দেশের জন্য নতুন বিপদ আসতে পারে :ফখরুল

'বুকে চেপে থাকা দানব সরে গেছে, কিন্তু আমাদের সজাগ ও সচেতন হতে হবে'

প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
আগামী ৭ নভেম্বর বিপস্নব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -ফোকাস বাংলা
গণতন্ত্র নস্যাৎ করতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'বিপদ এখনও শেষ হয়ে যায়নি। দেশের জন্য নতুন বিপদ আসতে পারে। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আগামী ৭ নভেম্বর বিপস্নব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল। মির্জা ফখরুল বলেন, '৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। শেখ মুজিব ১৯৭১ সালে পালিয়েছিলেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে গ্রেপ্তার হওয়ার জন্য বাসায় বসে ছিলেন। সেটি আওয়ামী লীগ নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে তার বইয়ে লিখেছেন।' '৭ নভেম্বর বিপস্নবের নায়ক সাধারণ সিপাহি ও জনতা' উলেস্নখ করে তিনি বলেন, '৭ নভেম্বরের বিপস্নব নতুন করে বাংলাদেশকে বিনির্মাণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। সেদিন রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান সামনে না এলে বাংলাদেশ কী হতো? এ কথা বলা যায় না। হয়তো এ দেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতো। তিনি নেতৃত্ব দিয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন।' তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ বাকশাল গঠনের মাধ্যমে রক্ষীবাহিনী গঠন করেছিল। এই রক্ষীবাহিনী কত মানুষকে হত্যা করেছে, তার কোনো হিসাব নেই। ওই সময় জাসদের নেতাকর্মীদেরও হত্যা করেছিল এই রক্ষীবাহিনী।' বিএনপির মহাসচিব বলেন, 'রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একটা আশার আলো তৈরি করেছিলেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন, গণমাধ্যমকে মুক্ত করে দেন। গার্মেন্টসশিল্প ও বিদেশে কর্মী পাঠিয়ে রেমিট্যান্স আনার যে প্রবণতা, এর সূচনা করেছিলেন তিনি। খাল কাটা কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষিতে বিপস্নব এনেছিলেন জিয়াউর রহমান।' তিনি আরও বলেন, 'বেগম খালেদা জিয়া ওপর থেকে চেপে এসে ক্ষমতায় বসেননি। তিনি জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ক্ষমতায় বসেছিলেন।' আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ফখরুল বলেন, 'তারা ১৫ বছর ধরে জনগণের ওপর নির্মম নির্যাতন করেছিল। এরা দেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করে দিয়েছে। আমাদের ৬০ লাখ নারী-পুরুষ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। ইলিয়াস আলীসহ ৬শ'র বেশি নেতাকর্মীকে গুম করেছে।' ছাত্র জনতার দৃঢ়তার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে সরানো গেছে বলে মহান আলস্নাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন মির্জা ফখরুল। 'বুকে চেপে থাকা দানব সরে গেছে, কিন্তু আমাদের সজাগ ও সচেতন হতে হবে' এমন আহ্বান জানিয়ে নেতাকর্মীদের তিনি বলেন, 'জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারই শ্রেষ্ঠ সরকার।' 'বিপদ শেষ হয়নি, নতুন করে বিপদ আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে' ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'বিএনপির ওপর সবসময় আঘাত এসেছে। আমাদের সজাগ থাকতে হবে। বহু চেষ্টা করে কেউ বিএনপিকে ভাঙতে পারেনি। বিএনপির সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে নারীরা।' জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা। সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহাম্মেদ। 'জনগণ এই সরকারকে দীর্ঘদিন মানবে না' এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, অন্তর্র্বর্তী সরকার রাষ্ট্র কাঠামোর কী কী সংস্কার করতে চায় এবং সেটা করতে কতদিন লাগবে, কোনো ছলচাতুরি ছাড়াই তা স্পষ্ট করে বলতে হবে। সেই সঙ্গে অবিলম্বে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আজকের বাংলাদেশ' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস এসব কথা বলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সাবু'র ২১তম মৃতু্যবার্ষিকী উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম ও প্রজন্ম একাডেমির যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মির্জা আব্বাস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, জাতিকে অন্ধকারে রেখে আপনারা যা খুশি তাই করবেন, আমরা তো সেটা মেনে নিতে পারব না। সুতরাং জাতিকে ধোঁয়াশায় রাখবেন না। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন গত ১৬ বছরের বিনাভোটের সরকারকে মানেনি, এখন এই সরকারকেও দীর্ঘদিন মানবে না। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশে বর্তমানে একটা ধোঁয়াশাচ্ছন্ন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই সরকার বেশি সময় থাকবে, না যথাসময় দায়িত্ব পালন করে চলে যাবে- বুঝতে পারছি না। আপনারা আমাদের সহযোগিতা চান কিনা, সেটাও বুঝতে পারছি না। অনুষ্ঠানে আলোচ্য বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সৈয়দ মোজাম্মেল হোসেন শাহীন। প্রজন্ম একাডেমির সভাপতি কালাম ফয়েজীর সভাপতিত্বে এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম কলিমের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ। 'গণঐক্যকে নষ্ট করা যাবে না' এদিকে, গণঐক্যকে ষড়যন্ত্র করে নষ্ট করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সরাতে জুলাই-আগস্টে দেশের মানুষের মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছে সে ঐক্যে ফাটল ধরানো যাবে না। মঙ্গলবার শৃঙ্খলা উপ-কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক দিন। দিবসটির এবারের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই ৭ নভেম্বর উপলক্ষে বিএনপিরর্ যালিতে নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণ অংশ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইদুল আলম বাবুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, বিএনপির সহ-সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য ওমর ফারুক শাফিন, হায়দার আলী লেলিন, একরামুজ্জামান বিপস্নব, আকরামুল হাসান, হাবিবুর রশিদ হাবিব, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, আব্দুল সাত্তার পাটোয়ারী, রাশেদ আহমেদ প্রমুখ। 'আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে' এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে, ১৬ বছর আওয়ামী লীগের অত্যাচার সহ্য করেছে, তাদের নির্বাচনমুখী করতে হবে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে, তা রুখে দিতে হবে। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 'ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র ও প্রশাসনের সব পর্যায় থেকে ফ্যাসিস্ট দোসরদের সমূলে উৎখাতের' দাবিতে এ সমাবেশ করা হয়। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও মঞ্জুর হোসেন ঈসা সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা নেসারুল হক, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী প্রমুখ।