নারী-শিশু অধিকার ফোরামের সভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনীতিবিদদের করতে হবে

প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলার নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের পরিচিতি সভায় বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় -সংগৃহীত
রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য মাসের পর মাস প্রয়োজন হয় না মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, রাজনীতির বাইরে থেকে যে সংস্কার আসে, সেটার বাস্তবতার সঙ্গে অনেক অমিল থাকে। এ কারণে রাজনৈতিক সমস্যা রাজনীতিবিদদের সমাধান করতে হবে। শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলার নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের পরিচিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন। গয়েশ্বর বলেন, যেহেতু আমরা সবাই একমত হয়েছি একটি সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচনের বিষয়ে, আমরা সে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। আপনারা যারা দায়িত্ব পেয়েছেন, একসঙ্গে বসেন, দেখেন কোন শব্দটা ভুল, কোনটা বানান ভুল। তারপর জাতির সামনে সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন। বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২৭ দফা কর্মসূচি জাতির সামনে তুলে ধরেছিলেন বলে উলেস্নখ করে গয়েশ্বর বলেন, আমরা তখন যুগপৎ আন্দোলন করলাম, সব দলের মতামতের ভিত্তিতে সেটাকে আরও পরিমার্জিত করে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জাতির সামনে তুলে ধরেছি। সেটা এই সরকার পতনের আগে যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। সুতরাং নতুন সংস্কারের গীতিকারের প্রয়োজন নেই। 'সংস্কার কার্যক্রম মাসের পর মাস প্রয়োজন নেই' দাবি করে গয়েশ্বর রায় বলেন, সেই ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবে কমপক্ষে ৪০টি দল একমত হয়েছে। বিএনপির রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা অন্তর্র্বর্তী সরকারকে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে তিনি আরও বলেন, আপনারা সেই ৩১ দফা নেন। সেখানে যদি কিছু পরিমার্জন করা লাগে সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেন। এই সংস্কারের জন্য মাসের পর মাস প্রয়োজন হয় না। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পর আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের ভিডিও বার্তায় দেওয়া বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচারের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন গয়েশ্বর রায়। এ সময় তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হয়েছে, কিন্তু তাদের তো কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছে না। সবাই তো আরাম-আয়েশে ঘোরাফেরা করছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক সেলিমা রহমান বলেন, তারেক রহমান বলেছেন, দেশে নারী ও শিশুরা যেভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, তাদের রক্ষায় একটি কমিটি করেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা কমিটি করে যেখানে নারী নির্যাতন হয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়েছি। 'শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা করতে সম্মত হননি' এদিকে, একাত্তরে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করতে সম্মত হননি বলে দাবি করেছেন বিএনপির উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক। শুক্রবার সকালে রাজধানীতে এক অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যাতে আর কখনো রাজনীতিতে ফিরতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান তিনি। জয়নুল আবদিন বলেন, 'এই সিন্ডিকেটের দল, মাফিয়ার দল, লুটেরার দল যাতে আবার দাদার নামে, বাবার নামে রাজনীতিতে ফেরত না আসতে পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। এরা কোনোকালেও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের লোক ছিল না। এদের ছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খায়েশ।' ১৯৭১ সালের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে তিনি দাবি করেন, আমরা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমরা শুনেছি, তাজউদ্দীন আহম্মদ সাহেব আপনার (শেখ মুজিবুর রহমান) কাছে গিয়ে বলেছিলেন, 'আপনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করুন'। আপনি তাজউদ্দীনকে বলেছিলেন, 'আমি কি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি হব'? জয়নুল আবদিন বলেন, 'কী করে বলবেন, শেখ মুজিব বাংলাদেশের জাতির পিতা? কী করে শেখ হাসিনা বলে তার বাবার বাংলাদেশ? তিনি তো বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করতে সম্মতি দেননি।' ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিও জানান তিনি। সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমে দিলিস্নতে শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, 'দিলিস্নর পার্কে ঘুরে বেড়ান বিশেষ সিকিউরিটি নিয়ে পতিত স্বৈরাচার সাবেক প্রধানমন্ত্রী। যিনি বাংলাদেশে ইলিয়াস আলীকে গুম করেছিলেন, যিনি বাংলাদেশে চৌধুরী আলমকে গুম করেছিলেন, যিনি অনেক বিরোধী নেতাকর্মীকে গুম করেছিলেন, খুন করেছিলেন। সেই শেখ হাসিনা বিশেষ সিকিউরিটি নিয়ে দিলিস্নর একটি পার্কে ঘুরে বেড়ান। ভারত সরকার যারা গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে অহংকার করে কথা বলে, সেই দেশের রাজধানী দিলিস্নর একটি পার্কে ঘুরে বেড়ান তিনি। আমি আজকেই এই সভা থেকে দাবি করছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে যে ব্যক্তিটির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, সেই শেখ হাসিনাকে অবশ্যই ফিরিয়ে আনতে হবে। আইনের আওতায় এনে তাকে সাজা দিতে হবে।' জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, 'দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সিন্ডিকেটে এখনো আওয়ামী লীগের প্রেত্মাতারা জড়িত। যারা আলু সিন্ডিকেট করেছে, যারা পেঁয়াজ সিন্ডিকেট করেছে, যারা চিনি সিন্ডিকেট করেছে, যারা রোজার দিনে আমাদের চিনি খেতে দেয়নি, তারা আবার কিন্তু সজাগ হয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রম্নত ব্যবস্থা নিতেই হবে। যত দেরি হবে তারা আবার মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াবে। এদের আইনের আওতায় এনে ওদের মেরুদন্ড ভেঙে দিতে হবে।' বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো দুই মাসেও প্রত্যাহার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাবেক বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ। ঢাকাস্থ সেনবাগ ফোরামের সভাপতি এবিএম ফারুকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন সেলিমের সঞ্চালনায় এই অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মো. নেছারুল হক, কৃষক দলের সহসভাপতি ভিপি ইব্রাহিমসহ সেনবাগের নেতারা বক্তব্য রাখেন।