'গুম, খুন, ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত তারুণ্যনির্ভর মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই'- বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। প্রতিহিংসার রাজনীতি থাকবে না। আমরা বৈষম্যহীন দুর্নীতিমুক্ত ও মানবিক দেশ চাই।'
শনিবার বিকালে বগুড়ার আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের প্রতি ইঙ্গিত করে জামায়াতের আমির বলেন, 'যে আদালতে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে বিচার করা হয়েছিল সেই আদালতে তাদের আসতে হবে। বিচার হবে, আমরা
চাই না তাদের ওপর জুলুম হোক। আমরা চাই ন্যায়বিচারের মাধ্যমে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে।'
তিনি বলেন, 'ন্যায়বিচারে যে পাওনা তারা পাবে তাতে তাদের সাধ মিটে যাবে। যারা এদেশের ১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল আগামীতে তাদের দেশের মানুষের কাছে ভোট চাওয়ার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।'
এ প্রসঙ্গে তিনি কারো নাম উলেস্নখ না করে বলেন, 'জুজুর ভয় দেখাবেন না, জাতিকে বোকা ভাববেন না, এদেশের মানুষ খুনিদের প্রকাশ্যে হাঁটতে দিবে না। আগে তাদের বিচার হবে।'
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, 'সাড়ে ১৫ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে খুন, গুম, নির্যাতনের তান্ডব চালানো হয়েছে। কোনো মায়ের বুক খালি হয়েছে, কেউ হয়েছেন সন্তানহারা, অসংখ্য মানুষ হয়েছেন এতিম, অনেকে হয়েছেন পঙ্গু। ঠান্ডা মাথায় বিচারের নামে জামায়াত নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। জামায়াতের একজন নেতাও শাস্তির ভয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাননি। ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছেন কিন্তু কাঁদেননি।'
তিনি বলেন, 'কারা দেশ থেকে পালায়। যারা দেশকে নিয়ে মেকি কান্না কেঁদেছে তারাই পালিয়েছে। ভালো মানুষ দেশ থেকে পালায় না। আমরা তাদের দেশ থেকে পালাতে বাধ্য করিনি। তাদের অপকর্মই তাদের দেশ থেকে পালাতে বাধ্য করেছে। পিলখানায় হত্যাকান্ডের মাধ্যমে দেশে যে জুলুম শুরু হয়েছিল তার শেষ হয়েছে ২০২৪ সালের আগস্টে।'
জামায়াতে ইসলামকে সবচেয়ে মজলুম দল হিসাবে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'ফ্যাসিস্ট সরকার জামায়াতের প্রথম থেকে ১১ জন নেতাকে খুন করছে আর কোন দল এই দাবি করতে পারবে না।'
তিনি বলেন, 'জাতিকে আর কেউ বিভক্ত করতে পারবে না। দেশের প্রতিটি মানুষ মর্যদাবান নাগরিক। প্রত্যেকেই শান্তিতে উপসনা করবে। জামায়াতের বিরুদ্ধে অন্যকারো জমি দখল, চাঁদাবাজি করার বা মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করার অভিযোগ নেই। যদি কেউ বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ করতে পারেন তাহলে আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাইবো।'
তিনি গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে বলেন, 'আমাদের বক্তব্য আপনাদের চাদর দিয়ে ঢাকবেন না। নিজেদের মতো উপস্থাপন করবেন না। কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়।'
তিনি জুলাই-আগস্টে নিহতদের জাতীয় বীর হিসাবে উলেস্নখ করে বলেন, 'জামায়াতে ইসলামী শহীদদের কোনো সংখ্যা প্রকাশ করেনি, কারণ শহীদদের কোনো দলের অংশ করতে চাই না। আমরা তাদের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যোদ্ধা হিসাবে দেখি। এ দেশ সবার।'
বগুড়া জেলা ও শহর জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শহর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানীসহ মাওলানা আবদুর রহিম, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল হক, অধ্যাপক আব্দুল মালেক প্রমুখ।