ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায় খুশি হয়েছি :গয়েশ্বর
প্রকাশ | ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
অন্তর্র্বর্তী সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে, এটা খুবই দুঃসাহসিক কাজ। এতে আমরা আপত্তি করছি না। আমরা খুশি হয়েছি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে 'জাগ্রত বাংলাদেশ' নামের এক সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত 'দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার ও রাজনৈতিক দলের করণীয়' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, 'অন্তর্র্বর্তী সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে, এটা খুবই দুঃসাহসিক আমরা খুশি হয়েছি। কিন্তু যদি বিএনপিকে নিষিদ্ধ করে তখন আমরা কী করবো? জামায়াতে ইসলামীর অনেক লোককে ফাঁসি দিয়েছে এবং অত্যাচারও করেছে। জামায়াতে ইসলামী হাসিনার মতো একটা ফ্যাসিবাদীকে কিন্তু নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি।'
তিনি বলেন, 'যারা বিভিন্ন সংগঠনের নামে মানুষকে হত্যা, গুম, নির্যাতন করেছে তারাতো আরামে আছে। তাদেরকে ধরে ধরে বিচার করেন। অন্যায় করলে তার পরিণাম কী হয় সেটির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।'
তিনি আরও বলেন, 'এতগুলো লোক সীমান্ত অতিক্রম করলো, বিদেশে চলে গেল, হারুনের মতো লোক আমেরিকা চলে গেল কার সাহায্যে? কে তাদেরকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে? এর জবাব কার কাছে চাইব। কে দেবে এই জবাব? যারা ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নিয়েছে, তারা সেখানে গেল কীভাবে। অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় না দাঁড় করিয়ে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ কারা করে দিল। এর জবাব কী সরকার দেবে ?'
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, 'জনগণ তো তাদেরকে আলস্নাহ ভগবানের মতো বিশ্বাস করে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি যদি অনন্তকাল ক্ষমতায় থাকতে চান, তাহলে তখন আমরা অবিশ্বাস করবো কীভাবে। আমরা কিছু দিন দেখি, এরপরে অতীতে যা করেছি ভবিষ্যতেও তা করবো। আমরা যেহেতু মৃতু্যর জন্য প্রস্তুত আছি, তাহলে আমাদেরকে মারতে আর পারবে না। এ সরকার আমাদের বিশ্বাস ও জনগণের আস্থা ভঙ্গ করুক সেটা চাই না।'
নির্বাচন করার জন্য যতটুকু সময় দেওয়া দরকার আমরা ততটুকু সময় দেবো উলেস্নখ করে গয়েশ্বর বলেন, 'নির্বাচন করার জন্য যতটুকু সময় দেওয়া দরকার, আমরা ততটুকু সময় দেবো। সে সময়টা অতিক্রম হয়ে গেলে জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বিএনপি তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঘরে বসে থাকবে না। অতীতে রাজপথে থেকে যেমনভাবে সংগ্রাম করেছি, ভবিষ্যতেও করবো। আমরা শুধুমাত্র একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে চাই।'
জাগ্রত বাংলাদেশের সভাপতি ও দৈনিক খোলা কাগজ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মো. জহিরুল ইসলাম কলিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম এবং হাবিবুর রহমান হাবিবসহ নেতারা বক্তব্য রাখেন।
'ছাত্রলীগকে আইনের আওতায় আনতে হবে'
এদিকে, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করলেই হবে না, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নজরুল হামিদ মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টির উদ্যোগে তারেক রহমানের নামে সব মিথ্যা মামলা নির্বাহী আদেশে প্রত্যাহারের দাবিতে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ছাত্রলীগ শুধু কি নিষিদ্ধ করলেই হবে, এমন প্রশ্ন রেখে সেলিমা রহমান বলেন, 'তাদের হাতে দা, পিস্তল, অস্ত্র আছে। তারা কি যেখানে-সেখানে হামলা করবে না? তাই বলছি, এদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, শেখ হাসিনাকে আগে আইনের আওতায় আনতে হবে, তার বিচার করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'ছাত্র-জনতা আন্দোলনের পর আমার মুক্তি পেয়েছি, কিন্তু আমরা কি স্বস্তিতে আছি? আমরা একটা সংকট পেরিয়ে উঠেছি সত্যি, একটা ক্লান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে আছি। সাধারণ মানুষ আজ স্বস্তি পাচ্ছে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দাবি-দাওয়া নিয়ে অফিস ঘেরাও কর্মসূচি, পতিত স্বৈরাচারের দোসররা পরিকল্পনা মাফিক দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার যেন দেশকে ভালোভাবে পরিচালনা করতে না পারে, একটা সুন্দর নির্বাচন না দিতে পারে।'
চলমান সংকট তৈরি করে গেছে পতিত স্বৈরাচার সরকার, এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'এ সংকট বর্তমান সরকারের করেনি, তারা তো কাজ করে যাচ্ছে। পতিত সরকারের দোসরদের দেখছি অনেক জায়গায় বহাল তবিয়তে আছে। তারা চেষ্টা করছে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে। তাদের দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।'
অন্তর্র্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপির এই নেত্রী বলেন, 'অন্তর্র্বর্তী সরকারের যারা খুবই ভালো-সজ্জন মানুষ, তারা কাজ করছে, আমরা তাদের সহযোগিতা করছি। কিন্তু তাদের বুঝতে হবে যেগুলো আগে দরকার, সেগুলো আগে করতে হবে। সব সংস্কার একেবারে সম্ভব হয় না। জনগণের ভোটে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচিত হয়ে এলে তারাই পারে সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করতে।'
সেলিমা রহমান বলেন, 'একটি নির্বাহী আদেশে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলা উঠিয়ে নিতে পারে, কিন্তু অন্তর্র্বর্তী সরকার সেটা করছে না।'
আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক মীর আমির হোসেন আমু সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ প্রমুখ।