শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

সংবিধান সংশোধন হতে হবে নির্বাচিতদের দিয়ে : নজরুল

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান -সংগৃহীত

দ্রম্নত নির্বাচিত সরকার না এলে কী কী ঘটবে- সেই আশঙ্কার কথা তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, সংবিধান সংশোধন করতে হলে সেই নির্বাচিতদের নিয়েই করতে হবে।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

সপ্তম ও নবম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে আবদুল হামিদ খান ভাসানীর জীবনী পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে এই কর্মসূচির আয়োজন করে ভাসানী অনুসারী পরিষদ।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে 'ফ্যাসিবাদের' পতন হলেও 'গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা' ও 'জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার' আকাঙ্ক্ষা রয়ে গেছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এমনভাবে সেই গণতন্ত্র 'পুনঃপ্রতিষ্ঠা' করা, যাতে করে সেই গণতন্ত্র কেউ জনগণের বিপক্ষে কাজে না লাগাতে পারে।

'প্রকৃত গণতন্ত্র, জনগণের গণতন্ত্র, সে রকম একটা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে যে সংস্কার যেখানে করা দরকার, যত দ্রম্নত সেটা করে বাংলাদেশে জনগণের নির্বাচিত শাসন, নির্বাচিত সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠাই এখন সময়ের দাবি।'

নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে নজরুল বলেন, 'এটা যত দেরি হবে, তত নতুন নতুন সংগঠন গজাবে, নতুন নতুন ব্যক্তি আসবে-তারা নতুন নতুন প্রস্তাব নিয়ে আসবে, নতুন নতুন

আকাঙ্ক্ষার কথা ব্যক্ত করার চেষ্টা করবে এবং বোঝানোর চেষ্টা হবে যে, এটাই জনগণের আকাঙ্ক্ষা। এটা সঠিক হবে না।'

নির্বাচিত সরকার ছাড়া কারও পক্ষে জনগণের আকাঙ্ক্ষার কথা বলার সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ''বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলও যদি বলে যে, 'এটাই জনগণের আকাঙ্ক্ষা', তাহলেও সেটা হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটা জনগণ অনুমোদন করে।''

যেখানে সবচেয়ে বড় দল বললে হবে না, সেখানে কোনো বিশেষ ব্যক্তি বললে হয়ে যাবে- এমনটাও হবে না। দেশে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে, জনগণকে আস্থায় নিয়ে তাদের সম্মতিতে তাদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে গণতান্ত্রিক সরকারকে। আর সেটা করার জন্য যে বিধানগুলো দরকার, সেই বিধান সন্নিবেশিত করে আমাদের সংবিধান সংশোধিত হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।

'এরা অদ্ভুত সরকার'

এই মন্তব্য করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, 'অদ্ভুত কেন বললাম? এই সরকার এখন নিজেই বুঝতে পারছে না, তারা কি বিপস্নবী সরকার, নাকি সাংবিধানিক সরকার।'

আবার কেউ কেউ বলছেন, ''বিপস্নব যে অসম্পূর্ণ ছিল, সেই 'অসম্পূর্ণ' বিপস্নব এবার আমরা সম্পূর্ণ করব।'' এ জন্য আবার দফা-দফা পেশ করেছেন। সেই দফার মধ্যে সমাজে গুণগত পরিবর্তন করার মতো এমন কিঝু নেই।

'বিপস্নব, যেটা মানুষের জীবনকে বদলে দেয়, দেশের চরিত্র বদলে দেয়, যেটা দেশকে গুণগতভাবে আরও বেশি উন্নত করে, এখন পর্যন্ত এ রকম হয়নি।'

একটা 'নিকৃষ্ট স্বৈরাচার', 'লোভী লুটেরা'কে পরাজিত করার মন্তব্য করে মান্না বলেন, 'কিন্তু এখন পর্যন্ত মানুষের জীবন সহজ হয়নি, সুন্দর হয়নি, মানুষের জীবন গণতান্ত্রিক হয়নি, রাষ্ট্রটা গণতান্ত্রিক হয়নি, দেশে নির্বাচন চালু হয়নি।

এই কাজগুলো যদি ঠিকমত করতে পারেন, এমন একটা দেশ গড়তে পারেন যে, দেশকে আমরা বলতে পারি, গত ১৫ বছরের তুলনায় কিংবা গত ৫৪ বছরের তুলনায় ভালো, এমন একটা দেশ যেখানে জীবনযাপন করা ভালো-সহজ, মনে হয়, এটা আমার দেশ, মানুষ মানুষকে সম্মান করে, আমি আমার ইচ্ছামত ভোট দিতে পারি, আমার ভোট অনুযায়ী সরকার গঠিত হয়, জনগণের প্রতিনিধি আমাদের শাসন করে।

এত কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সরকার চেষ্টা করছে, না তা বলছি না। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন ছোটখাট বিষয় নিয়ে অহেতুক একটা বির্তক সৃষ্টি করছে, এমন জটিলতার মধ্যে চলে যাচ্ছেন তখন মনে হয় তারা পারবেন তো? এ জন্যই আমরা বলি, আমরা এই সরকারের সাফল্য চাই- এই সরকারের ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই।

'ফ্যাসিবাদের ছানা-পানারা সক্রিয়'

বিপস্নবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ''আওয়ামী 'ফ্যাসিবাদ' বিদায় নিয়েছে, কিন্তু 'ফ্যাসিবাদের' ছানা-পানা, তাদের ডাল-পালা বিদ্যমান। গাছটাকে আপনারা উপরে ফেলেছেন, কিন্তু এর শেকড়-বাকড় অনেকদূর পর্যন্ত প্রথিত এটা।'

আমি উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, অনেকে নানা ধরনের এজেন্ডা নিয়ে এখন তারা হাজির হওয়ার চেষ্টা করছে। গণঐক্যকে আবার তারা বিভাজনের জায়গায় ঠেলে দিচ্ছে। আবার তারা নানা ধরনের অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন উত্থাপন করছেন।

অন্তর্র্বর্তী সরকার বিব্রত বা ব্যর্থ হলে অভু্যত্থানের সাফল্য বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'এতে গণঐক্য নষ্ট হবে এবং এর ফাঁকফোকর দিয়ে 'পতিত স্বৈরাচার' আবার উঠে আসার চেষ্টা করবে।"

আয়োজন সংগঠনের সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সদস্য সচিব ফারুক হাসান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্যসচিব আবু ইউসুফ সেলিমও বক্তব্য রাখেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে