ভরদুপুরেই সন্ধ্যার আবহ
বৃষ্টি ও আন্দোলনে রাজধানীর সড়কে তীব্র যানজট, ভোগান্তি
প্রকাশ | ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব রাজধানীতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শুরু হয় বৃষ্টি। দুপুরের পর বৃষ্টি আরও বাড়ে। এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে নানান দাবিতে হয়েছে আন্দোলন। এরপর বিকালে অফিস ফেরত মানুষের ঘরে ফেরার তাড়া থাকায় সড়কে বেড়েছে গাড়ির চাপ। এতে রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজট দেখা দেয়। অন্যদিকে, আকাশে ঘনমেঘ জমে থাকার কারণে ভরদুপুরেই সন্ধ্যার মতো আবহ সৃষ্টি হয়। ফলে সড়কে বাস, অটোরিকশা, বাইক, লেগুনা চলাচল করতে হয় লাইট জ্বালিয়ে। বৃষ্টিতে গত কয়েকদিন ধরে চলা গুমোটভাব থেকে কিছুটা পরিত্রাণ মিলে। তবে একদিকে বৃষ্টি ও আন্দোলনের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বুধবার থেকেই দেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ বেশিরভাগ এলাকা ঢেকে যায় মেঘে। কোথাও কোথাও ঝরে বৃষ্টি। বুধবার বিকাল ও রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়ও বৃষ্টি ঝরে বলে জানা যায়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীতে সাত কলেজ অধিভুক্ত থেকে বেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা মহাখালীর আমতলীতে প্রধান সড়কে অবস্থান নেন। তাদের অবরোধের কারণে তেজগাঁও থেকে বনানী-উত্তরাগামী এবং উত্তরা থেকে তেজগাঁওগামী সড়কের দুই পাশের যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, সাত কলেজ নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি। সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হলেও শিক্ষার মানের কোনো উন্নয়ন হয়নি, উল্টো শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি বেড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা সড়ক অবরোধ করেছেন।
গুলশান ট্রাফিক বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. তারেক মাহমুদ বলেন, 'শিক্ষার্থীরা তিনটার দিকে সড়ক ছেড়ে গেছেন। এতে সড়কে যানচলাচল শুরু হয়েছে; তবে গতি কম। স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগবে। তাছাড়া এখন অফিস ছুটির সময় এবং সাপ্তাহিক কর্মদিবসের শেষ দিন, এ কারণে সড়কে গাড়ির চাপ আছে।'
অন্যদিকে মতিঝিলে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে কিছু আন্দোলনকারীদের সেখানে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। তবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। বিকালে বৃষ্টির মধ্যেও সেখানে কিছু আন্দোলনকারীকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এছাড়া শাহবাগ ও প্রেস ক্লাব এলাকায়ও বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন হয়েছে।
এ কারণে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, মতিঝিল ও মহাখালী, বনানী, উত্তরা এলাকায় যানজটে ভোগান্তিতে পড়ছেন নগরবাসী। অনেককে এক ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত যানজটে আটকে থাকতে হয়।
তেজগাঁওয়ের এক যাত্রী জানান, তিনি বাসেও উঠেছিলেন বনানী যাওয়ার জন্য। কিন্তু যানজটে আটকে গাড়ির ধীরগতির কারণে মহাখালীতে নেমে যেতে হয়েছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর বাস থেকে নেমে হেঁটে বনানী যান তিনি। একই অবস্থা গুলশান-বনানী সড়কেও দেখা গেছে।
দুপুরের পর রাজধানীর নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, বকশি বাজার ও চাঁনখারপুল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আকাশ ঘনকালো মেঘ এবং বৃষ্টির কারণে দিনের আলোর পরিবর্তে সন্ধ্যার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে সড়কে মানুষের উপস্থিতি অনেকটাই কম। অন্যান্য দিনের মতো ফুটপাতে এবং মূল সরকার আশপাশের ছোটখাটো দোকানগুলো খুলেনি। অধিকাংশ জটলা পূর্ণ স্থানই ফাঁকা। বেশিরভাগ বাস, লেগুনা মোটর সাইকেল এমনকি অটোরিকশাও হেডলাইট জ্বালিয়ে সড়কে চলাচল করছে।
অবশ্য এমন অবস্থায় বেশ বিপাকে পড়েছেন রিকশা-ভ্যান চালক ও নিম্নআয়ের মানুষেরা। জীবিকার টানে বৃষ্টিতে ভিজেই অনেককে কাজ করতে দেখা গেছে। তাছাড়া বৃষ্টির কারণে অন্যান্য দিনের তুলনায় সড়কে যাত্রীর পরিমাণ কম বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।
বকশিবাজার মোড়ে নিয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকা রিকশাচালক আব্দুল গফুর মিয়া বলেন, 'এই বৃষ্টিতে অনেক ঠান্ডা লাগছে। শীতের দিনের মতো ঠান্ডা পানি। আর বৃষ্টির কারণে সকাল থেকে যাত্রী নাই বললেই চলে। মাত্র জমা খরচটা উঠেছে। এখনও খাবারসহ অন্যান্য খরচের টাকা আসেনি।'
হাশেম মোলস্না নামের আরেক চালক বলেন, 'সকাল থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কম ছিল। কিন্তু দুপুরের পর অনেক বেড়েছে। এই বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে। আর এক ঘণ্টার মতো দেখব। তারপরে গ্যারেজে চলে যাব। আর মানুষ তো এখন বাংলা রিকশায় উঠতেই চায় না। সবাই শুধু ইঞ্জিন ওয়ালা রিকশা খুঁজে।'
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এসব এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বেড়েছে। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় 'দানা' পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭৫ কিমি দূরে, মংলা থেকে ৪৮৫ কিমি, কক্সবাজার থেকে ৪৫৫ ও চট্টগ্রাম থেকে ৫৯৫ কিমি দূরে অবস্থান করছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদ বলেন, 'ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সারা দেশেই হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হবে। কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হতে পারে। খুলনা, চট্টগ্রাম ও উপকূলীয় এলাকায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।'
তিনি বলেন, 'অতি ভারী বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে বিক্ষিপ্তভাবে কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। মাঝে মাঝে অস্থায়ীভাবে ঝড়োহাওয়া বয়ে যেতে পারে। বাতাসের গতি হতে পারে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার হতে পারে।'
তিনি জানান, আজ শুক্রবারও বৃষ্টি হবে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায়। তারা মনে করছেন, এরপর ঢাকায় বৃষ্টির প্রবণতা কমে আসবে।