যান স্ট্যান্ড বাণিজ্যে সেতুর ওপর ভয়াবহ যানজট লেগেই থাকছে। ব্রিজের উল্টো পথে কেরানীগঞ্জ প্রান্ত দিয়েই চলছে ব্যাটারিচলিত রিকশা-ভ্যান! আবার পাবলিক বাসগুলোও ব্রিজের যেখানে-সেখানে থামাচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের এ সময় বিশেষ কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। বাইকার, রিকশা-ভ্যানচালক যে যেভাবে পারছে সেভাবে যানজট সৃষ্টি করছে। কড়া হতে পারছেন না সড়কে দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক সদস্যরা। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সড়কে দিন-রাত পুরোদমে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বাবুবাজার সেতুতে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা ফিরলেও সড়কে ফেরেনি শৃঙ্খলা। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত অব্দি যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে কেরানীগঞ্জ ও রাজধানীর নয়াবাজারের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্রিজের ওপরে যাত্রীবাহী বাস, লেগুনা, প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান যানজটে আটকে আছে। ব্রিজে উল্টো পথে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা-ভ্যান চলাচলে যানবাহন বিশৃঙ্খলভাবে ব্রিজ পার হওয়ার চেষ্টা করায় যানজট আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থলে কোনো ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি। তবে ব্রিজের এক কোনায় লাঠি হাতে এক পুলিশ সদস্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। নির্বিকার আচরণে মনে হয়েছে, যানজট দেখে তার কিছুই করার নেই। যানজটে আটকে থাকা মহানগর লেগুনা চালক নজরুল ইসলাম জানান, বাবুবাজার সিঁড়িতে দুটি স্ট্যান্ডের কারণে ব্রিজে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। যানজটের সময় কে কার আগে উল্টো পথে ব্রিজ পার হতে পারে সেই প্রতিযোগিতা চলে। ফলে আরও জট লেগে যায়। এসব নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। নয়াবাজার থেকে কেরানীগঞ্জের কদমতলি এলাকার যাত্রী আব্দুল খালেক মিয়া বলেন, ব্রিজ পার হতে প্রতিদিনই দুই ঘণ্টা সময় চলে যায়। ব্রিজের দুই প্রান্তে ট্রাক ও বাস সাইড পরিবর্তন করছে। যে কারণে বাড়ছে যানজট। আরেক যাত্রী বাবু চৌধুরী জানান, তিনি গুলশানে একটি অফিসে চাকরি করেন। মোটরসাইকেলে যাওয়ার পরও প্রতিদিনই তার অফিসে পৌঁছাতে দেরি হয়। বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু এখন একটা ভোগান্তির নাম। সেতুর বাবুবাজার সিঁড়িতে বাস ও ব্যাটারিচালিত ভ্যান স্ট্যান্ড এবং নয়াবাজার অংশে বড় বড় যানবাহন দিক পরিবর্তন করছে। এতে যানবাহনের গতি থেমে কেরানীগঞ্জ থেকে বাবুবাজার-তাঁতিবাজার লম্বা জ্যামের সৃষ্টি হচ্ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মৌরিন খন্দকার বলেন, ব্রিজের ওপর স্ট্যান্ডে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করানোর কারণে পেছনে থাকা গাড়ি সামনের দিকে এগোতে পারে না। ফলে মুহূর্তের মধ্যেই ব্রিজের দুই পাশে লেগে যায় বিশাল যানজট। এই যানজট মিনিটের মধ্যেই ব্রিজ ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে নষ্ট হচ্ছে মানুষের কর্মঘণ্টা। ঢাকা জেলা দক্ষিণ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক জাকির হোসেন বলেন, ট্রাফিকব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেছি। যেসব যানবাহন ট্রাফিক সিগন্যাল মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এদিকে সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর ট্রাফিকের লালবাগ বিভাগের ডিসি দেওয়ান জালাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সড়কে দায়িত্ব পালনে মনোবল বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনকারীদের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। তবে স্থানীয়রা তাদের পাশে এসে দাঁড়ালে কাজে আরও গতি আসবে। এ ছাড়া মহানগরবাসীকে অনুরোধ করব, নিজ থেকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার জন্য।