সাত জেলায় ঝরল ১৪ প্রাণ

প্রকাশ | ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় সোমবার ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া মোটরসাইকেল -যাযাদি
কিছুতেই থামছে না সড়ক দুর্ঘটনা। গত এক দিনে সাত জেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মাদারীপুরের শিবচরে দুই মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জন, ও দিনাজপুরে পৃথক দুটি দুর্ঘটনায় ৩ জন, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে বাসের ধাক্কায় মামা-ভাগনে, ঝালকাঠির রাজাপুরে মাহিন্দ্রা ও ট্রলির মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন। অন্য জেলাগুলোর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা, সিলেট ও ঝিনাইদহ একজন করে নিহত হয়েছেন। রোববার রাত ১০টার পর থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, জেলার রাজাপুরে মাহিন্দ্রা (ডিজেলচালিত অটোরিকশা) ও ইটটানা ট্রলির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার পিংড়ি স্কুল ব্রিজ এলাকায় এ দুর্ঘটনায় আরও ৫ জন আহত হয়েছেন। নিহত দুইজনই পুরুষ। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি। ঘটনাস্থলে থাকা রাজাপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল খালেক বলেন, 'ভান্ডারিয়াগামী একটি মাহিন্দ্রা ও ঝালকাঠিগামী একটি ইটটানা ট্রলির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মাহিন্দ্রার দুই যাত্রী নিহত হন এবং আরও ৫ জন আহত হন। ঘটনার পর খুলনা-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রায় ১ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যান চলাচল স্বাভাবিক করে।' রাজাপুর থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, 'মরদেহ উদ্ধার করে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। এ দুর্ঘটনার বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ জানান, জেলার গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে একটি যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় দুইজন নিহত হয়েছেন। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফুকরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত হন ইজিবাইক চালকসহ আরও চার যাত্রী। আহতদের গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতরা হলেন- গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া গ্রামের মোল্যাপাড়া এলাকার আহম্মদ খানের ছেলে দ্বীন ইসলাম খান (২১) ও খুলনার তেরখাদা উপজেলার মাসুদ মোল্যার ছেলে হোসাইন মোল্যা (৮)। তারা সম্পর্কে মামা-ভাগনে। কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল হাশেম মজুমদার বলেন, 'পিরোজপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী রাজীব পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ব্যাটারিচালিত ইজিবাইককে ধাক্কা দেয়। এ সময় ইজিবাইকে থাকা ৬ জন যাত্রী আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত অন্য যাত্রীদের চিকিৎসা চলছে।' চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, পৌরসভার সামনে এক সড়ক দুর্ঘটনায় কুলসুম বেগম (৪০) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। সোমবার বেলা ১১টার ওই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত কুলসুম বেগম চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়ার বাজারপাড়ার ইছা মিস্ত্রির মেয়ে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আল বেলাল এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, 'সকালে কুলসুম বেগম ভ্যানে সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহে তার বোনের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সামনে পৌঁছলে একটি রিকশার সঙ্গে ভ্যানের সংঘর্ষ হয়। এতে ভ্যান থেকে ছিটকে পাকা রাস্তার ওপর পড়ে কুলসুম বেগম মাথায় আঘাত পান। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে কিছুক্ষণ পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শাপলা খাতুন বলেন, 'আহতাবস্থায় এক নারীকে জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। ওই নারীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর বুঝতে পারি, তিনি মারা গেছেন। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃতু্য হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।' চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ খালেদুর রহমান বলেন, 'ভ্যান থেকে ছিটকে পড়ে এক নারী মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন। পরে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।' ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, সদর উপজেলায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় শের আলী (৫৫) নামে এক আলমসাধু চালকের মৃতু্য হয়েছে। সোমবার ভোরে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের নগরবাথান এলাকার ঘোষপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শের আলী শহরের কাঞ্চনপুর গ্রামের মধ্যপাড়ার মৃত বাবর আলী জোয়ার্দ্দারের ছেলে। নিহতের ভাতিজা ঠান্ডু জোয়ার্দ্দার জানান, ভোরে শের আলী তার আলমসাধু নিয়ে নগরবাথান বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের নগরবাথান ঘোষপাড়া এলাকায় পৌঁছলে অপর একটি আলমসাধুর সঙ্গে তার গাড়ির সংঘর্ষ হয়। এতে রাস্তায় ছিটকে পড়েন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঝিনাইদহ হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহমান বলেন, 'পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ না থাকায় মরদেহ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।' ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. তাপস বিশ্বাস বলেন, 'শের আলীকে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। দুর্ঘটনার কারণে মাথায় আঘাত পেয়েছেন। ইন্টারনাল রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃতু্য হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।' এদিকে, সিলেট-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কে ট্রাকের ধাক্কায় মোছা. সমরুন নেছা (৬০) নামের এক বৃদ্ধার মৃতু্য হয়েছে। সোমবার সকালে মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার এক নম্বর পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের পাড়ুয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত সমরুন নেছা উপজেলার পাড়ুয়া মাঝপাড়ার মৃত ইদ্রিস আলীর স্ত্রী। পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে ৭টায় সমরুন নেছা রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এ সময় ভোলাগঞ্জগামী একটি ট্রাকের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বলেন, 'অজ্ঞাত ট্রাকের ধাক্কায় ওই বৃদ্ধার মৃতু্য হয়েছে। বৃদ্ধার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী হাসপাতালে আছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।' ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, উপজেলায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাকের একজন সহকারী নিহত হয়েছেন। তার থেঁতলে যাওয়া মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। রোববার রাত ২টার দিকে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের ঘোড়াঘাট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জগামী একটি বালুবোঝাই ট্রাক ওই স্থানে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিল। এ সময় দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসা একটি সিমেন্ট মিক্সচার ট্রাক অতিক্রম করার সময় বালুবোঝাই ট্রাককে ধাক্কা দিলে সিমেন্ট মিক্সচার ট্রাকের সামনে অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে সিমেন্ট মিক্সচার ট্রাকের কেবিনে থাকা চালকের সহকারীর মৃতু্য হয়। এ বিষয়ে ঘোড়াঘাট থানার অফিসার ইনর্চাজ মো. নাজমুল হক বলেন, 'সিমেন্ট মিক্সচার ট্রাকের চালক পালিয়ে যাওয়ায় তার সহকারীর পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় আমরা বালুবোঝাই ট্রাকের সহকারী জুয়েল রানা (৩০) ও চালক রিবুল হাসানকে (৩৪) আটক করতে সক্ষম হই। নিহতের পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে, আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।' শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের টোল পস্নাজা এলাকায় দুই মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে চার আরোহী নিহত হয়েছেন। রোববার রাত সোয়া ৯টার দিকে সেতুর জাজিরা প্রান্তে শেখ রাসেল সেনানিবাসের কাছাকাছি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃতু্য হয়। গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে অন্যজন মারা যান। নিহতরা হলেন- শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার ফরাজী কান্দি এলাকার নাবিল ফরাজী (১৮) ও সায়েম মাদবর (১৯), মোসলেম ঢালি কান্দি এলাকার আরমান ঢালী (১৮) ও খিদির মাদবর (২০)। পুলিশ জানায়, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা এলাকা থেকে টোল পস্নাজার পাশের সড়ক দিয়ে শেখ রাসেল সেনানিবাস সড়কের দিকে যাওয়ার পথে দুটি মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় মোটর সাইকেল দুটিতে থাকা চারজন ব্যক্তিই গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে প্রথমে আরমান, খিদির ও নাবিল নামে তিনজন নিহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় সায়েম মাদবরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় তিনিও মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন বলেন, 'দুটি মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। ঘটনাস্থল থেকে দুর্ঘটনাকবলিত মোটর সাইকেল দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়দের কাছে যত দূর জানতে পেরেছি, গাড়ি দুটির গতি বেশি ছিল। আমরা ধারণা করছি, অতিরিক্ত গতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।'