চট্টগ্রামবাসীর পাশে থাকতে চান ডা. শাহাদাত

প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

চট্টগ্রাম বু্যরো
ডা. শাহাদাত হোসেন
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার পর চট্টগ্রাম ফিরে হাজার নেতাকর্মীর উষ্ণ সংবর্ধনা ও ভালোবাসায় সিক্ত হলেন ডা. শাহাদাত হোসেন। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সোনার বাংলা ট্রেনযোগে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে পৌঁছান তিনি। এ সময় হাজার হাজার মানুষের ফুলেল শুভেচ্ছা ও স্স্নোগানে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন এই নগরপিতাকে। সকাল ১১টা থেকে নগরের পুরাতন স্টেশন চত্বরে লোক সমাগম হতে থাকে এবং দুপুর ১২টার পর তা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে দলে দলে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে নেতাকর্মীরা এসে জড়ো হন। ১২টা ৫০ মিনিটে চসিক মেয়র শাহাদাত হোসেন সমাবেশস্থলে গিয়ে পৌঁছান। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীদের 'বীর চট্টলার মাটি, শাহাদাত ভাইয়ের ঘাঁটি, শাহাদাতের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই'সহ বিভিন্ন স্স্নোগান দিতে দেখা যায়। এ সময় হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ নাগরিকের উপস্থিতিতে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি এই ৭০ লাখ মানুষের জন্য নগরপিতা হিসেবে নয়, নগরসেবক হিসেবে থাকতে চাই। এই শহরে সব ধর্মের, বর্ণের, ভাষার মানুষ রয়েছে। আমার একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে- তাদের জন্য কাজ করা, তাদের পাশে থেকে সেবক হিসেবে প্রতিটি দায়িত্ব পালন করা। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, আপনারা গত ১৮ বছর ঘরে থাকতে পারেননি, আপনাদের পরিবারের খোঁজ নেওয়ার কোনো মানুষ ছিল না। আপনাদের বাচ্চাদের খোঁজ রাখার মানুষ ছিল না। আপনাদের পরিবারের বাজার করার টাকা ছিল না। অর্ধাহারে অনাহারে আপনারা দিন কাটিয়েছেন। এ অসহায়ত্ব আমি দেখেছি। আপনাদের এই ঋণ আমি শোধ করতে পারব না। সারা দেশে খুন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা হয়েছে। মানুষ অসংখ্য মামলায় নির্যাতিত হয়েছে। চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশে ১ লাখ মামলার ৬০ লাখ নেতাকর্মী আসামি হয়েছে। তারপরও আপনারা আদর্শ থেকে বিচু্যত হননি। \হমেয়র বলেন, চট্টগ্রাম শহরকে ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি ও হেলদি সিটি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যে পরিকল্পনা রয়েছে, সেটি বাস্তবায়নে সকলের সহায়তা প্রয়োজন। এই শহরটি শুধু আমার নয়, এই শহর আমাদের সবার। আমরা সবাই মিলে যদি এক সঙ্গে কাজ করি, তবে চট্টগ্রাম হবে একটি সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও সবুজ নগরী। আসুন, সবাই মিলে এ স্বপ্ন পূরণে কাজ করি। আমাকে সময় দিন। ইনশাআলস্নাহ, আমি আপনাদের আস্থার প্রতিদান দেব। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নগর বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব আবুল হাশেম বক্কর বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে সকাল থেকে নগরের পুরাতন রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত হন। লোকে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন এলাকা। সংবর্ধনা সভা শেষে ডা. শাহাদাত হোসেন হযরত আমানত শাহ (রা.) ও হযরত বদর শাহ (রা.) মাজারে গিয়ে জিয়ারত করেন। এরপর তিনি লালদীঘি পাড়সংলগ্ন চসিকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সম্মেলন কক্ষে চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। এরপর তিনি বিকালে টাইগারপাস চসিক কার্যালয় ভবনে যান। সেখানে দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। গত রোববার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ডা. শাহাদাত হোসেনকে শপথবাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। এর আগে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের করা মামলায় গত ১ অক্টোবর চট্টগ্রামের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং নির্বাচনী ট্রাইবু্যনাল মোহাম্মদ খাইরুল আমীনের আদালত তাকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন। একই সঙ্গে ১০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবকে গেজেট প্রকাশ করার জন্য নির্দেশ দেন। ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ওই নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী তিন লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পাওয়ায় নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা অনুসারে, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মেয়রপ্রার্থী শাহাদাত হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছিলেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। এরপর ভোটে কারচুপির অভিযোগে মামলা করেন ডা. শাহাদাত। উলেস্নখ্য, ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রম্নয়ারি রেজাউল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ষষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের প্রথম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আইন অনুযায়ী, প্রথম সভার তারিখ থেকে পাঁচ বছর নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ। সে হিসেবে ২০২৬ সালের ২২ ফেব্রম্নয়ারি মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। সংশ্লিষ্টদের মতে, চলতি অক্টোবরে শপথ নিলে শাহাদাত হোসেনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের মেয়াদ হবে ১৬ মাস। যদি পরবর্তী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাহলে তিন মাস আগে তাকে পদ ছাড়তে হবে। সেক্ষেত্রে মেয়াদ হবে ১৩ মাস।