শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১
স্বস্তিতে উপকূলবাসী

শক্তি হারিয়ে ঝড়ো হাওয়ায় পরিণত ঘূর্ণিঝড় 'দানা'

যাযাদি ডেস্ক
  ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ায় উপকূল এলাকায় ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয় ও গাছ-পালা ভেঙে পড়ে। ছবিটি শুক্রবার তোলা -সংগৃহীত

ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আঘাত হানার পর ঘূর্ণিঝড় 'দানা' ক্রমান্বয়ে শক্তি হারিয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর প্রভাবে গত দুই দিন ধরে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হলেও দুর্যোগের শঙ্কা কেটে গেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংস্থাটি বলছে, এর প্রভাবে কিছু কিছু এলাকায় হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শুক্রবার সকাল থেকেই খুলনা ও এর আশপাশের এলাকা রৌদ্রোজ্জ্বল ছিল। আকাশে মাঝেমধ্যে মেঘ দেখা গেলেও আবহাওয়া ছিল স্বাভাবিক। এদিকে ঘূর্ণিঝড় 'দানা'র প্রভাব কমে আসায় ২২ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে। এতে দুর্ভোগ কমেছে যাত্রীদের। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হওয়া দমকা বাতাসে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ ও কলাপাড়া উপজেলায় অন্তত ১৫টি ঘর বিধ্বস্ত হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে। নদীবন্দরে ২ নম্বর থেকে ১ নম্বর সংকেতে নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মাছ ধরা ট্রালারগুলোতে নিরাপদ স্থানে থাকতে বলা হয়েছে।

শুক্রবার আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, 'দানার প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে কোথাও কোথাও বৃষ্টি হতে পারে, তবে ভারি হবে না।'

শুক্রবার তিনি বলেন, 'ঝড়ের শঙ্কা কেটে গেছে। সারাদেশে কম-বেশি বৃষ্টি হবে, পশ্চিমাঞ্চলে তুলনামূলক বেশি হবে। তবে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।'

আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, দানা বর্তমানে উত্তর উড়িষ্যা ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে। এর আগে ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উপকূলে আঘাত হেনে ধীরে ধীরে শক্তি হারাতে শুরু করে 'দানা'। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় স্থলভাগে উঠে শুক্রবার ভোরে স্থলভাগ অতিক্রম করে ঘূর্ণিঝড়টি।

স্থলভাগে আঘাত হানার সময় উড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। তবে শুক্রবার সকালে ঝড়ের তান্ডব শেষ হওয়ার পর গতি কমেছে।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর আকাশ কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও বেলা বাড়লে রোদের দেখা গেছে। সকাল সাড়ে ১০টায় আবহাওয়ার এক বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি রাত ৩টার দিকে উত্তর উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করেছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর উপর দিয়ে দমকা বা ঝড়োহাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

বিআইডবিস্নউটিএ'র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক রিয়াদ হোসেন জানান, ২২ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকালে বরিশাল থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে।

শুক্রবার সকাল থেকে খুলনা শহর এবং এর আশপাশের উপজেলায় আকাশ রৌদ্রোজ্জ্বল ছিল। খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, খুলনা অঞ্চলে দানার প্রভাব অনেকটা কেটেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত খুলনায় ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে।

খুলনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিক সময়ের মতো প্রবাহিত হচ্ছে। ভৈরব, রূপসা ও কাজী বাছার পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রয়েছে। শহরের নিম্নাঞ্চল বাদে অন্য অঞ্চলে তেমন পানি জমে নেই। মানুষের জনজীবন এবং যান চলাচল একেবারে স্বাভাবিক। তবে দানার প্রভাব কাটলেও খুলনা উপকূলের উপজেলায় মানুষের বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্ক এখনো কাটেনি।

দাকোপ উপজেলার সুতারখালী গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আগমনী সংঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিশিত কুমার মন্ডল বলেন, 'আইলা আমাদের সর্বস্বান্ত করে দিয়েছিল। এরপর থেকে ঝড়ের কথা শুনলেই আমাদের পরান কাঁপে।'

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত কখনো থেমে থেমে কখনো মুষলধারে বৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি অনেকটা কমে এলেও রাতে আবার কয়েক দফায় বৃষ্টি ঝরে।

বড় কোনো ক্ষতি ছাড়াই ঘূর্ণিঝড় দানা উপকূল পাড়ি দেওয়ায় কয়রা উপজেলার মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। গত দুই দিন আতঙ্কে ছিল এ অঞ্চলের লাখো মানুষ। বৃহস্পতিবার দুপুরের তুলনায় শুক্রবার ভোরে জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়নি। এতে স্বস্তিতে আছেন কয়রার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদ-নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার জোয়ারের তোড়ে ধসে যাওয়া কয়রার দশালিয়া এলাকার কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ সংস্কারকাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। দানার প্রভাব কেটে যাওয়ায় মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার আহবাওয়ার বুলেটিনে জানানো হয়েছিল, দানার প্রভাব উপকূলীয় ১৪ জেলাল স্বাভাবিকের চেয়ে ২ ধেতে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। সেই সঙ্গে ৫ বিভাগে হতে পারে ভারি বর্ষণ।

কয়রা আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা হাসানুল বান্না জানান, ঘূর্ণিঝড় 'দানার' প্রভাবে দুই দিন ধরে বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত কয়রায় ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে স্থানীয় নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বাড়লেও বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। ঘূর্ণিঝড় দানা ভারতের ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূল দিয়ে অতিক্রম করেছে। আপাতত শঙ্কামুক্ত বলা যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে